দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
ভোট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তবু ভোটের আবহ নেই রাজ্য রাজনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মেদিনীপুরে। বাংলার রাজনীতিতে বরাবরই মেদিনীপুর বড় ভূমিকা নিয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনেই অবাক করা ফলে দেখা গিয়েছিল বিজেপির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি জিতেছেন মেদিনীপুর লোকসভা আসন থেকে। কিন্তু এ বার শাসকদল তৃণমূল প্রচার শুরু করে দিলেও অনেকটাই হাত গুটিয়ে বসে বিজেপির কর্মীরা। জুন মালিয়ার প্রচার চললেও বিজেপির কোনও সভা-সমিতি নেই। কয়েক দিন আগেও বর্তমান সাংসদ দিলীপ টিকিট পাচ্ছেন ধরে নিয়ে জনসংযোগ এবং ছোটখাটো সভা শুরু করে দিয়েছিলেন বিজেপির কর্মীরা। কিন্তু তাঁর টিকিট পাওয়া নিয়ে দোটানা শুরু হতেই দিলীপ মেদিনীপুরের বাইরে। ফলে বিজেপি কর্মীরা তো বটেই মেদিনীপুর আসনের ভোটাররাও অধৈর্য। সেটা তাঁদের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট।
দিলীপ অনুগামী বিজেপি নেতা, কর্মীরা যে বসে রয়েছেন তাও নয়। কোথাও কোথাও দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে। তবে দলের প্রতীক থাকলেও প্রার্থীর নাম নেই। ‘আরও এক বার, মোদী সরকার’ কিংবা ‘এই বার, ৪০০ পার’ স্লোগান লেখা দেওয়ালে নেই প্রার্থীর নাম। কোথাও কোথাও আবার কায়দা করে দিলীপের নাম লেখাও হয়েছে।
বিজেপির প্রথম প্রার্থিতালিকায় ছিল না দিলীপের নাম। ২ মার্চ সেই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই নানা জল্পনা শুরু হয় দিলীপকে নিয়ে। এমনটাও শোনা যাচ্ছে দিলীপকে রাজ্যের অন্য কোনও আসনে পাঠিয়ে এই আসন থেকে ভারতী ঘোষকে প্রার্থী করা হবে। কারণ, গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন আইপিএস ভারতী যে ঘাটাল থেকে লড়েছিলেন সেখানে এ বার বিজেপি প্রার্থী করেছে খড়্গপুর সদর আসনের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে। এখন দিলীপ না ভারতী এই প্রশ্নে অধৈর্য স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
১০ মার্চ ব্রিগেডে জনগর্জন সভা থেকে মেদিনীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে অভিনেত্রী জুনের নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নারায়ণগড়ে বেলদার মাঠে জুনের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার করে গিয়েছেন। সেখান থেকে দিলীপের নাম না করে বার্তাও দিয়েছেন বর্তমান সাংসদকে। তার জবাব দেওয়ার অবস্থায় নেই বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
দিলীপ-ঘনিষ্ঠরাও অনড় যে মেদিনীপুর থেকেই তাঁদের প্রিয় নেতাকে প্রার্থী করতে হবে। তবে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও এই আসন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এমনটা যে হতে পারে তার ইঙ্গিত অবশ্য অনেক আগেই মিলেছিল। কিন্তু তাতে না দমে দিলীপ খড়গপুর, মেদিনীপুর, বেলদা, দাঁতন থেকে শুরু করে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীন সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই জনসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে গিয়েছেন। নাম ঘোষণা না হলেও তিনি যে প্রার্থী হচ্ছেন তা অনুগামীদের একাধিক বার বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন দিলীপ। দল তাঁকে প্রার্থী করবে কি না তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। তবে সেটা প্রকাশ করতে চাইছেন না নেতারা। ভারতীকে তাঁরা প্রার্থী হিসাবে মেনে নেবেন কি না তা নিয়েও সকলেই চুপ। দলের জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘‘প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। তা নিয়ে অন্য কোনও দলকে ভাবতে হবে না। মেদিনীপুরে নির্বাচন রয়েছে এখনও দু’মাস পরে। এ ক্ষেত্রে চিন্তার কিছু নেই, দল ঠিক সময় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে।’’
বিজেপির আর এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘দলের কর্মীরা উজ্জীবিত রয়েছেন। দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। দিলীপদাই প্রার্থী হবেন। আমরা সেটাই চাই। আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা হলেই দেওয়ালের ফাঁকা অংশে নাম লিখে দেওয়া হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু দেওয়াল লিখন নয়, গৃহসম্পর্ক অভিযানও চলছে। দিলীপদাও যাচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে খড়্গপুরকে মাফিয়ারাজ মুক্ত রেখেছেন দিলীপদা। তাঁকেই তাই আগামী দিনেও চাই।’’ ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকায় তিনি ঘুরেছেন, উন্নয়নের জন্য কিছু না কিছু করেছেন। আর তিনি বিজেপির সবচেয়ে সফল রাজ্য সভাপতি। তাঁর আমলেই দলের শক্তি বেড়েছে। তাঁর নাম ঘোষণা এই ভাবে দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রেখে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে। এটা দিলীপদাকে অপমানও।’’
তবে ভিন্ন মত যে নেই তা-ও নয়। জেলা নেতাদেরই কেউ কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামেই হবে ভোট। তাই প্রার্থী কে হবেন সেটা বড় কথা নয়। মেদিনীপুর লোকসভার মানুষ তৃতীয় বার মোদী সরকার আনতে তৈরি। ওই শিবিরের এক নেতা বলেন, ‘‘যিনিই প্রার্থী হোন না কেন মেদিনীপুর কেন্দ্রে বিজেপি জিতবে।’’
তবে বিজেপির এই প্রার্থী ঘোষণায় বিলম্ব নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘বিজেপি এখনও তাদের প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। তাই প্রার্থীর নাম ফাঁকা রেখেই দলের প্রচারে নেমেছে। তৃণমূলের জনপ্রিয় প্রার্থী থাকায় বিজেপি এখন তাদের কাকে প্রার্থী করবে সেটা খুঁজে পাচ্ছে না তাই চিন্তিত রয়েছে।’’ দিলীপের নাম না করে তিনি এটাও বলেন যে, ‘‘খড়্গপুরে কে কী বন্ধ করেছে তা সাধারণ মানুষ জানেন। খড়্গপুর নিয়ে ওঁকে চিন্তা করতে হবে না। আগে নিজের দলের গোষ্ঠীকোন্দল বন্ধ করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy