Advertisement
Back to
Adhir Chowdhury Mamata Banerjee

মমতার পাশে কংগ্রেসের হাইকমান্ড, ‘হয় মানো, না হয় বাইরে যাও’, অধীরকে বার্তা মল্লিকার্জুন খড়্গের

শনিবার খড়্গে, শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে-সহ ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা লখনউয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই প্রশ্নের জবাবে খড়্গে জানিয়েছেন, মমতার বিবৃতিতে স্পষ্ট যে, তিনি ‘ইন্ডিয়া’য় রয়েছেন।

Adhir Chowdhury is no one to decide anything, Says Mallikarjun Kharge

(বাঁ দিক থেকে) অধীর চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মল্লিকার্জুন খড়্গে। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ১৩:৩৯
Share: Save:

অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন প্রদেশ কংগ্রেস যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা জারি রাখুক, সর্বভারতীয় কংগ্রেস আরও এক বার বুঝিয়ে দিল, তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ইন্ডিয়া’র শরিক মনে করে। শুধু তা-ই নয়, সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সটান বলে দিলেন, ভোটের পর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী হবে না হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর চৌধুরী কেউ নন। সেটা ঠিক করবে হাইকমান্ড। বিদায়ী লোকসভার কংগ্রেস দলনেতার উদ্দেশে কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরেই খড়্গে বলেছেন, ‘‘হয় হাইকমান্ডের কথা মানতে হবে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে, না হলে বাইরে যেতে হবে।’’

যা শুনে অধীর বলেছেন, ‘‘আমিও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। আমিও হাইকমান্ডেরই লোক!’’ অর্থাৎ, অধীর কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে কার্যত সম্মুখসমরেই নেমে পড়লেন। তাঁর কথায় স্পষ্ট যে, তিনি খড়্গে এবং নিজেকে একই মর্যাদা এবং মঞ্চে রাখছেন। এখন দেখার, অধীরের এই বক্তব্য জেনে কংগ্রেস সভাপতি এবং হাইকমান্ড কোনও পদক্ষেপ করে কি না।

শনিবার খড়্গে, শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে-সহ ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা লখনউয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই প্রশ্নের জবাবে খড়্গে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বাইরে থেকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন। বাইরে থেকে সমর্থন কোনও নতুন বিষয় নয়। প্রথম ইউপিএ সরকারে বামেরাও বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও মমতার আরও একটি বিবৃতি এসেছে। যাতে স্পষ্ট যে, তিনি ‘ইন্ডিয়া’য় আছেন এবং সরকার গঠিত হলে তিনি তাতে শামিল হবেন।’’

লোকসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে গত বুধবার মমতা বলেছিলেন, “ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দিয়ে, বাইরে থেকে সব রকম সাহায্য করে আমরা সরকার গঠন করে দেব। যাতে বাংলায় আমার মা-বোনেদের ১০০ দিনের কাজে কোনও দিন অসুবিধা না-হয়।’’ মমতার কথার মর্মার্থ ছিল যে, কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গঠন করলে তৃণমূল সেই সরকারে যাবে না। তারা বাইরেই থাকবে। বাইরে থেকেই সরকারকে সমর্থন দেবে। তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার তমলুকের জনসভা থেকে মমতা ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া লেভেলে (সর্বভারতীয় স্তরে) আমরা বিরোধী জোট ইন্ডিয়া তৈরি করেছিলাম। আমরা জোটে থাকব। অনেকে আমায় ভুল বুঝেছে। আমি ওই জোটে আছি। আমিই ওই জোট তৈরি করেছি। আমি জোটে থাকবও। এখানকার সিপিএম নেই। এখানকার কংগ্রেস নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে আমরা জোটে থাকব। ভুল বোঝাবুঝির কোনও জায়গা নেই। ভুল খবর ছড়িয়েছে। এতে বিভ্রান্তি হচ্ছে।’’

বাংলায় বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সর্বভারতীয় স্তরে বিষয়টা যে তা নয়, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। যার অর্থ, মহম্মদ সেলিম-অধীরদের বিষয়ে তৃণমূলের আপত্তি থাকলেও খড়্গে-সীতারাম ইয়েচুরিদের বিষয়ে তা নেই।

মমতার মন্তব্য নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেছিলেন, ‘‘উনি জোট থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। ওঁর কোনও কথায় আমি ভরসা করি না। এখন দেখছেন হাওয়া বদলাচ্ছে। তাই এ দিকে ভিড়তে চাইছেন। বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী দেখলে ও দিকে যাবেন।’’

সেই প্রসঙ্গে অধীরকে কার্যত তিরস্কার করেছেন খড়্গে। তিনি বলেছেন, ‘‘অধীর চৌধুরী ঠিক করার কেউ নন। কী হবে তা ঠিক করার জন্য আমরা রয়েছি। কংগ্রেস পার্টি রয়েছে। হাইকমান্ড রয়েছে।’’ নিজের বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে দিয়ে খড়্গে বলেছেন, ‘‘হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। হয় সেই সিদ্ধান্ত মানতে হবে, না হলে বাইরে চলে যেতে হবে।’’ খড়্গের মন্তব্যের কথা জেনে প্রদেশ কংগ্রেসের অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘একটা লোক কংগ্রেস পার্টিকে বাঁচাতে বাংলায় সব আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ছে। আর কেউ কেউ হাইকমান্ডের নাম করে বাংলা থেকে কংগ্রেসকে তুলে দেওয়ার ইজারা নিয়ে রেখেছেন।’’ স্বয়ং অধীর বলছেন, তিনিও কংগ্রেস হাইকমান্ডেরই লোক। তবে অধীরকে ভর্ৎসনা করে খড়্গের মন্তব্য নিয়ে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের আইটি বাহিনী লেখা শুরু করেছে, ‘‘যে অধীরকে তাঁর সভাপতি রাস্তা দেখে নেওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, সেই অধীরের কথার কোনও মূল্য নেই। আসলে কংগ্রেস হাইকমান্ডও জানে, বাংলায় বিজেপি-বিরোধী একমাত্র শক্তি তৃণমূলই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE