Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Md Salim CPM

‘সেলিম মডেল’ কি কার্যকর হবে বাকি দফার ভোটেও? সিপিএমে আলোচনা-তর্ক এই ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’ নিয়েই

গত ৭ জানুয়ারি ইনসাফ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বুথে বুথে ব্রিগেড গড়ার ডাক দিয়েছিলেন সেলিম। তার পর ভোটের মধ্যে তিনি নিজে যে উদাহরণ তৈরি করেছেন, তাতে তাঁর দলই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।

CPM is facing challenges in implementing the Salim model

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৪ ১৮:৪৫
Share: Save:

রেওয়াজ ভেঙে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মুর্শিদাবাদে ভোটের দিন নতুন নজিরও গড়েছেন। ‘ভুয়ো এজেন্ট’কে ঘেঁটি ধরে ধাক্কাধাক্কি করেছেন তিনি। গত ১৩ বছরে সিপিএমের কোনও রাজ্য সম্পাদককে ভোটের দিন মাঠে-ময়দানে এই ভূমিকায় দেখা যায়নি। সেই ফুটেজ সিপিএমের লোকেরাই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করেছেন। যাকে অনেকেই অভিহিত করতে শুরু করেছেন ‘সেলিম মডেল’ বলে। কিন্তু বাকি দফার ভোটেও কি সেই মডেল বাস্তবায়িত হতে দেখা যাবে? সিপিএমের নেতারা মানছেন, সেলিম গোটা দলকে প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এক সিপিএম নেতা ঘনিষ্ঠ আলোচনায় রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘সেলিমদার জন্যই, ঘেঁটি ধরা আর ধাক্কাধাক্কি করার বলশেভিক প্রতিযোগিতায় পার্টিকে নামতে হবে এ বার।’’

সিপিএম সম্পর্কে এবং সিপিএমের মধ্যেও একটা কথা চালু রয়েছে— দলের যত লোক ফেসবুক করেন, তত লোক যদি বুথে সংগঠন করতেন, তা হলে দলকে এই রক্তশূন্যতার জায়গায় পৌঁছতে হত না। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই হয়তো গত ৭ জানুয়ারি মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের ডাকা ‘ইনসাফ ব্রিগেড’ সমাবেশের মঞ্চ থেকে বুথে ব্রিগেড গড়ার ডাক দিয়েছিলেন সেলিম। তার পর ভোটের মধ্যে সেলিম যে উদাহরণ তৈরি করেছেন, তাতে গোটা দলই যেন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষত ফাঁপরে পড়েছেন নেতারা। রাজ্য সম্পাদক করতে পারলে, জেলা বা এরিয়া স্তরের নেতারা যদি না করেন তা হলে নম্বর কাটা যেতে পারে।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

দলের হুগলি জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘সেলিমদা রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই যে ভাবে পার্টি পরিচালিত হচ্ছে, তাতে নিচুতলার কর্মীরা তেতে রয়েছেন। ভোটের মধ্যে তাঁর ভূমিকা কর্মীদের আরও উজ্জীবিত করেছে।’’ সব জায়গায় কি ‘সেলিম মডেল’ অনুসরণ করা যাবে? দেবব্রতের কথায়, ‘‘মাঝের পরিস্থিতি কিন্তু আর নেই। অধিকাংশ জায়গাতেই এ বার আমরা লড়ে নেব।’’ অনেকে বলেন— রাজনীতিতে কে কী বললেন, তার চেয়েও বড় বিষয় কে কী বললেন না। রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, ২০১১ সালে সিপিএম ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর বিমান বসু এবং সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য সম্পাদক হলেও, নিচুতলায় এই ‘লড়ে নেব’ বিষয়টি ছিল না। তা অনেক নেতাই বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

৬৬ বছরের সেলিম যদি ধাক্কাধাক্কি করেন, ৩০ বছরের সৃজন ভট্টাচার্য কী করবেন? যাদবপুরের সিপিএম প্রার্থী হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘৩০ বছরের সৃজন দৌড় করাবে।’’ যাদবপুর একদা ছিল লালদুর্গ। গত ১৫ বছর ধরে সেই লোকসভা তৃণমূলের দখলে। বারুইপুর পূর্ব-সহ বেশ কয়েকটি বিধানসভা এলাকায় সাংগঠনিক শক্তিও তেমন নেই। ফলে সে সব জায়গায় কী ভাবে ‘সেলিম মডেল’ অনুসরণ করা যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান সিপিএম নেতৃত্বও।

ডায়মন্ড হারবার এখন বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গড়’ হিসেবেই খ্যাত। সেই ডায়মন্ড হারবারে সিপিএম প্রার্থী করেছে সদ্য ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়া প্রতিক-উর রহমানকে। তাঁর নির্বানী এজেন্ট হয়েছেন দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রভাত চৌধুরী। প্রভাত বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে সেলিমদা যা করেছেন তা নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জের। আমরা সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।’’ প্রভাতের কথায়, ‘‘ভোটের দিন আমরা কতটা প্রতিরোধ করতে পারছি, সেটাই মূল চ্যালেঞ্জ।’’ নদিয়ার জেলা সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুমিত দের বক্তব্য, ‘‘সেলিমদা যা করেছেন তা সারা রাজ্যের পার্টিকেই উদ্বুদ্ধ করেছে। বুথে যে জড়তা আমাদের ছিল, তা অনেকাংশেই কাটানো গিয়েছে। তবে হ্যাঁ, ১০০ শতাংশ হয়নি। কিন্তু আগের থেকে বুথের সংগঠন অনেক ভাল আমরা করতে পেরেছি।’’

সেলিমের ধাক্কাধাক্কিতে সিপিএম যতই অক্সিজেন পাক, গোটা বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে তৃণমূল। রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ তথা তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘সেলিম যা করেছেন, তাতে মানুষের মনে সিপিএমের হার্মাদগিরির কথা নতুন করে ভেসে উঠেছে। মানুষই সিপিএমকে যা জবাব দেওয়ার দেবে।’’

সিপিএমের মধ্যে ‘সেলিম মডেল’ আরও বেশি করে আলোচনায় আসছে এই কারণে যে, জেলা বা এরিয়া স্তরের নেতাদের কমিটিতে থাকা-না থাকার বিষয়টি এই ভোটের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করবে। চলতি বছরের পুজোর পর থেকেই সিপিএমের শাখাস্তর থেকে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কোন নেতা মাঠে নামলেন, কারা ঘরে ঢুকে রইলেন— শীতকালীন সেই ভোটাভুটিতে সূচক হয়ে উঠবে লোকসভার কাজকর্ম। সে দিকে নজর থাকবে অনেকেরই। সিপিএম নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নেন, সেলিম জমানায় সাংগঠনিক কাজ, তার পর্যালোচনার পদ্ধতিতে গুণগত বদল এসেছে। খানিকটা আধুনিক ম্যানেজমেন্টের ধাঁচেই সেলিম তা করেন। যা আগে ছিল না। ফলে প্রায় সবাই মানছেন, নিজে মডেল তৈরি করে দিয়ে গোটা দলকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। তবে শহুরে এলাকায়, যেখানে সারা বছরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড খুব একটা থাকে না, সেখানে সেলিম মডেল বাস্তবায়ন করা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Md Salim CPM Lok Sabha Election 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE