Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

তৃতীয় পর্বে হাওয়া ঘুরবে কি, আশাতেই ভরসা বিজেপির

তৃতীয় দফায় যে দশটি রাজ্যে নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি আটটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৭:২৬
Share: Save:

তৃতীয় পর্বে হাওয়া ঘুরবে এই আশায় বুক বাঁধছেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রথম দু’টি পর্বে সে ভাবে মানুষ ভোট দিতে পথে না নামলেও, তৃতীয় পর্বে ছবিটি পাল্টাবে বলে দাবি বিজেপি নেতাদের। অন্য দিকে কংগ্রেসের দাবি, প্রথম দু’টি পর্ব থেকেই স্পষ্ট, ভোটারেরা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন ধারা আগামী পর্বেও জারি থাকবে বলেই আশাবাদী কংগ্রেস নেতৃত্ব।

দ্বিতীয় দফার ভোটের পরে দশ দিনের বিরতির শেষে আগামিকাল গোটা দেশের ১০টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯৩টি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে চারটি আসনে কাল ভোট রয়েছে। ভোট বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃতীয় পর্বের ভোটই কার্যত স্পষ্ট করে দেবে কেন্দ্রে ক্ষমতার কোনও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছর আগে হওয়া লোকসভা নির্বাচনে ৯৩টি আসনের মধ্যে ৭১টি আসনে জিতেছিল গেরুয়া শিবির। যা তাদের দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরা অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়েছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যদি প্রথম দু’টি পর্বের ধাঁচে শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াই দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে বিজেপির পক্ষে কুর্সি ধরে রাখা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়বে। তৃতীয় দফায় যে দশটি রাজ্যে নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি আটটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। ফলে ওই রাজ্যগুলিতে লোকসভায় ভাল ফল করার জন্য সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়েছে তারা।

কালকের ভোটে বিজেপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হল গুজরাত। ওই রাজ্যের ২৬টি আসনের মধ্যে ২৫টিতে কাল নির্বাচন। ওই রাজ্যের সুরাত আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটের আগেই জিতে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। গত দু’বারের মতো এ বারেও ওই রাজ্যে সব ক’টি আসন জেতার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে শাসক দল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে গান্ধীনগর থেকে অমিত শাহ, পোরবন্দর থেকে মনসুখ মাণ্ডবিয়ার জয় প্রায় নিশ্চিত হলেও, নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে পথে নেমেছেন রাজপুত-ক্ষত্রিয় সমাজ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজকোটের বিজেপি প্রার্থী পুরুষোত্তম রূপালার রাজপুত সমাজের প্রতি করা বিরূপ মন্তব্যের জেরে ওই জনসমাজের বিক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব সৌরাষ্ট্র এলাকার অন্তত আট-ন’টি আসনে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রূপালার করা মন্তব্যকে কংগ্রেস ধারাবাহিক ভাবে প্রচারের হাতিয়ার করায় বিতর্ক এখনও তাজা। পরিস্থিতি সামলাতে গত কাল প্রচারের শেষ দিনে বিজেপির ক্ষত্রিয়-রাজপুত নেতারা তাঁদের সমাজের উদ্দেশে একটি বিবৃতি দিয়ে ‘ছোটখাটো মতভেদ ভুলে রাষ্ট্রহিতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান’ জানান। কিন্তু তাতে লাভ কতটা হবে তা নিয়ে এখনও উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের একাংশের মতে, রূপালার উপরে ক্ষোভের আঁচ পার্শ্ববর্তী জামনগর কেন্দ্রেও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রূপালার মতোই ওই কেন্দ্রের প্রার্থী পুনমবেন মাদামের জয় নিয়ে সংশয়ে রয়েছে দল। বিক্ষোভের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে কচ্ছ, ভাবনগর, জুনাগড়ের মতো কেন্দ্রগুলিতেও।

বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে উত্তরপ্রদেশও। প্রথম দু’টি পর্বে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে দল আদৌ ভাল ফল করেছে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় রয়েছে। এ বার তৃতীয় দফায় তথাকথিত যাদববহুল এলাকাগুলিতে ভোট হতে চলেছে। লড়াইয়ে রয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদবের পরিবারের তিন প্রার্থী। যার মধ্যে মৈনপুরী থেকে লড়ছেন অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল যাদব। মৈনপুরী যাদব দুর্গ বলেই পরিচিত। গত বার ওই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন ডিম্পল।
এ ছাড়া মুলায়মের ভাই রামগোপাল যাদবের ছেলে অক্ষয় যাদব ফিরোজ়াবাদ আসন থেকে লড়ছেন। বদায়ূঁ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুলায়মের আর এক ভাই শিবপাল যাদবের ছেলে আদিত্য। মুলায়ম পরিবারের নতুন প্রজন্ম বিজেপিকে কেমন বেগ দিতে পারেন তার উপরে ওই রাজ্যে বিজেপির ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে।

অন্য দিকে মহারাষ্ট্রের বারামতীতে ননদ-বৌদির লড়াই ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে। শরদ পওয়ারের কন্যা সুপ্রিয়া সুলে যদি শরদের ভাইপো অজিতের স্ত্রী সুনেত্রা পওয়ারের কাছে হেরে যান, সে ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারেন শরদ। মহারাষ্ট্রের ১১টি আসনের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশের ৯টি আসনে আগামিকাল ভোট। ওই রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও সেখানে বিজেপি কর্মী ও মহিলাদের একাংশ প্রথম দু’টি ভোটে ঘর থেকে সে ভাবে বেরোননি। তাতে রীতিমতো উৎসাহিত কংগ্রেস। দল মনে করছে, রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই পরিবর্তনের চাকা ঘুরতে শুরু করবে।

অসমে ৭ মে শেষ পর্যায়ের ভোট গুয়াহাটি, ধুবুড়ি, বরপেটা এবং কোকরাঝাড়ে। একমাত্র ধুবুড়িকেই খরচের খাতায় রেখে লড়তে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা! বরপেটাও ১৯৫২ থেকে কখনও বিজেপি-অগপর হাতে আসেনি। এই বার তা ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হিমন্ত। কারণ সীমানা পুনর্বিন্যাস মুসলিমপ্রধান বরপেটাকে হিন্দুপ্রধান কেন্দ্র করে ফেলেছে। একমাত্র তৃণমূল সেখানে মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে।
এ দিকে ধুবুড়ি দখলে মূল লড়াই কংগ্রেস ও ইউডিএফের। মূলত বাংলাভাষী মুসলিমের কেন্দ্র ধুবুড়ি। সেখানে গত তিন বার সহজেই জিতেছেন মৌলানা বদরুদ্দিন আজমল। তবে পশ্চিম এশিয়ার এই সুগন্ধি-ব্যারন এত বছর ধুবুড়ির সাংসদ থাকলেও মুসলিমদের উন্নয়নে তাঁর অবদান তেমন নেই বলেই দাবি করছেন বাসিন্দাদের বড় অংশ। সেই সুযোগ নিতেই, দীর্ঘদিন মন্ত্রী থাকা সামাগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক রকিবুল হুসেনকে ধুবুড়িতে টক্কর দিতে পাঠিয়েছে কংগ্রেস।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy