Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

এই রায় মানি না, ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে: কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে মমতা

ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা তিনি মানেন না বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে। তা এ ভাবে বাতিল করে দেওয়া যায় না।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ১৬:৩৭
Share: Save:

ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা তিনি মানেন না বলে জানিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে। তা এ ভাবে বাতিল করে দেওয়া যায় না। এই রায়কে ‘বিজেপির রায়’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।

কলকাতা হাই কোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে পাওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বুধবার বাতিল করে দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফলে আদালতের নির্দেশ মূলত কার্যকর হতে চলেছে তৃণমূল আমলে ইস্যু করা ওবিসি শংসাপত্রের উপরেই।

বুধবার দমদম লোকসভার অন্তর্গত পানিহাটির জনসভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘ভদ্রলোককে আমি জাজ হিসাবে সম্মান করি। কিন্তু উনি অনেক কিছুতে বিখ্যাত। ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন, সংরক্ষণ কেড়ে নেবেন। সেটা কখনও হয়? তা হলে তো সংবিধান ভেঙে দিতে হয়। এটা হতে পারে না। এই রায় আমি মানি না। ২৬ হাজার চাকরি ওরা বাতিল করেছিল, তখনও আমি সেই রায় মানিনি। বুধবার যে রায় দিয়েছে, তা বিজেপির রায়। আমরা মানি না। ওবিসি সংরক্ষণ চলছে, চলবে।’’ উল্লেখ্য, হাই কোর্টের কোনও বিচারপতির নাম নেননি মমতা। তবে বুধবার এই রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ।

মমতার বক্তব্য, এই রায়ের মাধ্যমে আসলে মুসলিমদের সংরক্ষণ বাতিল করতে চাইছে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘‘দেশে কখনও ভাগাভাগি হয় না। এটা বাংলার কলঙ্কিত অধ্যায়। হিন্দুকে বাদ দিলাম, মুসলিমকে রাখলাম— এটা হতে পারে? স্পর্ধা তো কম নয়! বিজেপির কোনও পলিসি নিয়ে কোনও কথা বলার সাহস আছে?’’

বুধবার আদালত জানিয়েছে, ২০১০ সালের পরে যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে, তা যথাযথ আইন মেনে বানানো হয়নি। তাই ওই শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বা চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কোনও প্রভাব ফেলবে না। বাকিরা আর চাকরিপ্রক্রিয়ায় ওই শংসাপত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। মমতা জানান, ওবিসি সংরক্ষণ তাঁর সরকার আইন মেনেই করেছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সমীক্ষা করেছিলাম। উপেন বিশ্বাস চেয়ারম্যান ছিলেন। কোর্টে তখনও কেস হয়েছিল। বিজেপি হেরে গিয়েছিল। এ বারও তাই হবে।’’

এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে উচ্চতর আদালতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘আমাকে ওরা চেনে না। আমি মাথা নত করার লোক নই। মুসলিমেরা কেন তফসিলিদের চাকরিতে ভাগ বসাবে? ওরা এত খারাপ নয়। মোদীবাবু আগুন নিয়ে খেলছেন। তফসিলিদের সংরক্ষণ আপনি বাতিল করতে চাইছেন। এটা হতে পারে না।’’

মমতা উচ্চ আদালতের বিচারপতির নাম না করেও সরাসরি তাঁকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করার জন্য এই রায়। উনি যা বলছেন, কেউ কেউ তা-ই করছেন। কিন্তু গায়ের জোরে কেউ যদি মনে করেন, রাজ্য সরকারের অধিকার কেড়ে নেবেন, তা হবে না। যত দূর যেতে হবে, যাব। এই রায় মানছি না, মানব না। আইনে বিভেদ হয় না।’’

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিদের উদ্দেশে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘কেউ অবসর নিয়ে বলছেন, আমি আরএসএসের লোক। কেউ আবার বলছেন, আমি বিজেপির লোক। এঁদের দিয়ে মানুষের বিচার হবে কোত্থেকে?’’ তবে এর সঙ্গেই মমতার সংযোজন, ‘‘কোর্টের সকলে খারাপ নন। কিন্তু যিনি এই রায় দিয়েছেন, তাঁর রায় আমি মানি না। সংরক্ষণ চলবে। দরকারে আমি উচ্চতর আদালতে যাব।’’

বুধবার শালবনির সভা থেকে হাই কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ ওবিসি সংরক্ষণ বাতিল করে দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগেই এই রূপ, আসার পরে কী হবে, তা হলে ভাবুন! কুড়মি, ওরাওঁ, সাঁওতাল, সবাইকে সাবধান করছি, বিজেপিকে ভোট দিলে খারাপ সময় আসবে। বিজেপি ওবিসিদের সংরক্ষণ কেড়ে নিতে চাইছে।’’

উল্লেখ্য, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। শীর্ষ আদালতে সেই রায়ে আপাতত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিলের রায়ে রাজ্য কোন পথে হাঁটে, সেটাই এখন দেখার।

(আনন্দবাজার অনলাইন দেশের সমস্ত বিচারালয়, বিচারপতি এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই খবরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা তাঁদের নিজস্ব অভিমত। তার দায় আনন্দবাজার অনলাইনের নয়)


সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy