Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ভাল ফলের জন্য তৃণমূলের প্রশংসা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের, অধীরের নিশানায় মমতা

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যখন বঙ্গে বিরোধী শিবিরের ভাল ফলের জন্য তৃণমূলের প্রশংসা করছেন, তখন অধীর চৌধুরী আজ তাঁর বহরমপুরে হারের জন্য মমতাকেই দায়ী করেন।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪ ০৮:২৫
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা দুই থেকে কমে এক হয়েছে। খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং বিগত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী নিজের পুরনো লোকসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছেন। নিজের হারের জন্য আজ অধীর খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনও আলোচনায় না গিয়ে আজ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দুর্দান্ত ফলের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের ভূয়সী প্রশংসা করলেন।

আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের বিভিন্ন রাজ্যে খুবই ভাল ফল করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলি বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রে খুবই ভাল ফল করেছে। নতুন লোকসভায় ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলি বড় ভূমিকা নেবে। একই সঙ্গে আজ কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে নতুন করে সংসদীয় দলনেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরে সনিয়া গান্ধীও তৃণমূলের মতো ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলির প্রশংসা করে বলেছেন, “লোকসভায় কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা বেড়েছে। তার সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র কিছু দল দারুণ ফল করায় আমাদের শক্তি মজবুত হয়েছে।”

কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যখন বঙ্গে বিরোধী শিবিরের ভাল ফলের জন্য তৃণমূলের প্রশংসা করছেন, তখন অধীর চৌধুরী আজ তাঁর বহরমপুরে হারের জন্য মমতাকেই দায়ী করেন। শনিবার সকালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার ঠিক আগে অধীর দাবি করেন, বহরমপুরে তাঁর জয় নিশ্চিত ছিল। মমতা নিজেও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে সাম্প্রদায়িক হিংসা করিয়েছিলেন। অধীর বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে হারানোর জন্য জঘন্য ষড়যন্ত্র করলেন। নির্বাচনে জিততে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ করিয়ে মেরুকরণ আমদানি করলেন।”

অধীর তাঁর হারের জন্য তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে দায়ী করলেও আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। শুধু বহরমপুর নয়, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ফল নিয়েও বৈঠকে কোনও কথা হয়নি। উল্টে অধীরের উপস্থিতিতেই পশ্চিমবঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলের ভাল ফলের প্রশংসা করে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বেশ কিছু রাজ্যে কংগ্রেসের খারাপ ফল নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন। এআইসিসি-তে বঙ্গের ভারপ্রাপ্ত গুলাম আহমেদ মীর বা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলার সুযোগ পাননি। অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে আর রাখা হবে কি না, তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অধীর অবশ্য আগেই বলেছেন, তিনি নিজেই অনেক আগে অন্য কোনও যোগ্য নেতাকে দায়িত্ব দিতে বলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের খারাপ ফল নিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেন, “যে সব রাজ্যে আমাদের ফল ভাল হয়নি, সেখানকার কারণ খতিয়ে দেখা হবে। কংগ্রেস সভাপতি একটি কমিটি তৈরি করবেন। সেই কমিটি বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা থেকে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলবে।” কর্নাটক, হিমাচল, তেলঙ্গানায় কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলেও সেখানেও কংগ্রেসের ভাল ফল হয়নি। এ নিয়েও কমিটিতে আলোচনা হবে। সূত্রের খবর, অশোক গহলৌতকে এই কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

বেণুগোপাল আজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অখিলেশ যাদব, উদ্ধব ঠাকরেদের বৈঠক নিয়েও কোনও রকমের আশঙ্কার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকের পরের দিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক আলাদা করে দিল্লিতে অখিলেশ যাদব, মুম্বইয়ে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। একে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে কংগ্রেসের দাদাগিরি, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির ছড়ি ঘোরানো ঠেকাতে তৃণমূলের বাকি দলগুলিকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যেই একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু বেণুগোপালের বক্তব্য, “যে কেউ যে কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। এতে কোনও সমস্যা নেই।”

অন্য দিকে তৃণমূল শিবির বলছে, এত দিন অধীর চৌধুরীর জন্য সংসদে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মধ্যে সমন্বয়ে সমস্যা হত। তৃণমূল সংসদে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের সঙ্গে থাকলেও অধীর সংসদে বসেই নিয়মিত মমতাকে আক্রমণ করতেন। আজও দিল্লিতে মমতার বিরুদ্ধে সরাসরি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। সে দিক থেকে অধীরের হেরে যাওয়া জোটের জন্য শাপে বর হয়েছে বলেই তৃণমূল শিবিরের মত।

আজ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও নতুন লোকসভায় ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভোটের সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র শরিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। সবাই যথাসম্ভব যোগদান করেছে। এ বার কংগ্রেস ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে সংসদের ভিতরে ও বাইরে একজোট হয়ে কাজ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE