অমিত শাহ এবং অনন্ত রায়। —ফাইল চিত্র।
নীলবাড়ির লড়াইয়ের সময়ে কোচবিহারের ‘স্বঘোষিত’ মহারাজ অনন্ত রায়কে কাছে টানতে অনেক কিছুই করতে হয়েছিল বিজেপিকে। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজবংশী ভোট টানার লক্ষ্যে অনন্তকে মানাতে চলে গিয়েছিলেন মহারাজের অসমের বাড়িতে। এ বার দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ের আগে সেই অনন্তরই গোঁসা হয়েছে দলের বিরুদ্ধে। সেটাও আবার শাহের ধমক খেয়ে। এখন বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ হলেও দলের বিরুদ্ধেই ক্ষুব্ধ অনন্ত। কয়েক মাস আগেই রাজবংশী অধ্যুষিত ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনে জেতা আসন খোয়াতে হয়েছে বিজেপিকে। ফলে রাজবংশী ভোটে বিজেপির একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে বলা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে দলের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন অনন্ত। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি আমায় সাংসদ করেছে কিন্তু সম্মান দেয়নি। ডাস্টবিনের মতো ফেলে রেখেছে। কোচবিহারের বিজেপি অফিসটাও আজ পর্যন্ত চোখে দেখিনি।’’ সেই ক্ষোভ জানিয়ে অনন্তের প্রশ্ন, ‘‘আমায় কি এক বার নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল না?’’
কিন্তু আচমকা কেন দলের বিরুদ্ধে এত ক্ষুব্ধ অনন্ত? তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, রবিবার শাহের ফোন এসেছিল অনন্তের কাছে। তার পর থেকেই নাকি ক্ষোভ বেড়েছে। শাহ ধমকের সুরে কথা বলেছেন বলেও দাবি অনন্ত-ঘনিষ্ঠদের। এই প্রসঙ্গে অনন্ত বলেন, ‘‘আমায় অমিত শাহজি ফোন করেছিলেন। উনি বলছেন, ‘নো ইউটি, নো ভোট’ ক্যাম্পেন বন্ধ করতে হবে। আমার কথাই উনি শোনেননি। আমি এমন কোনও ক্যাম্পেন চলছে বলেও জানি না। কারা করছে, তাঁরা রাজবংশী কি না সেটাও আমার জানা নেই। সে সব বলার সুযোগ না দিয়েই শাহ ফোন কেটে দেন।’’ শাহের ফোনেই কি তিনি ক্ষুব্ধ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার ক্ষোভের কোনও বিষয় নেই। এখানকার মানুষ পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়ে ক্ষুব্ধ। বাজেট অধিবেশনের সময়েই আমি শাহের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা উত্থাপন করেছিলাম। তখন উনি বিষয়টা দেখবেন বলে জানান। কিন্তু তার পরে এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি। এটা নিয়ে কারও মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে বা ভোট বয়কটের ডাক উঠেছে বলে আমি শুনিনি। আর সেটা হলেও আমার সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। শাহ, আমাকে বন্ধ করতে বলছেন। কিন্তু আমি যেটা জানিই না, সেটা বন্ধ করব কী করে?’’
আলাদা কোচবিহার রাজ্য অবশ্য অনন্তর পুরনো দাবি। বিজেপি সাংসদ হওয়ার আগে তিনি ছিলেন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর নেতা। অনন্ত বা তাঁর দলের মূল দাবি ‘আলাদা রাজ্য’। ‘গ্রেটার কোচবিহার’ নামে বাংলা থেকে বেরিয়ে যাওয়া পৃথক রাজ্যের দাবি নিয়েই অনন্তদের যাবতীয় আন্দোলন এবং দরকষাকষি। সেই দাবিতে যাতে অনন্ত আর ‘আস্ফালন’ করতে না পারেন, সে জন্যই বিজেপি এই মহারাজকে দলের করে নিতে চেয়ে সাংসদ করে। সেই সঙ্গে আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজবংশী সমর্থন ধরে রাখতেও এই উদ্যোগ বলে মনে করা হয়েছিল।
তবে অনন্তের ক্ষোভ সামনে এসে যাওয়ায় বিজেপির অস্বস্তি বেড়েই গেল। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধেও অনেক ক্ষোভ উগরে দেন অনন্ত। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাজ্য থেকে প্রথম বার রাজ্যসভায় কোনও নির্বাচিত সদস্য পাঠানোর সুযোগ পেয়েছিল বিজেপি। তাতে অনন্তকেই বাছা হয়। কলকাতায় ঘটা করে অনন্তকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই অনন্ত সোমবার বলেন, ‘‘রাজ্য নেতারা আমায় সাংসদ হিসাবে গুরুত্বই দেয় না। কোনও সম্মান পাই না। কলকাতায় কোনও বৈঠক থাকলে আমায় দু’ঘণ্টা আগে খবর দেওয়া হয়। সেটাও রাজ্য নেতারা ফোন করেন না। দলের কল সেন্টার থেকে ফোন আসে।’’ অনন্তের আরও ক্ষোভ যে, সাংসদ হওয়ার পরে তিনি রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কোনও কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ পাননি। গত ২৯ নভেম্বর কলকাতায় দলের সব সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন শাহ। সেখানে গরহাজির ছিলেন অনন্ত। সেই সময়েও আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপির নেতারা তো আমায় সাংসদ বলে মনেই করেন না! আমাকে প্রায় কোনও কিছুতেই ডাকেন না। এ বার ডেকেছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে। সেই ফোন পাওয়ার পরে আমার পক্ষে বুধবার সকালের মধ্যে কলকাতা পৌঁছনো সম্ভব ছিল না।’’ সে বারের মতো এ বারেও রাজ্য বিজেপির কোনও নেতা অনন্তের মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy