গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছেন শান্তনু। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
২০১৯ সালের পরে এ বারও বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে ভরাডুবি হল তৃণমূলের। পর পর দু’বার এই কেন্দ্রে জয়ী হলেন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর।
রাজ্যে তৃণমূলের জয়জয়কারের মধ্যে বনগাঁ কেন্দ্রে দলের এই ফলে হতাশ কর্মী-সমর্থকেরা। দলের অভ্যন্তরে গোষ্ঠীকোন্দলের চোরাস্রোতই কি শেষ পর্যন্ত এই ফলের কারণ, চলছে সেই চর্চা। রাজ্যের অন্যত্র দল ভাল ফল করলেও বনগাঁয় কর্মীদের মনে আনন্দ নেই। আবির খেলা, মিষ্টিমুখ করা, বিজয় মিছিল— কিছুই চোখে পড়েনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায়।
বনগাঁ কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। তিনি ৭৩ হাজার ৬৯৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর পেয়েছেন ৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৫০৫ ভোট। বিশ্বজিৎ পেয়েছেন ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮১২ ভোট।
বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আর যাঁরা দেননি— সকলকে ধন্যবাদ। মানুষের রায় মাথা পেতে নিলাম। পরাজিত হলেও গত বারের তুলনায় পরাজয়ের ব্যবধান অনেকটাই কমিয়েছি।’’ জীবনে প্রথম বার ভোটে হারা প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত অপরাজিত হয়ে ফাইনালে উঠেছিল। ফাইনালে পরাজিত হয়। তেমনই জীবনে হার-জিত থাকবেই। সেটা মেনে নিয়ে পথ চলতে হয়।’’ গোষ্ঠীকোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবে এই হারের কারণ খুঁজতে আমরা ময়না তদন্ত করব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে রাজ্যে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছেন, তাতে উৎসাহিত হয়ে আমরা বনগাঁতেও ঘুরে দাঁড়াব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, ‘‘আমি বিজেপির কাছে হারিনি। কাদের কাছে হেরেছি, তা আমি জানি।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী ভোট গণনা উপলক্ষে বনগাঁ শহরে ছিলেন। ফল ঘোষণার পরে বলেন, ‘‘হারের কারণ খুঁজে বের করা হবে। সেই মতো আমরা খামতি মেরামত করে নেব।’’
দলের অনেকে জানাচ্ছেন, বিজেপিতে গিয়ে বিশ্বজিতের তৃণমূলে ফেরা দলে গুরুত্ব পাওয়া, লোকসভায় প্রার্থী হওয়া তৃণমূলের কিছু নেতা ভাল চোখে দেখেননি। তারই ‘মূল্য’ চোকাতে হল লোকসভা ভোটে!
এ বার বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল বনগাঁ কেন্দ্রে। কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ বিশ্বাস। তিনি পেয়েছেন ৬৫ হাজার ১৭৬ ভোট।
তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, বামেদের একাংশের ভোট বিজেপির দিকে গিয়েছে। এটাও তৃণমূলের হারের কারণ। তা ছাড়া, ভোটের আগে সিএএ-এর (নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন) বিধি কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি এবং আবেদনের ভিত্তিতে হাতেগোনা কয়েক জনকে নাগরিকত্ব দিয়েছে কেন্দ্র। কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়েছিল মতুয়াদের মধ্যে।
যদিও তা মানতে চাননি তৃণমূলের অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, গত পঞ্চায়েত এবং পুরসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগের প্রভাবও এই ভোটে পড়েছে। তারও প্রভাব পড়ে থাকতে পারে ফলাফলে।
ভোটে জয়ী হয়ে শান্তনু ঠাকুর বলেন, ‘‘জয়ের বিষয়ে আমি শুধু আশাবাদীই ছিলাম না। বলেছিলাম, জিতবই। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বলে প্রধানমন্ত্রীর সভা বনগাঁয় করিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy