গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মালদহ দক্ষিণ আসনকে এখনও ‘নবজাতক’ বলা যেতে পারে। কারণ, এটি সেখানে চতুর্থ লোকসভা নির্বাচন। সাবেক মালদহ আসন ভেঙেই মালদহ উত্তর এবং মালদহ দক্ষিণের জন্ম। তবে একটা ফারাক রয়েছে। মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেসের আধিপত্য টিকে ছিল ২০১৯ সালের ভোট পর্যন্তও। মালদহ দক্ষিণে কংগ্রেসের টিকিটে জয় যতটা সহজ ছিল, ততটা যে তৃণমূলের টিকিটে নয়, সেটা পর পর দু’বারের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম নুর ২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে বুঝে গিয়েছেন। মৌসম হারেন। আসন জিতে নেয় বিজেপি। কারণ, তখনও সেখানে গনি-আবেগ কাজ করেছিল।
তাই এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের মালদহ দক্ষিণে সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি কোনও দল। গনি খান চৌধুরীর মৃত্যুর পরে উপনির্বাচনে মালদহ আসনে জিতেছিলেন তাঁর ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। এর পরে ২০০৯, ২০১৪ সালে তিনি লক্ষাধিক ভোটে জিতেছেন এই আসন থেকে। কিন্তু ২০১৯ সালে ঠোক্কর খেয়েছেন। জয় পেলেও তাঁর ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছিল ৮,২২২ ভোট। শতাংশের হিসাবে ফারাক কংগ্রেস ৩৪.৭৩ এবং বিজেপি ৩৪.০৯।
বিজেপি এই আসনের প্রথম বারের ভোট ২০০৯ থেকেই উপস্থিতি বোঝাতে পেরেছে। সে বার তৃতীয় স্থানে থাকা পদ্ম দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে ২০১৪ সালেই। এক লাফে ৪৩,৯৯৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে তাদের ভোট হয় ২,১৬,১৮১। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটা হয়ে যায় ৪,৩৬,০৮৪। উত্তরবঙ্গে বিপুল মোদী-হাওয়া সত্ত্বেও একেবারে দক্ষিণবঙ্গ-ছোঁওয়া আসনটিতে থমকে যেতে হয় বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীকে। এর পরে অবশ্য শ্রীরূপা ইংরেজবাজার আসন থেকে ২০২১ সালে বিধায়ক হন। এ বারও তিনিই প্রার্থী।
গনি সাম্রাজ্যের এই আসনে তৃণমূল প্রথমে নজরে আসে ২০১৪ সালে। ১৭.৬৩ শতাংশ ভোট পেয়ে চতুর্থ স্থানে পৌঁছয় তারা। পরের বারে তারা তৃতীয় স্থানে ছিল। ২০১৯ সালে ভোটপ্রাপ্তির হারও বাড়ে তৃণমূলের। ২৭.৪৭ শতাংশ ভোট পান তৃণমূল প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন। এ বার তৃণমূল প্রার্থী বদলেছে। একেবারে নতুন মুখ শাহনওয়াজ আলি রায়হান। প্রাথমিক লেখাপড়া কলকাতায়। তার পরে দিল্লিতে উচ্চশিক্ষার পরে ২০১৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কলেজে গবেষণার কাজে যোগ দেন ইতিহাসের ছাত্র বছর বেয়াল্লিশের রায়হান। পরে কলকাতায় ফিরে সাংবাদিকতা করলেও রায়হান পরিচিত হয়ে ওঠেন লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়ে। সেটা ২০২০ সাল। বরাবর বিজেপি বিরোধী মনোভাবের রায়হান একটা সময়ে জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের ছাত্র শাখার সর্বভারতীয় সম্পাদকও ছিলেন। অবশেষে মালদহ দক্ষিণে প্রার্থী হয়ে তৃণমূলে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে অভূতপূর্ব ফল করেছিল তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের ফলাফল দিয়ে লোকসভা ভোটের অঙ্ক কষা যায় না। সাম্প্রতিক ইতিহাস তেমনই বলছে। তবে গত বিধানসভা ভোটের ফলাফল থেকেই তৃণমূল ‘অক্সিজেন’ পাওয়ার চেষ্টা করছে। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে এই আসনে মেথাবাড়ি, সুজাপুর, ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ বিধানসভায় এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। বিজেপি এগিয়ে ছিল মানিকচক, ইংরেজবাজার, বৈষ্ণবনগর আসনে। তৃণমূলের কোনও জায়গাই ছিল না। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলা মেশানো এই লোকসভা আসনের ছ’টি বিধানসভা আসনেই তৃণমূল জিতেছে। বিজেপি শুধু ইংরেজবাজারে। এই লোকসভা আসনে কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় মূলধন সুজাপুর। গনি পরিবারের বিধানসভা এলাকা সুজাপুরে ডালু পেয়েছিলেন ৯১,১৬৮ ভোট, বিজেপি ১৮,৮৪৮ এবং তৃণমূল ৬২,৫৫২ ভোট। বামফ্রন্ট সে বার প্রার্থী দেয়নি এই আসনে।
ঠিক দু’বছর পরে ঐতিহ্যগত ভাবে ‘কংগ্রেসি’ সুজাপুর আসনে তৃণমূলের মহম্মদ আবদুল গনি জেতেন ১,৩০,১৬৩ ভোটে। দ্বিতীয় হন কংগ্রেসের লোকসভার প্রার্থী গনি খান পরিবারের ইশা খান চৌধুরী। ডালুর পুত্র ইশা পেয়েছিলেন ২২,২৮২ ভোট। এ বার তিনিই লোকসভার প্রার্থী। বাকি বিধানসভা আসনগুলির কয়েকটিতে বড় ব্যবধানে জয় পায় তৃণমূল। মুর্শিদাবাদের শমসেররগঞ্জে কংগ্রেস ছাড়া বাকি সর্বত্রই দ্বিতীয় হয় বিজেপি। ইংরেজবাজারে তৃণমূলকে দ্বিতীয় করেই জয় পায় বিজেপি। এই হিসাব ‘গ্রহণযোগ্য’ ধরলে এ বার কংগ্রেস নয়, মালদহ দক্ষিণের লড়াই বিজেপি বনাম তৃণমূল হয়ে যাওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy