বিধানসভায় স্বপনকান্তি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
সিউড়ির বিদ্রোহী বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল। বুধবার সকালে বিধানসভায় তিনি সিউড়ি পুরসভার দুর্নীতি নিয়ে ধর্নায় বসেন। তার পরই এ দিন দুপুরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হল। তিনি বলেন, “দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে অন্য দলের উসকানিতে যে কাজ তিনি করেছেন তা ঠিক নয়।” যদিও দলের মহাসচিবের এই ঘোষণার আগে স্বপনবাবু সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছিলেন, তাঁকে সাসপেন্ড করলে তিনি কষ্ট পাবেন। বরং বহিষ্কৃত হলেই খুশি হবেন। দলের এই বিধায়কের আনা অভিযোগ নিয়ে তদন্তের পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
কী করেছেন স্বপনবাবু?
দলেরই হাতে থাকা সিউড়ি পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এর আগে মুখ খুলেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, অভিযোগের বিচার না পেলে ‘অনন্যোপায় হয়ে অন্য সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে। এ দিন সরাসরি বিধানসভায় এসে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, লিফলেট নিয়ে ধর্নায় বসেন স্বপনবাবু। নানা দাবিদাওয়ায় স্পিকার বা মন্ত্রীদের ঘরের বাইরে বা বিধানসভা চত্বরে এর আগে বিভিন্ন সময়ে অবস্থান করেছেন বিরোধী বিধায়কেরা। কিন্তু, শাসকদলের বিধায়কের এমন প্রতিবাদে চাঞ্চল্য তৈরি হয় তৃণমূল শিবিরে।
নানা ঘটনায় শাসক দল বিব্রত হতে শুরু করার সময় থেকেই সাম্প্রতিক কালে নানা প্রশ্নে ভিন্ন সুর গেয়ে দলের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক। কড়া অনুসাসন জারি করেও তৃণমূল নেতৃত্ব এই ভিন্ন সুর নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জের জোড়া নির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর অবশ্য বিদ্রোহের প্রবণতা একটু কমার ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু স্বপনবাবু তাঁর এ দিনের ধর্নায় বুঝিয়ে দেন, তিনি কিন্তু সুর নরম করতে নারাজ।
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিধানসভায় ঢোকার মূল ফটকের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে পড়েন ওই বিধায়ক। প্ল্যাকার্ডে লেখা: ‘সিউড়ি শহরের মা-মাটি-মানুষের জন্য পানীয় জল চাই’, ‘বস্তিবাসীদের জন্য মাথার ছাদ চাই’, ‘সিউড়ি পৌরসভার বিরুদ্ধে আর্থিক তছরূপের তদন্ত চাই’। বিধানসভায় ঢোকার মুখে এমন জায়গায় তিনি বসেছিলেন যে, সভায় ঢুকতেই সকলের নজর আটকে যায় তাঁর দিকে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের অসিত মিত্র, মানস ভুঁইয়া—সকলেই তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। সূর্যবাবু রীতিমতো স্বপনবাবুর পাশে জুতো খুলে বসে তাঁর কথা শোনেনও।
কিন্তু স্বপনবাবুর অভিযোগ ঠিক কী?
সম্প্রতি দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন তিনি। তাঁর দাবি, জলপ্রকল্প এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের কয়েক কোটি টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। তাঁকে লেখার আগে দলীয় স্তরে এই কেলেঙ্কারির কথা জানিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি বলে তা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন স্বপনবাবু। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি-কে (সুডা) অন্তত পাঁচটি চিঠি লিখেছেন। কিন্তু, একটি চিঠিরও জবাব পাননি। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সেই সময় শেষ বারের মতো দলকে সক্রিয় হতে অনুরোধ করেন। তা না হলে তাঁকে যে ‘অনন্যোপায় হয়ে অন্য সিদ্ধান্ত’ নিতে হবে, সে কথাও জানিয়ে দেন তিনি। কিন্তু দল বা সরকার এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁর অভিযোগ।
এ দিন সকালে তিনি যখন ধর্নায় বসেছিলেন, তখন স্বপনবাবুর গাড়ির চালক মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা বিধায়কের চিঠির প্রতিলিপি বিলি করছিলেন। সভায় আসা জনপ্রতিনিধিদের সেই প্রতিলিপি দিচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় বিধানসভার মার্শাল এসে তাঁর হাত থেকে ওই লিফলেটগুলি কেড়ে নেন। এমনকী, তাঁকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে স্বপনবাবুর অভিযোগ। তিনি বলেন, “স্পিকারের এই ব্যবহারে আমি ক্ষুব্ধ। তিনি মার্শালকে দিয়ে এটা করতে পারেন না। আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” পরে তাঁকে স্পিকার সভার ভেতরে ডেকে পাঠালেও তিনি সেই ডাক প্রত্যাখান করেন। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও তাঁকে ডাকতে আসেন। কিন্তু, বরফ তাতে গলেনি।
এই ঘটনার প্রতিবাদ করে বিজেপি নেতা তথা দলের একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “ভবিষ্যতে এমন বেনজির ঘটনা আরও দেখা যাবে। ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবাহী। এমন ঘটনা গণতন্ত্রে কাম্য নয়। সকলের প্রতিবাদের পরিসর থাকা উচিত।” সূর্যবাবু বলেন, “এই বিষয়টি সামগ্রিক ভাবে বিধানসভার সদস্যদের অধিকারের প্রশ্ন। মার্শালের এমন অধিকার নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy