লোকসভা ভোট দোরগড়ায়। এক দিন পরেই জেলা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সফরে তিনি প্রশাসনিক বার্তার পাশাপাশি, সাংগঠনিক কোনও বার্তা দেন কি না, সে বিষয়ে মুখিয়ে রয়েছে জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আগেই শুক্রবার জেলায় এসে লোকসভা নির্বাচনে করণীয় সম্পর্কে সকলকে বার্তা দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। দলের কোন্দল যাতে ভোটবাক্সে না পড়ে, তা ঠিক করতে তিনি সাফ বললেন, ‘‘যার হাতে তৃণমূলের প্রতীক থাকবে তিনি হচ্ছেন আপনার প্রার্থী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী।’’
আগামী ১০ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ রয়েছে। সেই সভার প্রস্তুতির জন্য জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে শুক্রবার তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধে সভা করেন সুব্রত। আসন্ন লোকসভা ভোটে কারা তৃণমূল প্রার্থী হবেন, সে প্রসঙ্গে সুব্রত বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চিত থাকুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কাউকে প্রার্থী করবেন, যাঁর প্রতিফলন সার্বিকভাবে জনমানসে পড়বে।’’ প্রার্থী নিয়ে যাতে কোন্দল না হয়, সে বিষয়ে রাজ্য সভাপতির কড়া বার্তা, ‘‘প্রার্থী মোটা হোক বা কালো হোক, খোঁড়া হোক বা বোবা হোক, প্রার্থী যিনিই হবেন, যাঁর হাতে তৃণমূলের প্রতীক থাকবে, তিনি হচ্ছেন আপনার প্রার্থী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী।’’
উল্লেখ্য, গত ২০১৯ সালের লোকসভার ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন যথাক্রমে দিব্যন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারী। যাঁরা সম্পর্কে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই এবং বাবা। ২০২০ সালে শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়ার পর শিশির, দিব্যেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বেড়েছে। তাই এবার তমলুক ও কাঁথি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বদল হবে ধরে নিয়েই দলের অন্দরে চর্চা চলছে। এদিকে, গত বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। এমন আবহেই সুব্রত এদিন দলের প্রার্থী নিয়ে এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন।
নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষও করেন সুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অন্য দলে চলে গিয়েছে। আমি আপনাদের বলব, যাঁরা কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, তাঁদের হারিয়েই প্রমাণ করুন।’’ একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনার প্রাপ্য টাকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন সুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে ব্রিগেডে জনগর্জন হবে।’’
এদিন সুব্রতর সভায় তৃণমূলের তমলুক ও কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সমস্ত বিধায়ক, জেলা পরিষদের পদাধিকারী, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক সভাপতি ও অঞ্চল সভাপতিরা চিলেন। ছিলেন রাজ্যের কারা মন্ত্রী অখিল গিরি, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় করও। সুব্রতর মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা (তমলুক) সভাপতি তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রার্থী নির্বাচন ওদের অভ্যন্তরীন বিষয়। তবে আমাদের দলের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়ে থাকে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)