রাজভবনে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগের অনুসন্ধানে কলকাতা পুলিশ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজভবন থেকে যে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হয়েছিল, তাতে শুধুমাত্র রাজভবনের বাইরের দৃশ্যই দেখা গিয়েছিল। রাজভবনের ভিতরের কোনও দৃশ্য ছিল না। রাজভবন যা দেখায়নি, অর্থাৎ ভিতরের সেই সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ কলকাতা পুলিশের হাতে এসেছে। লালবাজার সূত্রে খবর, সেই ফুটেজে অভিযোগকারিণী মহিলাকে রাজভবনের সিঁড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দোতলা থেকে নেমে আসতে দেখা গিয়েছে। তাতেই পুলিশের একাংশের মনে প্রশ্ন জেগেছে, দোতলায় কনফারেন্স রুমে কী এমন ঘটল যে, সিঁড়ি দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে নেমে এলেন মহিলা?
লালবাজার সূত্রে খবর, রাজভবন জুড়ে মোট ৪৪টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে প্রতিটিই নীচের তলায়। উপরে যেখানে রাজ্যপাল থাকেন, সেখানে কোনও ক্যামেরা নেই। ফলে হাতে যে ফুটেজ এসেছে, সবই রাজভবনের নীচের তলার। সব মিলিয়ে চারটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। সব ক’টি থেকে কমবেশি দু’ঘণ্টার করে প্রায় আট ঘণ্টার ফুটেজ মিলেছে।
গত ২ মে হেয়ার স্ট্রিট থানায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাজভবনেরই কর্মচারী। তাঁর অভিযোগ, ওই দিনই রাজভবনের কনফারেন্স রুমে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। গত ২৪ এপ্রিলও একই ঘটনা ঘটেছে তাঁর সঙ্গে। এর পরেই রাজ্যের পূর্ত দফতর থেকে রাজভবনের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। পূর্ত দফতরই রাজভবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, অভিযোগকারিণী মহিলা যে দিন পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন, সেই দিন অর্থাৎ ২ মে-র ফুটেজে দেখা গিয়েছে, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিট নাগাদ রাজভবনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে একতলায় নেমে আসছেন অভিযোগকারিণী মহিলা। তাঁর পিছনে আর এক মহিলাকেও নেমে আসতে দেখা গিয়েছে। রাজভবনের আরও কয়েক জন কর্মচারীকেও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে। এর পর মহিলাকে রাজভবনের এক বিশেষ সচিবের ঘরে যেতে দেখা যায়। পরে বিকেল ৫টা ৩২/৩৩ মিনিট নাগাদ মহিলাকে পুলিশ আউটপোস্টের দিকে যেতে দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবার রাজভবন থেকে ফুটেজ দেখানো হয়, তাতে অভিযোগকারিণী মহিলাকে পুলিশ আউটপোস্টের দিকেই যেতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজভবন থেকে যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে, সেটি আসলে মহিলার রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসার ফুটেজ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহিলা লালবাজারের আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন, গত ২ মে বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। রাজ্যপালের অফিস থেকে এক জন ফোন করে জানান, রাজ্যপাল তাঁকে ডাকছেন। মহিলার দাবি, তিনি যে হেতু অতীতেও রাজভবনে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন, তাই একা রাজ্যপালের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের কনফারেন্স রুমে বসানো হয়েছিল। কনফারেন্স রুমটি রাজ্যপালের অফিস লাগোয়া। সেখানে কথাবার্তা চলাকালীন রাজ্যপাল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন তিনি সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে করে এনেছেন। তার পরেই কনফারেন্স রুম থেকে সুপারভাইজ়ারকে চলে যেতে বলেন রাজ্যপাল। গত ২ মে কলকাতায় এসে রাজভবনে রাত্রিবাস করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অভিযোগকারিণী মহিলার দাবি, মোদীর রাজভবনে আসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে একান্তে আলোচনার কারণ দেখিয়েই সুপারভাইজ়ারকে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন বোস।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলা জানিয়েছেন, তিনি সব মিলিয়ে ২০-২৫ মিনিট কনফারেন্স রুমে ছিলেন। এর পর কনফারেন্স রুম থেকে বেরোনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই ইপিএবিএক্স (ইলেক্ট্রনিক প্রাইভেট অটোমেটিক ব্রাঞ্চ এক্সচেঞ্জ) বিভাগের কয়েক জন কর্মী এসে তাঁকে নিয়ে যান। মহিলা নিজেও ইপিএবিএক্স বিভাগের কর্মচারী। তাঁর দাবি, তাঁকে ইপিএবিএক্স বিভাগের ঘরে নিয়ে গিয়ে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ বলেছিলেন ওই কর্মচারীরা। সেই সময় চিৎকার করে ওঠেন মহিলা। কাঁদতে থাকেন। তাঁর চিৎকার শুনে সেখান থেকে সরে যান অন্য কর্মচারীরা। এর পরেই তিনি সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নেমে আসেন। মহিলার বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশের একাংশের মনে প্রশ্ন, মহিলা কনফারেন্স রুম থেকে বেরোতেই কেন ছুটে এসেছিলেন ইপিএবিএক্স রুমের কর্মচারীরা? কেন তাঁকে তড়িঘড়ি অফিসঘরে নিয়ে যাওয়া হল? তা হলে কি রাজ্যপালই আগেভাগে তাঁদের কিছু বলেছিলেন? লালবাজার সূত্রে খবর, গোটা বিষয়টিই অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।
শুক্রবারই রাজভবনের তিন কর্মচারীকে তলব করেছিল লালবাজার। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন রাজভবনের ওই বিশেষ সচিব, কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যাঁর ঘরে গিয়েছিলেন অভিযোগকারিণী মহিলা। সিসি ফুটেজে তো তা দেখা গিয়েছেই। মহিলাও লালবাজারের আধিকারিকদের তা জানিয়েছিলেন। লালবাজার সূত্রে খবর, মহিলা জানিয়েছিলেন, তিনি যখন সচিবের ঘরে যান, তখন সেখানে এক চিকিৎসক ছিলেন। মহিলাকে কাঁপতে দেখে তাঁর হাত মালিশ করে দিয়েছিলেন সেই চিকিৎসক। তাঁর ওই বয়ানের ভিত্তিতে ওই চিকিৎসককেও তলব করা হয়েছিল। ডাকা হয়েছিল রাজভবনের আর এক কর্মচারীকেও। যদিও তাঁরা কেউই পুলিশের তলবে সাড়া দেননি। তার মধ্যেই লালবাজারের হাতে সিসি ফুটেজ আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসি ফুটেজে রাজভবনের যে সব কর্মচারীকে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মুখচ্ছবির স্ক্রিনশট রাজভবনে পাঠানো হয়েছে। পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁদের। প্রশ্ন উঠছে, পরিচয় জানার পর কি তাঁদেরও তলব করবে পুলিশ?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy