—প্রতীকী চিত্র।
গত বিধানসভা ও পঞ্চায়েতে উপুড়হস্ত ভোট মিলেছিল। তবু গোপীবল্লভপুর বিধানসভা নিয়ে খুব একটা নিশ্চিন্ত নয় তৃণমূল। এ বার এখানে মূল ‘ফ্যাক্টর’ কুড়মি ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনে গোপীবল্লভপুরে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বার উন্নয়ন ও পরিষেবা প্রাপ্তির দাবি তৃণমূল প্রকাশ্যে যতই করুক, তলে তলে তাদের ভাবাচ্ছে বিজেপি প্রার্থীর প্রচার। গেরুয়া শিবিরেরও দাবি, পঞ্চায়েত ও বিধানসভায় মানুষ যা দিয়েছেন দিয়েছেন, কিন্তু দিল্লির সরকার গড়তে আমাদের প্রার্থীকেই জেতাবেন। বিজেপির প্রচারে থাকছে তৃণমূলের দুর্নীতির কথা। তবে শাসকদলের বেশি চিন্তা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের চারটি অঞ্চল এই বিধানসভার মধ্যে পড়ে। গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কালীপদ শূর ও তাঁর অনুগামীদের দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আবার ভোটের আগে কালীপদকে দলে ফিরিয়ে জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। আবার তপসিয়ার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি নিরঞ্জন দাস ওরফে লম্বু গত বার পঞ্চায়েতে দলের টিকিট না পেয়ে নির্দলে জিতেছিলেন। লম্বুকেও গত জানুয়ারিতে শীর্ষস্তরের নেতার হস্তক্ষেপে দলের ফেরান জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু। তবে লম্বু ও কালীপদ এখন দু’জনই নিশ্চুপ।
জানা যাচ্ছে, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি টিঙ্কু পাল প্রচারে চাইছেন না কালীপদ ও লম্বুকে। দলে থেকেও তাঁদের ভোট প্রচারের কাজে না থাকাটা এখন তৃণমূলের কাছে অস্বস্তির কারণ। টিঙ্কুর যুক্তি, কালীপদ ও লম্বুকে জেলা থেকে যোগদান করা হয়েছে। ব্লকের সঙ্গে আলোচনা করেকিছু হয়নি। দলের অন্দরে এই ঠান্ডা লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ক্ষোভ। ঝাড়গ্রাম ব্লকে কংসাবতীর উপর আমদই ঘাটে সেতুর জন্য শাসক মহলে বার বার আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সুরাহা হয়নি। আবার সাঁকরাইল ব্লকের রোহিণীতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য অনুমোদন দিলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে গড়িমসি চলছে।
সব ছাপিয়ে গোপীবল্লভপুর বিধানসভার সবচেয়ে বড় ভোট ফ্যাক্টর কুড়মি ভোট। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুড়মি ভোট রয়েছে এই বিধানসভাতেই— প্রায় ২৩ শতাংশের বেশি। গোপীবল্লভপুর-২, ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ও সাঁকরাইল ব্লকে কুড়মিদের ভাল প্রভাব রয়েছে। গত নির্বাচনে গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের খাড়বান্ধি, ঝড়গ্রাম ব্লকের লোধাশুলি, দুধকুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েত কুড়মিরা দখল করে। শালবনি পঞ্চায়েতে বিজেপি- কুড়মি সমঝোতা করে বোর্ড গঠন করেছিল। আবার সাঁকরাইল ব্লকে ক্ষুদমরাই গ্রাম পঞ্চায়েতও কুড়মিদের দখলে। এখানকার কুড়মি এলাকায় তৃণমূল সে ভাবে প্রচারও করতে পারেনি। এলাকার বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকেও নিজের বিধানসভায় প্রচারে দেখা যায়নি। শুধুমাত্র মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তিনি মিছিলে ছিলেন। মিছিলে প্রার্থীর সামনে থাকা নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মু ধমকও দিয়েছিলেন তাঁকে। এ সব নিয়ে দলের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। খগেনন্দ্রনাথ ফোন ধরেননি।
সমস্যা মেটাতে একদা এই বিধানসভার প্রাক্তন কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতোকে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অজিত এলাকায় আসছেন। কিন্তু কুড়মি এলাকায় সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। গত পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মিরা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। লোকসভাতেও নির্দলে কুড়মিদের দু’জন প্রার্থী রয়েছেন। একজন কুড়মি নেগাচারি সামজের সমর্থিত নির্দল প্রার্থী বরুণ মাহাতো। অন্যজন আদিবাসী কুড়মি সমাজ সমর্থিত সূর্য সিং বেসরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঝাড়গ্রামে এসে অভিযোগ করেছেন, কুড়মি ভোট কাটতেই তৃণমূল ‘সেটিং করে’ দু’জন কুড়মি প্রার্থী দিয়েছে। কুড়মি ক্ষোভ উস্কেও দিয়েছেন তিনি। রাজ্য যে কুড়মিদের দাবি পূরণে কিছু করছে না, সেটাই বোঝাতে চাইছেন শুভেন্দুরা। সেই অঙ্কে কুড়মি ভোট কাছে টানতেও চাইছেন। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের তরফে এই বিধানসভার পর্যবেক্ষক অজিত মাহাতোর যদিও দাবি, ‘‘গত পঞ্চায়েতে কুড়মিরা রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করলেও গত একবছরে কুড়মি মানুষজন ভুল বুঝতে পেরেছেন। কুড়মিদের সম্মান দিয়েছেন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী। কুড়মিদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যা উন্নয়ন করেছেন তা কেউ করেননি। কুড়মিদের ভোট তৃণমূলের পক্ষে থাকবে।’’ তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার আবার যুক্তি, ‘‘কুড়মি নির্দল প্রার্থীরা যত ভোট পাবেন, তাতে তৃণমূলের লাভ হবে।’’ জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো আবার বলছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কুড়মি ভোট তৃণমূলের প্রয়োজন নেই। জঙ্গলমহলের মানুষজন সঠিক জায়গাতেই ভোট দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy