—প্রতীকী চিত্র।
বিষয়টা অনেকেরই হজম হচ্ছে না! সমাজমাধ্যমে পদ্মফুল আঁকা গেরুয়া পতাকাধারীদের ছবিতে এ গানটির উদ্ধৃতি দেখা যাবে, কল্পনা করেনি বাঙালি। ভোট আবহে বিজেপির প্রচার-মিমে উদ্ধৃত হয়েছে, সলিল চৌধুরীর গানের লাইন, ‘পথে এ বার নামো সাথী, পথেই হবে এ পথ চেনা’। গানের বাণী অল্প বিকৃতও হয়েছে। কিন্তু এ গানের প্রতি গেরুয়া শিবিরের অনুরাগ দেখে বাম অনুরাগী মহলে হাহাকার, এমন দিনও দেখতে হল! ‘‘কোনও মোটরবাইকের বিজ্ঞাপনে এ গানের ব্যবহার হয়তো মজার লাগত”, বলছিলেন বিজ্ঞাপন বিশারদ সৌভিক মিশ্র। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘একটুও ইতিহাস জানলে কি বিজেপি শিবির বামেদের ছাপ্পা মারা গান ব্যবহার করত?”
বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য পাল্টা বলছেন, “গান বা রং কি কারও সম্পত্তি হয়? এ গানকে বিশেষ মতবাদের সঙ্গে রাঙিয়ে দিলে সলিল চৌধুরীর কালজয়ী সত্তাকেই খণ্ডিত করা হয়। আমরা কি দেবব্রত বিশ্বাসের গান শুনব না বা উৎপল দত্তের নাটকের মঞ্চায়ন দেখব না? আমরা রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা মানি না!”
সিপিএমের প্রবীণ আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, “এটা কিন্তু স্পষ্ট হল, বামেদের প্রচারের স্লোগান, গানের একটা চিরকালীন বা সর্বজনীন আবেদন আছে।” তবে তাঁর মতে, “ইতিহাস না-জেনে ব্যবহার করলে গানটির মানেই থাকে না।”
অতীতে তৃণমূল শিবিরেও সলিলের ‘হেঁই সামহালো ধান’ ব্যবহার করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘শহিদ স্মরণে আপন মরণে রক্ত ঋণ শোধ করো’ পংক্তিটি একদা বামেদের মাধ্যমে উঠে আসে। তৃণমূলের শহিদ দিবসের সৌজন্যে আজকাল অনেকেই তা তৃণমূলের
স্লোগান বলে জানেন। কয়েক বছর আগে বিহারের ভোট উপলক্ষে তৈরি ‘বাত বিহার কী’ স্লোগানের মালিকানা নিয়ে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছিল। কংগ্রেসের জনৈক তথ্য বিশ্লেষক চুরির অভিযোগ আনেন। কিন্তু কিছু প্রমাণ হয়নি। এ যাত্রা সলিলের গান নিয়ে বাম-বিজেপির টক্করে মতাদর্শ আত্মসাতের প্রশ্নটাই প্রবল।
বাম অনুরাগীদের একাংশের প্রশ্ন, সলিলের বিখ্যাত গানে ‘জনস্রোতে নানান মতে, মনোরথের ঠিকানা’র অর্থ কি বিজেপির অভিধানে রয়েছে? ওরা কি বহুত্বের আদর্শ মানে? কেউ বা বলছেন, সংখ্যাগুরুবাদে বিশ্বাসী বিজেপি কি সত্যিই মনে করে ‘সবার এ দেশ
সবার ছাড়া তো মানব না’? অর্থনীতির প্রবীণ অধ্যাপক সৌরীন ভট্টাচার্য মনে করেন, “গান নিয়ে লাঠালাঠি এক রকম ছেলেমানুষী।” ইতিহাস বলে, বাম শিবির একদা রবীন্দ্রনাথের গান থেকে অনেক কিছু গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। “এখন বিজেপি একটি গান ব্যবহার করলেই তার প্রকৃত ইতিহাস মুছে যাবে, এটা ভাবার মধ্যে আসলে বামেদের ঘোর ‘নিরাপত্তাহীনতা’ রয়েছে”, এমনটাই সৌরীনের অভিমত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy