মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শত্রুঘ্ন সিন্হা এবং। ছবি: ফেসবুক।
তাঁর হাত ধরেই প্রথম বারের জন্য আসানসোল লোকসভায় ‘জোড়াফুল’ ফুটেছিল উপনির্বাচনে। সেই অভিনেতা থেকে নেতা হওয়া এবং বিজেপি থেকে তৃণমূল হওয়া শত্রুঘ্ন সিন্হাকেই ফের আসানসোলে প্রার্থী করছে বাংলার শাসকদল। সূত্রের খবর, শুক্রবার দলের পশ্চিম বর্ধমানের নেতাদের সাংগঠনিক বৈঠকে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শত্রুঘ্ন বিহারের ‘ভূমিপুত্র’। তিনি নিজেকে ‘বিহারীবাবু’ বলে পরিচয় দিতেই পছন্দ করেন। বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসার পর আসানসোলে যে উপনির্বাচন হয়, সেখানে শত্রুঘ্নকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা। উপনির্বাচনে বিজেপির দু’বারের জেতা আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। তার আগে কখনও আসানসোলে তৃণমূল জেতেনি। পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলের এই লোকসভায় হিন্দিভাষীদের আধিক্য রয়েছে। ফলে বিজেপির জন্য সেই জমি হয়ে উঠেছিল উর্বর। কিন্তু উপনির্বাচনে তা ভাঙতে সক্ষম হয় তৃণমূল।
শুক্রবার থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রেড রোডে ধর্না শুরু করেছেন মমতা। মঞ্চের পিছনেই রয়েছে দু’টি অস্থায়ী অফিস। একটি সাংগঠনিক কাজের জন্য, অন্যটি প্রশাসনিক কাজের জন্য। ধর্নার মাঝে সেখানেই পশ্চিম বর্ধমানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন দিদি। সেখানেই জানিয়ে দেন, আসানসোলে প্রার্থী হচ্ছেন শত্রুঘ্ন। তিনি আড়াই দশকের বেশি সময় বিজেপি করেছেন। ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রীও। কিন্তু মোদী-শাহের বিজেপির সঙ্গে তাঁর গোড়া থেকেই সংঘাত তৈরি হয়েছিল। শেষমেশ তৃণমূলে যোগ দিয়ে সাংসদ হন শত্রুঘ্ন। শুক্রবার ধর্নামঞ্চে ছিলেন আসানসোলের সাংসদও। তিনি বলেন, ‘‘রামকে আমরাও শ্রদ্ধা করি। আমাদের বাড়ির নাম রামায়ণ। আমরা চার ভাই। আমাদের নাম রাম, লক্ষ্মণ, ভরত এবং শত্রুঘ্ন। কিন্তু রামকে নিয়ে এই রকম রাজনীতি কখনও হতে দেখিনি।’’ শত্রুঘ্ন আরও বলেন, ‘‘আমি ২৭ বছর বিজেপি করেছি। বাজপেয়ীজিকে দেখেছি। তিনি ছিলেন সদ্ভাবনার সাগর।’’ মমতাও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূল তৈরি করার পর বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে শামিল হয়েছিলেন। মমতা মন্ত্রীও ছিলেন বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায়। তিনিও প্রায়ই বলেন, বাজপেয়ীর বিজেপি আর এখনকার বিজেপির মধ্যে কোনও মিল নেই। শত্রুঘ্নও সেটাই বলেছেন।
বস্তুত, রামমন্দির উদ্বোধনের পর দুগ্ধবলয়ে অন্য আবেগ কাজ করছে বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকের মত। হিন্দিভাষী অধ্যুষিত যে কোনও এলাকাতেই রাম আবেগ রয়েছে বলে মত অনেকের। সেই আবেগকে আরও চাগিয়ে দিতে বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর সম্ভাষণ শেষ করেছেন ‘ধন্যবাদ’-এর পরিবর্তে ‘রাম রাম’ বলে। আসানসোলের মতো হিন্দিভাষী এলাকায় রাম আবেগকে মোকাবিলা করতে শত্রুঘ্নেই ভরসা রাখছেন দিদি।
২০১৪ সালে আসানসোলে বাবুলের বিরুদ্ধে দোলা সেনকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। কিন্তু জিততে পারেননি দোলা। বরং সেই সময়ে রাজনীতিতে আনকোরা বাবুল শুধু ভোটে জিতেছিলেন তা-ই নয়, প্রথম বার জিতেই কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। বাবুলের হয়ে প্রচার করতে আসানসোলে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘মুঝে বাবুল চাহিয়ে।’’ দ্বিতীবার বাবুলকে পরাস্ত করতে বাঁকুড়া থেকে জেতা সাংসদ মুনমুন সেনকে তুলে এনে আসানসোলে দাঁড় করিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তুমুল ‘মোদী হাওয়ায়’ সুচিত্রা-কন্যা কোনও দাগ কাটতে পারেননি। বাবুলের কাছে হেরে গিয়ে মুনমুন গণনাকেন্দ্রের বাইরে বলেছিলেন, ‘‘আমার খুব দুখ্ হয়েছে।’’ ঘটনাচক্রে, সেই বাবুল এখন মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য।
অন্যদিকে, তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, পশ্চিম বর্ধমানের দলীয় নেতাদের মমতা বলেছেন, নিজেদের মধ্যে কোনও ঝগড়া করা যাবে না। এক বিধায়ক ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, ‘‘দিদি বলেছেন, বিধায়কদের বুথভিত্তিক সাংগঠনিক কাজে নজর দিতে হবে। মলয়দাকে (রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক) বেশি করে এলাকায় থাকতে বলেছেন নেত্রী। বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও নরম মনোভাব যেন না দেখানো হয়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy