রাজু বিস্তা। —ফাইল চিত্র।
পর পর তিন বার দার্জিলিং আসন জিতলেও বিজেপি প্রতি বারেই প্রার্থী বদল করেছে। প্রথমে যশোবন্ত সিংহ, দ্বিতীয় বার সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং তৃতীয় বার ২০১৯ সালে রাজু বিস্তা। এ বারেও পাহাড়ে বিজেপি প্রার্থী বদল করতে পারে বলে জানা গিয়েছিল। জল্পনা তৈরি হয়েছিল প্রাক্তন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে নিয়ে। কিন্তু গত ৯ মার্চ শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার দিনেই রাজু বলেছিলেন, ‘‘এ বার পাহাড়ে প্রার্থিবদল হবে না।’’ বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন সেই কথা। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সেটাই সত্য হল। পাহাড়ে প্রার্থিবদলের পথে না হেঁটে বিজেপি দ্বিতীয় বার বিস্তাকেই প্রার্থী করল দার্জিলিং আসনে। তবে এর পিছনে অনেক নাটকও রয়েছে। পাহাড়ে অনুগামীদের দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো ছাড়াও রাজু রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এমন বার্তাও পৌঁছে দিয়েছিলেন যে, দল টিকিট না দিলে তিনি নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শ্রিংলার জয় অনিশ্চিত করে দেবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজুর হুঁশিয়ারি এবং গোর্খা ভোটের অঙ্কই শ্রিংলার পাহাড়ে চড়ার সুযোগ কেড়ে নিয়েছে।
তবে বিস্তাকে ফের প্রার্থী করার আগে কম নাটক হয়নি বিজেপিতে। একটা সময়ে এমনটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, দার্জিলিং প্রাক্তন আমলা শ্রিংলার। কিন্তু কোথায় যাবেন সেই আসনে গত বারের জয়ী সাংসদ রাজু বিস্তা? কেউ বলেছিলেন বাংলার অন্য কোনও আসনে যাবেন তিনি। আবার কেউ বলছিলেন মণিপুরের ভূমিপুত্র আসন পাবেন সেই রাজ্যেই। মণিপুরের সেনাপতি জেলায় জন্ম এবং বড় হওয়া শিল্পপতি রাজু বিজেপিতে যোগ দিয়ে সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি দলের জাতীয় মুখপাত্র হন। ২০২১ সালে তাঁকে বিজেপি যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও করা হয়। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় বার দার্জিলিঙে টিকিট পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায় শ্রিংলা পাহাড়ে চড়ায়।
তাঁর জন্ম মুম্বইয়ে হলেও শ্রিংলার পারিবারিক যোগ রয়েছে দার্জিলিঙে। সেই হিসাবে তিনি নিজেকে পাহাড়ের ‘ভূমিপুত্র’ হিসাবে পরিচয় দেন। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও তৈরি হয়েছে। তবে শ্রিংলার পরিচয় শুধু ভারতের গণ্ডিতে আটকে নেই। তিনি ভারতের রাষ্ট্রদূত থেকেছেন আমেরিকায়। দু’বছরের জন্য রাষ্ট্রদূত ছিলেন তাইল্যান্ডেও। আবার বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার পদেও ছিলেন। দেশের বিদেশ সচিব হন ২০২০ সালে। ২০২৩ সালে তাঁকেই ভারতে হওয়া জি-২০ সম্মেলনের প্রধান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এমন সফল আমলাকে দার্জিলিঙে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে চান বলে জানা গিয়েছিল। এমনটাও মনে করা হচ্ছিল, শ্রিংলা জয়ী হলে তাঁকে কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দিতে পারেন মোদী। বিজেপির অন্দরের অনেকে আবার বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অমিত শাহেরও ঘনিষ্ঠ শ্রিংলা। জানুয়ারি মাসে দিল্লিতে শাহ-শ্রিংলা বৈঠকের পরে তাঁকে ঘিরে জল্পনা আরও বেড়ে যায়। এমন অভিযোগও ওঠে যে, শ্রিংলা নিজেই সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে পাহাড়ে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এর পরে শ্রিংলা খুব তাড়াতাড়ি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেবেন এমনটাও জানা গিয়েছিল।
শাহের সঙ্গে বৈঠকের আগেই পাহাড়ে বিজেপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেতে থাকে শ্রিংলাকে। ‘দার্জিলিং ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সেই সংস্থার নামে বিবিধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে। অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনেও শ্রিংলা তাঁর স্ত্রী হেমালকে নিয়ে পাহাড়ে যজ্ঞানুষ্ঠান করেন। বিজেপির মঞ্চে বসে তাঁকে অযোধ্যার অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখতেও দেখা যায়।
বিজেপির সাংগঠনিক জেলা ভাগ লোকসভা আসন অনুযায়ী। সেই হিসাবে ৪২ জেলার বদলে রাজ্যে বিজেপির জেলার সংখ্যা ৪৩। কারণ, দার্জিলিঙকে পাহাড় এবং সমতল দুই ভাগে দেখা হয় পদ্মশিবিরে। সমতলের জেলার নাম শিলিগুড়ি। এই দুই জেলার নেতাদের মধ্যেই শ্রিংলাকে নিয়ে আপত্তি ছিল। দুই জেলার নেতা শঙ্কর ঘোষ, কল্যাণ দেওয়ান, অরুণ মণ্ডলেরা শ্রিংলার বিপক্ষে ছিলেন বলে জানা যায়। এ নিয়ে একাধিক জায়গা থেকে পদত্যাগের হুমকিও আসতে শুরু করে। বিক্ষুব্ধের দলে দার্জিলিঙের বিজেপি বিধায়ক নীরজ জিম্বাও ছিলেন বলেও জানা যায়। উল্টো দিকে, বিস্তা প্রার্থী হলে কার্শিয়াঙের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ইস্তফার হুমকি দিয়েছিলেন। কোনও ভূমিপুত্র প্রার্থী না হলে তিনি নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। এ বার তিনি কী করবেন সেই আশঙ্কাও রয়েছে পদ্মশিবিরে।
অতীতে দু’বার জিতলেও এই আসনে রাজু জিতেছিলেন অনেক বেশি ব্যবধানে। ২০১৯ সালে তাঁর জয়ের ব্যবধান ছিল চার লাখেরও বেশি ভোট। এর কারণ, হিসাবে দেখা গিয়েছিল, গোর্খা সম্প্রদায়ের হওয়াতেই রাজুকে পাহাড় নিজের করে নেয়। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অমর সিংহ রাইও গোর্খা ছিলেন। গোর্খা বনাম গোর্খা ভোটেও রাজু ব্যবধান বাড়িয়ে নেন। গত বিধানসভা নির্বাচনেও এই আসনের অন্তর্গত সাতের মধ্যে পাঁচটি আসনে জয় পায় বিজেপি। সেই অঙ্কের জোরেই শেষ পর্যন্ত পদ্মের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি রাজুর নামেই সিলমোহর দেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy