— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোথাও বাড়িতে গিয়ে এক সপ্তাহ বেরোতে বারণ করা হয়েছে, কোথাও রাস্তায় দেখা গেলেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। বহু পাড়ায় এমনও বাড়ি রয়েছে, যেখানে ফিরতে পারেননি বাসিন্দাদের অনেকেই। বাড়ি লক্ষ্য করে গালিগালাজ বা দরজার বাইরে সাউন্ড বক্স রেখে তারস্বরে গান বাজানো তো আছেই! লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে মঙ্গলবার রাত থেকেই শহরের বেশ কিছু এলাকা থেকে ভোট-পরবর্তী হিংসার এমনই সব অভিযোগ সামনে আসছে। পুলিশ যদিও দাবি করেছে, সর্বত্রই পরিস্থিতি কড়া হাতে সামলানো হচ্ছে। শহরের অন্যত্র গ্রেফতারি না হলেও ভাঙড় ডিভিশন থেকে মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ভোটের পরে।
যদিও জানা যাচ্ছে, বহু ক্ষেত্রে থানায় জেনারেল ডায়েরি হলেও মামলা রুজু করা হচ্ছে না। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, তবে কি ভোট-পরবর্তী হিংসা রুখতে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না? লালবাজারের তরফে দাবি করা হয়েছে, শহরের বেশ কিছু জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হলেও মামলা রুজু করার পক্ষপাতী নন অভিযোগকারীরাই। এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘জেনারেল ডায়েরি করাতে চাইলেও মামলা করতে চাইছেন না কেউ কেউ। বলছেন, পাড়ায় তো থাকতে হবে!’’ বেহালার চড়কতলার বাসিন্দা দেবকুমার দাসের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ফল ঘোষণার পর থেকেই তাঁর বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। থানায় গিয়ে জেনারেল ডায়েরি করলেও তার বেশি আর এগোতে চাননি তিনি। দেবকুমারের কথায়, ‘‘আমি বিজেপির সমর্থক। স্ত্রী ছাড়াও ১৩ বছরের মেয়ে রয়েছে। এর বেশি এগোতে গেলে বিপদ হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই বাড়ি থেকে বেরোতে গেলে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রে এমনই পরিস্থিতি সুকুমার সাহা নামে এক ব্যক্তির। তাঁর অভিযোগ, ওই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী পিছিয়ে রয়েছেন। চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হওয়ার পরে তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। সুকুমারের ভাইকে রাস্তায় টেনে নিয়ে এসে চড় মারা হয় বলে অভিযোগ। যাদবপুরের শ্রীকলোনি এলাকার এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, তিনি রাজ্যের একটি বিরোধী দলের সমর্থক বলে তাঁকে রাস্তায় ঘিরে ধরা হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে। তার পরে তাঁর মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয়। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘থানায় গেলে, যারা আমাকে মেরেছে, তাদেরই ডেকে এনে সামনে বসিয়ে মিটিয়ে নিতে বলা হয়।’’ যাদবপুরেরই শহিদ কলোনির বস্তিতে আবার রাতভর কিছু লোক তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তারস্বরে বক্স বাজিয়ে তাঁদের উৎসব উদ্যাপন দেখে থানায় ফোন করা হলেও সুরাহা মেলেনি।
২০২১ সালে রাজনৈতিক হিংসায় বেলেঘাটায় খুন হন এক ব্যক্তি। এ বছর ভোট-পরবর্তী হিংসার নিরিখে বেলেঘাটার ওই অঞ্চলের জন্য আলাদা নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সেখানেই আবার অভিযোগ উঠেছে, এক ব্যক্তিকে মারধর করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়ার। কিন্তু ওই ব্যক্তির পরিবার এতই আতঙ্কিত যে, প্রকাশ্যে কিছু বলতেই চাননি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের দলের সকলে একত্রিত থাকুন। প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’’ যাদবপুর কেন্দ্রে পরাজিত সিপিএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য এ নিয়ে বলেন, ‘‘শুধু আমাদের দলের সমর্থকেরা নন, প্রয়োজনে যে কারও পাশে আমরা আছি।’’
কিন্তু এখনও পর্যন্ত দলের কোনও নেতাকেই পাশে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন আক্রান্ত অনেকে। উত্তর কলকাতার জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সে অর্থে কোথাও কোনও গন্ডগোলের খবর নেই। তবে, ভোটে হেরে যাওয়ার পরে এখন কিছু লোক উস্কানিমূলক মন্তব্য করে পরিস্থিতি গরম করার চেষ্টা করছেন। সকলকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy