Advertisement
E-Paper

রামের দলে রাধিকা, চমক লোকসভা ভোটের মুখে! রাজ্য বিজেপির নতুন ‘মুখ’ জমিদার বংশের দুহিতা

রাজ্য বিজেপির নতুন মুখপাত্র হয়ে আসছেন মুম্বইয়ের বাসিন্দা রাধিকা। কর্মসূত্রে বাংলার বাইরে থাকলেও রাজ্যের সঙ্গে তাঁর নাড়ির টান। সেই সঙ্গে বাংলার ঐতিহ্যশালী দুই পরিবারের প্রতিনিধি তিনি।

Know about Radhika Bhattacharyya Shah new spokesperson of West Bengal BJP

রাধিকা ভট্টাচার্য শাহ। —ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৫৯
Share
Save

রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। তিনি তো বটেই, তাঁর দলে থাকা পদ্মশিবিরের বাকি মুখপাত্রেরাও মূলত রাজনীতিক এবং সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। সেই দলে এ বার এসেছেন নতুন এক সদস্যা। রামের দলের সেই রাধিকার পরিচয়— তিনি পিতৃকুল, মাতৃকুল দু’দিক থেকেই বনেদি রক্ত বহন করছেন। এক দিকে মুর্শিদাবাদের জমিদার বংশের পরিচয়। অন্য দিকে, জাহাজ ব্যবসায়ীর বনেদিয়ানা।

পুরো নাম রাধিকা ভট্টাচার্য শাহ। বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যে যখন দিলীপ ঘোষ সভাপতি। বেশ কয়েক বছর আগে দিলীপের হাত থেকে পতাকা নিলেও সদ্য দায়িত্ব পেলেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার থেকে। বাংলার অন্যতম মুখপাত্র হলেন রাধিকা। রাজনীতি নয়, পেশায় কর্পোরেট জগতের আন্তর্জাতিক বিষয়ের পরামর্শদাতা। কাজ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জেও। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামীণ শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন নিজস্ব বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে।

তাঁকে রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়ার পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে রাধিকা বলেছেন, ‘‘আমি সারাজীবন অনেক কাজ করেছি। মানুষের সেবা করেছি। এখন আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজের সঙ্গেও যুক্ত হতে চাই। সেই কারণেই রাজনীতির আঙিনায়।’’ পারিবারিক পরিচয় নিয়ে যে তিনি গর্বিত, তা তাঁর কথায় কথায় স্পষ্ট। মূলত মুম্বইয়ের বাসিন্দা হলেও তিনি এখন বাংলার মুখপাত্র। তাই সম্ভবত রাধিকা বারে বারে বোঝাতে চাইলেন, বাংলাই তাঁর মূল। বললেন, ‘‘আমি এমন দু’টি পরিবারের সদস্য, যাদের কথা ‘বংশপরিচয়’ নামের বইয়ে উল্লেখ রয়েছে।’’ সেই সূত্রেই রাধিকা জানালেন, তাঁর পিতামহ ছিলেন জমিদার। রায়সাহেব নগেন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুরের জায়গির পেয়েছিলেন। নগেন্দ্রকুমার বহরমপুরের উল্লেখযোগ্য জমিদারও ছিলেন।

ইতিহাস বলছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৩ সালে আইন বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন নগেন্দ্রকুমার। ১৯৩৪ সালে ‘রায়সাহেব’ উপাধি পাওয়া নগেন্দ্রকুমার বহরমপুর পুরসভার কমিশনার ছিলেন ১৯৩২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি নির্দল প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন রাজ্যের বিধান পরিষদের সদস্য। শুধু পিতামহ নন, রাধিকার ঠাকুরমার বাবা কেদারনাথ চৌধুরিও ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি পেয়েছিলেন। রাধিকা বলেন, ‘‘এখন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার বামোইয়ের জমিদার ছিলেন বাবার মাতামহ। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা এবং সেশন কোর্টের বিচারপতি হয়েছিলেন ১৯০১ সালে।’’

এ তো গেল পিতৃকুল। রাধিকার মাতৃকুলও কম যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মায়ের বাবা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার বালিগঞ্জে এখনও প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে। তাঁর বাবা সন্তোষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ও বড় জাহাজ ব্যবসায়ী ছিলেন। বিজ়নেস টাইকুন বলতে পারেন। শিপিং ম্যাগনেট বলা হত। আমি দীর্ঘদিন বিদেশেও ছিলাম। কিন্তু যেখানেই থাকি না কেন, বাংলার মাটির সঙ্গে আমার যোগ গভীর।’’ বৈবাহিক সূত্রেও বড় পরিচয়ের অধিকারী রাধিকা। স্বামী প্রকাশ শাহ জাপান, ভেনেজ়ুয়েলায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মূলত গুজরাতের বাসিন্দা প্রকাশ রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধিও ছিলেন দীর্ঘসময়। দেশে-বিদেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। তবে অবসরের পরে স্ত্রী রাধিকার সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকলেও রাজনীতির সঙ্গে প্রকাশের কোনও সম্পর্ক নেই। জানালেন স্ত্রী রাধিকাই। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার পরিচয় শুধু জমিদার পরিবারের দুহিতা হিসাবে নয়। দেশপ্রেমের পাঠ পেয়েছি আমার বাবার থেকে। বাবা চারু ভট্টাচার্য ছিলেন ভারতীয় সেনার ব্রিগেডিয়ার।’’

লোকসভা নির্বাচনের আগে আগেই দায়িত্ব পেয়েছেন রাজ্য বিজেপির। কলকাতায় আসার কথা দু’এক দিনের মধ্যেই। তার পরে বিজেপির সাংবাদিক বৈঠকে বা চ্যানেলের সান্ধ্য বিতর্কে দেখা যেতে পারে ‘নবাগতা’ রাধিকাকে। এত দিন বাংলার বাইরে থেকে রাজ্য রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হবে না? রাধিকার জবাব, ‘‘বাংলার বাইরে আবার কী! যেখানেই থাকি বাংলার সঙ্গেই থাকি। এখানকার রাজনীতির কথাও রোজ জানি, শুনি। আর বিজেপি তো শুধু বাংলার কথা বলে না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন বিশ্বের নেতা। তিনি নতুন ভারত গড়ছেন। সেই কথাই তো বলব।’’একই সঙ্গে রাধিকা জানান বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি তো বটেই, তিনি গুজরাতি, মরাঠি, পাঞ্জাবি এবং উর্দুতেও অনর্গল কথা বলতে পারেন।

কিন্তু রাধিকার মতো ‘হাই প্রোফাইল’ মুখপাত্র রাজ্য বিজেপির জন্য? দলের এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘আসলে নতুন বিজেপির সব কিছুই নতুন। এখন রাজ্য কমিটি থেকে মোর্চা নেতৃত্ব— সর্বত্রই চিকিৎসক, অধ্যাপক, আইনজীবীদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই ছাপ রয়েছে দলের লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থিতালিকাতেও।’’ এই প্রসঙ্গে রাধিকা বলেন, ‘‘বিজেপি যে সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে, তা তো মানতেই হবে। আমাদের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষ।’’

রাজ্যে তৃণমূল ইদানীং বিজেপিকে ‘জমিদারের দল’ বলে উল্লেখ করে। এ বার খোদ জমিদার বংশের কন্যা দলের মুখপাত্র! এর জবাবও তো দিতে হবে? রাধিকা জানালেন, তিনি তৈরি। বললেন, ‘‘জমিদার মানেই খারাপ নাকি! সবেতেই খারাপ-ভাল রয়েছে। তা ছাড়া কে কী বললেন, তাতে যে কিছু আসে-যায় না, সেটা দেশকে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদীজি। ওঁকে কম আক্রমণ করা হয়েছে? কিন্তু দেশের উন্নয়নের লক্ষ্য থেকে কি সরানো গিয়েছে মোদীজিকে?’’

BJP Lok Sabha Election 2024 Radhika Bhattacharyya Shah Spokesperson BJP Spokesperson West Bengal BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।