গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে সকালেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন কুণাল ঘোষ। লিখেছিলেন, ‘‘আজ ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমাটা আর এক বার দেখব।’’ তার কয়েক ঘণ্টা পরেই সেই ছবির একটি অর্থবহ গানও গাইতে শোনা গেল কুণালকে। তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক গাইলেন ‘‘কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়... আমি যেই দিকেতে চাই, দেখে অবাক বনে যাই, আমি অর্থ কোনও খুঁজে নাহি পাই রে ...।’’
‘অর্থ’ যে খুঁজে পাচ্ছেন না, তা বুধবার বিকেলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে আচমকা অপসারিত হওয়ার পরই বলেছিলেন কুণাল। বৃহস্পতিবার সকালে অবশ্য গান গেয়ে বোঝালেন মনের কথা। শুধু তা-ই নয়, ওই গান এবং সিনেমার বক্তব্যের সঙ্গে প্রচ্ছন্ন ভাবে মেলালেন তৃণমূলে শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্বে থাকা নেতৃত্বকেও। কুণাল বললেন, ‘‘যারা মন যুগিয়ে চলবে, যাদের নিজস্বতা থাকবে না, তারাই শৃঙ্খলাপরায়ণ। তবে একে শৃঙ্খলা বলব না কি শৃঙ্খল, তা বুঝতে পারছি না। রাজনৈতিক কর্মীর উপর দমন-পীড়ন হতে হতে ধীরে ধীরে শৃঙ্খলাটা শৃঙ্খল হয়ে যায়। আমার মনে হয় ওঁরা চান, কয়েকটা যন্ত্র থাকবে, যাঁরা শুধু শৃঙ্খলাপরায়ণ নয়, শৃঙ্খল পরায়ণ।’’
সত্যজিতের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল, রাজার কথায় ‘হ্যাঁ’ তে ‘হ্যাঁ’ মেলানো, প্রতি কথায় ঘাড় নেড়ে ‘ঠিক ঠিক’ বলা মন্ত্রী-সান্ত্রীরাই হতেন রাজার ‘প্রিয়পাত্র’। বাকিদের আনুগত্যের পথে আনতে মগজধোলাই করা হত। কুণাল মুখে সে কথা না বললেও প্রচ্ছন্ন ভাবে সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
বুধবার বিকেলেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয় কুণালকে। সেই ঘটনার পর একটি সাংবাদিক বৈঠক এবং সাক্ষাৎকারে এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন কুণাল। বৃহস্পতিবার সেই সমালোচনা আরও এক ধাপ চড়িয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা তাঁর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলীয় পদ থেকে সরালেন, তাঁরা দলের ঘাটালের প্রার্থী দেবের দলবিরোধী বক্তব্য শোনার পর কী করছিলেন?’’ কুণালের প্রশ্ন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিঠুন চক্রবর্তীকে ‘গদ্দার’ বলেছিলেন। দেব বলেছিলেন ‘গদ্দার’ শব্দে তাঁর আপত্তি রয়েছে। তা হলে কি এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধাচরণকে দলে উৎসাহিত করা হয়? না কি ধার করে নিয়ে আসা তারকাদের বিরুদ্ধাচরণকেও মকুব করা হবে?’’ কুণাল বলেছেন, তিনি নিশ্চিত, তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি ছাড়া হতে পারে না।’’
বুধবারই কুণাল তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নাম করে এবং না করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার অবশ্য তাঁর আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন শুধুই উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী তথা লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সুদীপের সমালোচনা করতে গিয়ে রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘পারফরম্যান্সের’ প্রশংসাও করেন কুণাল।
কুণাল বলছিলেন, ‘‘বিরোধী নেতা হিসাবে শুভেন্দু ভাল পারফর্ম করছেন। তিনি গোটা রাজ্য ঘুরে ঘুরে জনসভা করে চলেছেন। তাঁর যা দায়িত্ব পালন করছেন। সুদীপদার শেখা উচিত শুভেন্দুকে দেখে। কেন তিনি এক জন অভিজ্ঞ সাংসদ, দলের লোকসভার দলনেতা হয়েও এই ভোটে শুধু নিজেকে উত্তর কলকাতায় সীমাবদ্ধ রেখেছেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা গোটা রাজ্য ঘুরে সভা করে বেড়াচ্ছেন। অথচ সুদীপদা একটা সভা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে আক্রমণ করছেন না কেন?’’
বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন কুণাল। পরে তাঁর অপসারণের চিঠিতে সই থাকা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনকে ‘পোস্টমাস্টার’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy