গণনা কেন্দ্রে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ ছেড়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জয়ী হলেও তাঁর জয়ের পথ যতটা মসৃণ হবে আশা করা হয়েছিল, তা হল না। শেষ পর্যন্ত ৭৭ হাজার ৭৩৩টি ভোটের ব্যবধানে তিনি জয় পেয়েছেন। ব্যবধান ১ লক্ষের ধারেকাছে পৌঁছোয়নি। তা নিয়ে যথেষ্ট চাপে পড়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হাইস্কুলে তমলুক লোকসভার ভোটগণনা শুরুর পরে প্রথম দিকে অভিজিৎ খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও এক সময় তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য কিছুটা এগিয়ে যান। যদিও পরে অভিজিৎ ও দেবাংশুর মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বড় ব্যবধানে জয়ের ব্যাপারে অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী অভিজিতের লক্ষ্য সেই অর্থে পূর্ণ হয়নি। তৃণমূলকে ‘ঢাকি-সহ বিসর্জন’-এর কথা বলেছিলেন তিনি। কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি সম্মানরক্ষা করলেও পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ প্রায় গোটা রাজ্যে বিজেপি পর্যুদস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিজিতের প্রতিক্রিয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেও এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সংবাদমাধ্যমে চোখা মন্তব্যের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই প্রসিদ্ধ তমলুকের বিজেপি প্রার্থী এ দিন সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়েই ছিলেন।
সোমবার গণনা কেন্দ্রে প্রথম রাউন্ড গণনার সময়ে অভিজিৎ সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন তাঁর এগিয়ে থাকার ব্যবধান খুবই অল্প ছিল। এক সময়ে অভিজিৎ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুরের দিকে গণনা কেন্দ্রে যান তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। তখনও বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন এবং রাজ্য জুড়ে তৃণমূল ঝড়ের ইঙ্গিত প্রবল হয়েছিল। দেবাংশু তখন দাবি করেছিলেন, ‘‘অহঙ্কারী প্রধানমন্ত্রী এবং এই জেলার আরেক অহঙ্কারী নেতা (শুভেন্দু অধিকারী) যিনি বলেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ২ লক্ষ ভোটে জেতাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছেন।’’
অভিজিৎ বহিরাগত প্রার্থী হয়ে এই কেন্দ্রে জিতলেন। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এর আগে (১৯৯৬ সালে) কংগ্রেসের বহিরাগত প্রার্থী জয়ন্ত ভট্টাচার্য জয়ী হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে বহিরাগত তৃণমূল প্রার্থী নির্বেদ রায় এখান থেকে জয় পেয়েছিলেন।
স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতি কাণ্ডে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশ ঘিরে রাজ্য শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বরা তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অভিজিতের মনোনয়ন জমার দিনে তমলুকে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মঞ্চের কাছে গোলমাল বাঁধে। অভিজিৎ-সহ দলের বিজেপির কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ছাড়াও প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমলোচনায় অভিজিতের করা মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে তৃণমূল। নির্বাচন কমিশন তাঁর ভোট প্রচারের উপর এক দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের জেলায় বহিরাগত অভিজিৎকে জেতানোর ভার কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সিদ্ধার্থ নস্করকে প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধান হারিয়েছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তমলুক লোকসভা এলাকার মধ্যে থাকা সাত বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে (নন্দীগ্রাম, হলদিয়া ও ময়না) জিতেছিল বিজেপি। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে অভিজিৎ জেতার ফলে গত ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জেতা একটি আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy