বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর সঙ্গে যোগ খুব কম বয়স থেকেই। সেখান থেকেই পরে রাজনীতিতে আসা। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছেন। দু’বারই হেরেছেন। ‘অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া’ সেই বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাসকেই ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
রাজ্য রাজনীতিতে সে ভাবে পরিচিত নন অভিজিৎ। তবে দীর্ঘ দিন বিজেপির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতিতে চেনা মুখ। জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীদের কাছে অভিজিৎ পরিচিত ‘ববিদা’ নামে। যদিও রাজ্য বিজেপির নির্বাচন পরিচালন কমিটিতে রয়েছেন তিনি। এক সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সভাপতিও ছিলেন। ডায়মন্ড হারবার এলাকায় সমাজকর্মী হিসাবেও একটু-আধটু পরিচিতি রয়েছে অভিজিতের। যদিও জেলার বিজেপি কর্মীদের দাবি, ‘‘সমাজসেবা ববিদার পেশা নয়, নেশা।’’
১৯৬৯ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় অভিজিতের জন্ম। বাবা বীরেন্দ্রকুমার দাস ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী। অভিজিতের যখন ১৫ বছর বয়স, তখন তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। উদয়রামপুর পল্লীশ্রী শিক্ষায়তন থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর মেদিনীপুর বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন অভিজিৎ। বিজেপি নেতার ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সেই সময় থেকেই সঙ্ঘ মহলে তাঁর যাতায়াত শুরু হয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের পর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন অভিজিৎ। সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) হাত ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে হাতেখড়িও সেই সময় থেকেই। স্নাতক হওয়ার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহশালা বিদ্যা এবং গ্রন্থাগার বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন নিয়েও পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই পাকাপাকি ভাবে সঙ্ঘ পরিবারে অভিজিৎ যোগ দিয়েছিলেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর সঙ্ঘ ও বিজেপির বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পর ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রথম নির্বাচনী রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন অভিজিৎ। ২০০৯ সালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছিলেন অধুনাপ্রয়াত সোমেন মিত্র। বিজেপি প্রার্থী করেছিল অভিজিৎকে। সেই নির্বাচনে মাত্র ৩৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এর পর ২০১৪ সালে আবার ডায়মন্ড হারবারে অভিজিৎকে টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। প্রতিপক্ষ অভিষেক। তবে জয় থেকে সে বছরও অভিজিৎ ছিলেন অনেক দূরে। অভিষেক যেখানে ৫ লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন, ববি সেখানে পেয়েছিলেন দু’লক্ষের সামান্য বেশি ভোট। ২০১৯ সালে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি বিজেপি। তাঁর বদলে বিজেপি প্রার্থী করেছিল নীলাঞ্জন রায়কে।
রাজনীতিতে নেমে মারধর খাওয়ার নজিরও রয়েছে অভিজিতের! অভিজিৎ-বৃত্তের বিজেপি নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে আক্রান্ত হন ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী। ডায়মন্ড হারবারের ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের কপাটহাট মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ, বেলা ৩টে নাগাদ ডায়মন্ড হারবারের দিকে যাওয়ার সময়ে জনা চল্লিশ দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে। তাঁকে এবং তৎকালীন সহ-সভাপতি সুফল ঘাঁটুইকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে শুরু হয় মারধর। অভিযোগ ছিল, বাঁশ, লাঠি, ছুরি নিয়ে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই চড়াও হয়েছিল তাঁদের উপর। সেই ঘটনায় গুরুতর জখম হন অভিজিৎ। মাথা ফাটে তাঁর। মার খেয়ে দীর্ঘ দিন তিনি ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলেও বিজেপি নেতৃত্বের দাবি।
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাকি সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ঝুলে ছিল ডায়মন্ড হারবারের ভাগ্য। অভিষেকের বিরুদ্ধে কে লড়বেন, তা অনেক দিন পর্যন্ত ঘোষণা না করায় তৃণমূলের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয় পদ্মশিবিরকে। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে দলের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল অনেক দিন ধরেই। অবশেষে সেই জল্পনার অবসান ঘটেছে। মঙ্গলবার ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হিসাবে ববির নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি।
কিন্তু তৃণমূল প্রার্থী যেখানে স্বয়ং তৃণমূল সেনাপতি, তখন অভিজিৎকে প্রার্থী করা নিয়ে কোন সমীকরণে হেঁটেছে বিজেপি? সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপির যুক্তি, আরএসএস এবং বিজেপির পুরনো কর্মী অভিজিৎ। বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ডায়মন্ড হারবারের রাজনীতির সঙ্গেও তিনি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তৃণমূল স্তরেও যাতায়াত রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি এর আগে দু’বার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে অভিজিতের। অতীত থেকে শিক্ষাও নিয়েছেন। তাই অভিষেকের সঙ্গে লড়াই যদি কেউ করতে পারেন, তা হলে অভিজিৎই পারবেন বলে দাবি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের।
কিন্তু অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা নিয়ে অভিজিৎ নিজে কী বলছেন? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে অভিজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি যে লক্ষ্যকে জীবনের ব্রত করেছি, সেটা সফল করার সুযোগ পেলাম।’’ তবে বিজেপি এত দেরিতে প্রার্থী ঘোষণা করার কারণে কি লড়াইয়ে খানিকটা পিছিয়ে পড়লেন তিনি? উত্তরে অভিজিৎ বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়ার কিছু নেই। গোটা দেশের মতো ডায়মন্ড হারবারেও বিজেপি এগিয়ে। আমার সঙ্গে গোটা বিজেপি পরিবার লড়ছে। চোখে চোখ রেখে লড়াই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy