গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
একেবারে শেষে। তা-ও মাত্রই মিনিট ছয়েক। ঘড়ি ধরে ৫৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডের বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটের ‘আসল’ কথাটুকুর জন্য ওই ৩৬০ সেকেন্ডই বরাদ্দ রেখেছিলেন। বাকিটা গত দশ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার কী করেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা সাফল্য, এসেছে তার বিবরণ। বক্তৃতার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের আগামীর ভাবনা মিশে থাকলেও তার জন্য আলাদা করে কোনও প্রকল্পের নাম বা বরাদ্দ শোনা যায়নি। বরং মোদীর মতোই বক্তৃতায় নির্মলার মুখে বার বার এসেছে ‘বিকশিত ভারত’, ‘অমৃতকাল’, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শব্দগুলি।
আয়করে কোনও বদল নেই। পণ্যের দামের বাড়তি-কমতি নেই। নির্মলা বলেছেন, ‘‘কর কাঠামোয় কোনও বদল হচ্ছে না। যা ছিল তা-ই থাকছে। যা বদল আনার, তা নতুন সরকার জুলাই বা অগস্ট মাসে সাধারণ বাজেটে বলবে।’’ কিন্তু এইটুকু বলতেও নির্মলা অতীতে মোদী সরকার কী কী ছাড় ঘোষণা করেছিল, তাতে কাদের কত সুবিধা হয়েছে, তার বিস্তারিত পরিসংখ্যানই দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মোদী জমানায় করদাতার সংখ্যা কতটা বেড়েছে, তার খতিয়ানও। দু-একটি ঘোষণা তিনি করেছেন বটে, তবে তারও কোনও স্পষ্ট ‘দিশা’ দেখা যায়নি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। ৯ থেকে ১৪ বছরের বালিকাদের ‘সার্ভাইকাল ক্যানসার’-এর প্রতিষেধক দেওয়ার উদ্যোগের কথা বলেছেন। কিন্তু কবে থেকে তা শুরু হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি। পর্যটন নিয়ে পরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু তার জন্য কোনও আর্থিক বরাদ্দের কথা শোনাননি। অনেকে অবশ্য বলছেন, অন্তর্বর্তী বাজেটে বিস্তারিত বলা যায় না। সেই ‘বাধ্যবাধকতা’ ছিল নির্মলার। তবে কারণ যা-ই হোক, নির্মলার বাজেট বক্তৃতার বেশিটা জুড়েই ছিল অতীতচারণ। লোকসভা নির্বাচনের আগে যা প্রচারের কাজও করে দিয়েছে।
গত কয়েক বছরই দেখা গিয়েছে, বাজেট বক্তৃতার সময় অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা। সবটা না পড়ে মূল বিষয়গুলি বলে বাকি নথি পেশ করে দেন তিনি। সাধারণ বাজেটে এটাই করে থাকেন নির্মলা। বৃহস্পতিবার ছিল লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী বাজেট। তাতে এক ঘণ্টাও সময় নেননি তিনি। বক্তৃতা শুরু ১১টা বেজে ২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডে। শেষ ১১টা ৫৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। ১২টা বাজার আগেই।
ইদানীং প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁদের বক্তৃতায় কেন্দ্রের সাফল্যের তালিকা তুলে ধরছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ প্রতিটি জনসভায় এক জন বক্তা রাখতে হবে, যিনি শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে কথা বলবেন। পরিসংখ্যান-সহ তুলে ধরবেন গত ১০ বছরে দেশ কোথা থেকে কোথায় এসেছে! সেই দিক থেকে নির্মলার বাজেট বক্তৃতা একটি ‘নমুনা’ তৈরি করে দিল। এই বক্তৃতা হুবহু বললেই তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার জন্য বিজেপির যা বলার দরকার তা বলা হয়ে যাবে।
নির্মলা বিজেপি সরকারের লক্ষ্য হিসাবে মহিলা, যুব এবং কৃষকদের উন্নয়নের কথা বলেছেন। তার সঙ্গে দাবি করেছেন, গত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে নিয়ে আসা হয়েছে। চার কোটি কৃষক শস্যবিমার আওতায় এসেছেন। দেশে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় আর্থিক উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে জি-২০ সম্মেলন পরিচালনায় সাফল্য প্রাপ্তির কথাও বলেছেন। সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ বছরে আবাস যোজনায় মোট পাঁচ কোটি মানুষের ঘর হবে। আরও এক কোটি মহিলা লাখপতি হবেন ইত্যাদি। জানিয়েছেন, ২০৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতার শতবর্ষের আগেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ হয়ে যাবে ‘বিকশিত ভারত’। যা বার বার বলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
প্রত্যাশিত ভাবেই এই বাজেটে খুশি বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাজেট প্রস্তাব পেশ হওয়ার পরে পরেই এক্স হ্যান্ডেলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে, আগামী জুলাই মাসে তৃতীয় মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন সংসদে।’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, এই অন্তর্বর্তী বাজেট দেশের যুব, মহিলা, কৃষক এবং গরিবদের দিকে বিশেষ নজর দিলেও সকলেরই উপকার হবে। অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘এই বাজেট অন্তঃসারশূন্য, দিশাহীন ও গরিব-বিরোধী। আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এই বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।’’ শান্তনু আরও বলেন, ‘‘বাজেটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে কোনও পদক্ষেপ নেই। তেমনই বেকারত্ব ঘোচাতে কেন্দ্র কী করতে চাইছে, তারও কোনও উল্লেখ নেই। এই সরকারের শেষ বাজেটের আমরা তীব্র সমালোচনা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy