অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
এপ্রিলে ভোটের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে এসে অমিত শাহ বলেছিলেন, “সব ক’টাকে উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করে দেওয়া হবে।” সেই সময়ে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র উপর হামলা হয়েছে। দোষীদের উদ্দেশে করা ওই ‘অমিতবাণী’ ভাল ভাবে নেয়নি বাংলার শাসকদল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমালোচনা করেছিলেন শাহের। শুক্রবার শাহ আবার এসেছিলেন রাজ্যে। এ বারও তাঁর মুখে শোনা গেল একই হুঁশিয়ারি। তবে এ বার তিনি ‘উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করা’র হুঁশিয়ারি দিলেন সন্দেশখালির দোষীদের।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলার বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করতে এক মাস পরে আবার বাংলায় এসেছেন শাহ। শুক্রবার তাঁর সভা ছিল কৃষ্ণগঞ্জ, রামপুরহাট এবং রানিগঞ্জে। প্রথম সভাতেই সন্দেশখালি নিয়ে ওই মন্তব্য করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘মমতা এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উপস্থিতিতে মহিলাদের শোষণ করা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। করেছেন ওঁর দলের নেতারা। ওঁর লজ্জা করা উচিত। সিবিআই তদন্ত করছে। বাংলার মা, বোনদের চিন্তার দরকার নেই। আমরা সন্দেশখালির অপরাধীদের উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করে দেব।’’
সম্প্রতি সন্দেশখালির ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে। গোপন ক্যামেরায় বন্দি এক ভিডিয়োয় বিজেপিরই সন্দেশখালি-২-এর মণ্ডল সভাপতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, সেখানকার আন্দোলন গোটাটাই সাজানো। এই আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কাউকে ধর্ষণ করা হয়নি। পরে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সন্দেশখালির মহিলা অভিযোগকারিনীরাও। একের পর এক প্রকাশ্যে এসেছে ভিডিয়ো। যদিও ওই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। একের পর এক ওই সমস্ত ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্যে কিছুটা চাপে পড়ে বিজেপিও। প্রকাশ্যে মেজাজ হারাতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। কিন্তু শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যাঁকে শুভেন্দুর দিল্লির ‘মেন্টর’ বলেই জানেন রাজনীতির কারবারিরা, ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে একটি কথাও বলেননি। বরং পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধেই।
তবে কি জেনেবুঝে এবং কৌশলগত ভাবেই সন্দেশখালির ভিডিয়ো প্রসঙ্গ এড়িয়ে সন্দেশখালির আন্দোলন প্রসঙ্গে জিইয়ে রাখলেন শাহ? কারণ, যে সন্দেশখালি নিয়ে বাংলার বিজেপি নেতারাই কিছুটা সুর নামিয়েছেন, সেখানে শুক্রবার অমিত বারে বারেই টেনে এনেছেন সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। আসানসোলের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সমর্থনে রানিগঞ্জের রোড-শোতেও শাহকে বলতে শোনা যায়, “সন্দেশখালির মতো ঘটনায় যুক্তদের জেলে পাঠাতে হবে কি না? মমতাদিদি কি এটা করতে পারবেন?”
তবে নিন্দকেরা এমনও বলছেন, “উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করা” সংলাপটি পছন্দ হয়েছে শাহের। পছন্দ হয়েছে বিরোধীদের উপর তার প্রভাব পড়ার বিষয়টিও। তাই বার বার নানা ইস্যুতে সেই প্রসঙ্গ টেনে আনছেন তিনি।
রাজনীতিতে এই ধরনের ‘সংলাপ’ অবশ্য নতুন নয়। এই ‘ডায়ালগ’ অবশ্য আক্ষরিক অর্থে কথোপকথন নয়। এই ‘ডায়ালগ’ কিছু শব্দবন্ধ। যা নেতাদের মুখ থেকে নিঃসৃত হলে হাততালি পড়ে তাঁকে দেখতে আসা জনগণের ভিড়ে। কখনও পাল্টা সাড়া দেয় জনতাও। সেজন্যই মমতার ‘খেলা হবে’। মিঠুন চক্রবর্তীর ‘জাত গোখরো’ এবং আরও বহু নেতার এমন স্লোগান বা ডায়ালগের জন্য মুখিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ। শাহও কি তাঁর ‘উল্টো ঝুলিয়ে সিধে করে দেওয়া’ ডায়ালগের জনপ্রিয়তা অনুভব করছেন? প্রশ্ন তুলছেন রাজনীতির কারবারিরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy