Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

‘যেন রামচন্দ্রের সঙ্গে কথা বলছিলাম’! মোদী-ফোনে অভিভূত রেখা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনকে

নরেন্দ্র মোদীর ‘কথাতেই’ বসিরহাট কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে তাঁর প্রার্থী হওয়া! সন্দেশখালির আন্দোলন থেকে বঙ্গ-রাজনীতির আলোকবৃত্তে উঠে আসা রেখা পাত্রের সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রণয় ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৯:০১
Share: Save:

সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ আছড়ে পড়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যমের পর্দায় বার বার ভেসে উঠেছিল তাঁর মুখ। নারী নির্যাতনের একের পর এক অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অচিরেই ‘প্রতিবাদী মুখ’ হিসাবে পরিচিতি লাভ। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। বারাসতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ। পরে নাকি মোদীর ‘কথাতেই’ দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে বসিরহাট কেন্দ্রে বিজেপির টিকিটে তাঁর প্রার্থী হওয়া! সন্দেশখালির আন্দোলন থেকে বঙ্গ-রাজনীতির আলোকবৃত্তে উঠে আসা রেখা পাত্রের সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: কখনও ভেবেছিলেন রাজনীতি করবেন?

রেখা: আমি তো এখনও রাজনীতি করছি না। গ্রামের যাঁরা নির্যাতিতা মহিলা, যে মানুষেরা অত্যাচারিত, আমি সেই মানুষদের হয়ে লড়াই করছি।

প্রশ্ন: বিজেপিতেই কেন?

রেখা: সন্দেশখালির গোটা ঘটনা আপনারা দেখেছেন। আপনারাই বলুন না, বিজেপি করা ছাড়া অন্য কিছু করার ছিল কি? বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেতা থেকে রাজ্যের নেতারা যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের সাহস জুগিয়েছেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন, অন্য কোনও রাজনৈতিক দল সেই ভূমিকা নেয়নি। আশা করি, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।

প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলে কেমন লেগেছিল?

রেখা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির ফোন আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। মনে হয়েছে, সাক্ষাৎ রামচন্দ্রের সঙ্গে কথা বললাম।

প্রশ্ন: কে প্রথম আপনাকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন?

রেখা: আমাদের দাবিতে যখন আন্দোলন শুরু করেছিলাম, তখন বিজেপি নেতারা এসে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বিশেষত মাননীয় শুভেন্দু অধিকারী। তার পর দলগত ভাবেও প্রস্তাব আসে। তবে প্রথম প্রস্তাব দিয়েছেন শুভেন্দুদাই।

প্রশ্ন: লোকসভা ভোট সাতটা বিধানসভা ভোটপর্বে অনেক খরচ টাকাপয়সা নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

রেখা: আমি প্রার্থী নই তো। প্রার্থী এখানকার প্রত্যেকটি নির্যাতিত মানুষ। আমি শুধু তাঁদের মুখ মাত্র। গ্রামের সাধারণ বধূকে একটি সর্বভারতীয় দল লোকসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভোটে প্রার্থী করেছে। কী ভাবে প্রচার করতে হয়, কিছুই জানি না। তাই দল যেটা ভাল বুঝবে, সেটাই করবে। আর আমি থাকি খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে। আমি টাকা পাব কোথা থেকে?

প্রশ্ন: আপনার সংসার চলে কী ভাবে?

রেখা: টানাটানির সংসার। তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকি। আমাদের মুখে খাবার তুলে দিতে স্বামী ভিন্‌রাজ্যে কাজ করেন। যদি সব কিছু লুট না হয়ে যেত, হয়তো এখানেই কাজ জুটে যেত।

প্রশ্ন: আপনি তো একজন সাধারণ গৃহবধূ, কী ভাবে এই আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠলেন?

রেখা: বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। পয়সার অভাবে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। অল্প বয়সেই সন্দীপের (রেখার স্বামী) সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকেই এই পাড়া, এই গ্রাম আমার আপন হয়ে ওঠে। চোখের সামনে অন্যায় দেখেছি, ভিতরে ভিতরে গুমরে মরেছি, কিন্তু সাহস করে প্রতিবাদ করতে পারিনি। যখন শাহজাহান শেখের নাম তদন্তের আওতায় এল, তখন সবাই মিলে ঠিক করলাম, আর নয় অন্যায়। সবাই মিলে আমাকেই মুখ করে দিল। আসলে আমি কেউ নই, আমরা সকলেই এই আন্দোলনের মুখ।

প্রশ্ন: ঘরের কাজ কে সামলাচ্ছে এখন?

রেখা: আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সুষমার বয়স ১২ বছর। মেজো মেয়ে করবীর বয়স ৭। সাধ করে ছোট মেয়ের নাম রেখেছি কনক। ও সবে দু’বছর পেরিয়েছে। বড় দুটোকে নিয়ে কোন সমস্যা না হলেও, ছোটটাকে সামলাতে মাঝেমাঝে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ওইটুকু মেয়ে, ও কি এত সব বোঝে? আর ঘরের কাজ, রান্নাবান্না সব একা হাতে সামলাচ্ছেন আমার শাশুড়িমা। উনি না থাকলে হয়তো এই লড়াইটা আমি লড়তে পারতাম না।

প্রশ্ন: সংসার থেকে এক ঝটকায় প্রচারের কেন্দ্রে। হঠাৎ করে প্রচারের আলোয় অগোছালো লাগছে না?

রেখা: প্রথম দিকে একটু ইতস্তত বোধ হচ্ছিল। তার পর সবাই মিলে যে ভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে মনে হয়েছে, এই লড়াইটা আমার একার নয়। এই লড়াই প্রত্যেকটি নির্যাতিত মানুষের। এই লড়াই প্রত্যেকটি নির্যাতিতা মহিলার। সকলের প্রতিনিধি হিসেবে লড়ছি, তাই কোনও অস্বস্তি নেই।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগত ভাবে আপনিও কি নির্যাতিতা?

রেখা: এই প্রশ্নের উত্তর আমি বহু বার দিয়েছি। নির্যাতন না হলে নিশ্চয়ই অভিযোগ করতাম না। তবে কী ধরনের নির্যাতন, তা নিয়ে কথা বলতে পারব না। কারণ কেস চলছে।

প্রশ্ন: আপনার কাকে বেশি পছন্দ, গৃহবধূ রেখা না বিজেপি প্রার্থী রেখা?

রেখা: কেন, দুটোই একসঙ্গে হওয়া যায় না? এক জন অতি সাধারণ ঘরের স্বল্পশিক্ষিতা গ্রাম্য গৃহবধূ হিসেবে আমার দল যে ভাবে আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

প্রশ্ন: জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?

রেখা: উচ্ছ্বাস দেখছেন না? এখানে আমার জয়-পরাজয়ের কোনও ব্যাপার নেই। আমি তো প্রার্থী নই। এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ প্রার্থী। অন্যায়, অপশাসন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা সবাই এক। যখন সাধারণ মানুষ এখানে প্রার্থী, তাই আমার জয় নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমার জয় মানে আমার লোকসভা এলাকার প্রতিটি মানুষের জয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy