অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি: রয়টার্স।
আপাত ভাবে সব যেন একই রকম!
সেই শনিবার। সেই রামলীলা ময়দান। সেই ভিড়। সেই আম আদমি পার্টি (আপ)। সেই আপ-প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। সেই উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙ্গ। সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এবং সেই স্বচ্ছ প্রশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত দিল্লি গড়ার আহ্বান। শুধু মাঝখানে কেটে গিয়েছে একটি বছর।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৩, শনিবার, রামলীলা ময়দানে দিল্লির সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আপ-প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শনিবার অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেখানে শপথ নিলেন সেই অরবিন্দই। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন আরও ছ’জন। যাঁদের মধ্যে দু’জন, মণীশ সিসৌদিয়া এবং সতেন্দ্র জৈন আগের বারও কেজরীবালের সঙ্গে এখানেই শপথ নিয়েছিলেন।
আপাত ভাবে সব যেন একই রকম!
কিন্তু, গত এক বছরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। অরবিন্দ নিজেই যে অনেকটা পাল্টেছেন, এ দিন রামলীলার ভাষণে তা স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী থেকে কিরণ বেদী বা অজয় মাকেনকে নিয়ে দিল্লির উন্নয়নে সামিল হওয়ার কথা বলেছেন, তাতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, আগের থেকে অনেক বেশি পরিণত হয়েছেন কেজরীবাল।
তাঁদের মতে, এক বছর আগের অরবিন্দ সব কিছু নিয়েই বড় তাড়াহুড়ো করতেন। শপথ নেওয়ার পর পরই তিনি যে ভাবে ব্যাট চালিয়ে খেলছিলেন তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। এমনকী, তাড়াহুড়োর চোটে মুখ্যমন্ত্রিত্বও ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। রাজনীতির কেরিয়ারে এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু সেই অরবিন্দই এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, ব্যাট চালিয়ে তিনি আর খেলবেন না। সকলকে সঙ্গে নিয়ে ধীরেসুস্থে পাঁচ বছর ধরে দিল্লির উন্নয়নে মগ্ন থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ঘণ্টার নিরিখে উন্নয়নকে মাপা ঠিক নয়। আপাতত দিল্লির বাইরের কোনও নির্বাচনে তাঁর দল যে মাথা গলাবে না এ দিন সে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
তবে, গত এক বছরে আরও পরিবর্তন হয়েছে।
এক বছর আগে এই রামলীলায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যখন শপথ নিয়েছিলেন তখন তাঁর ঝুলিতে ছিল মাত্র ২৮টি আসন। এ দিন যে কেজরীবাল শপথ নিলেন তাঁর দলের ভাণ্ডারে ৬৭ জন বিধায়ক। ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভার প্রায় ৯৬ শতাংশ আসনই তাঁর দখলে।
সে বার যখন ২৮টি আসন জিতেছিল আপ, কেন্দ্রে তখন ক্ষমতায় ইউপিএ সরকার। কংগ্রেস সেই জোট সরকারের মুখ্য চালিকাশক্তি। দিল্লি বিধানসভায় তারা ৮টি আসন পেয়ে আপ-কে বাইরে থেকে সরকার গড়তে সমর্থন করে। কিন্তু এখন কেন্দ্রে বিজেপি সরকার। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গত মে মাসে কেন্দ্রে সরকার তৈরি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। লোকসভার পর যে চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, বিজেপি সব জায়গাতেই জয়ধ্বজা উড়িয়েছে। কিন্তু বিজেপি-র সেই অশ্বমেধের ঘোড়া দিল্লিতে এসে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল অরবিন্দের আপ-এর কাছে। তিনটি আসন পেয়েই হাল ছেড়ে দিতে হল তাদের। আর কংগ্রেস তো একটি আসনও পায়নি। কাজেই গত এক বছরে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লিতে অরবিন্দ নিজের দলকে কী ভাবে সাধারণের মধ্যে চারিয়ে দিয়েছেন তা সহজেই অনুমেয়!
পাশাপাশি গত নির্বাচনে আপ-এর উত্থানকে ভাল চোখে দেখেনি অন্য আঞ্চলিক দলগুলি। তাদের বেশির ভাগই সেই সময়ে নাক সিঁটকেছিল। কিন্তু, এ বার নির্বাচনের আগে থেকেই আপ-এর জন্য শুভকামনা জানায় তারা। বাদ যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলও। আর রাজধানীতে ঝাড়ু-ঝড়ের পর তো আপ-এর জয়কে কার্যত নিজেদের জয় হিসেবেই দেখছে এই দলগুলি। বিজেপি-র ‘দাদাগিরি’ থামিয়ে দেওয়ার জন্য অরবিন্দকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছে তারা। মমতাও তার বাইরে ছিলেন না। আঞ্চলিক দলগুলির কাছে এই এক বছরে অরবিন্দ হয়ে উঠেছেন নয়নের মণি। কারণ তিনি পেরেছেন।
কেজরীবাল যদিও এই ধামাকায় নেই। তিনি বুঝেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে সঙ্গে না নিয়ে চললে উন্নয়নের বেলুন বেশি উঁচুতে ওড়ানো যাবে না। তাই সিপিএম হোক বা তৃণমূল, কাউকেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাননি। কিন্তু, জেতার পর পরই বেঙ্কাইয়া থেকে রাজনাথ, এমনকী, মোদীকেও নিমন্ত্রণ করে এসেছেন তিনি। আর সে কারণেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বদলেছেন কেজরীবাল। শুধু রাজনীতি নয়, বদলেছেন কৌশলও।
ঝাড়ুর জোরে ঝড় তুলেছে আপ। কিন্তু সেই ঝাড়ুর গোড়া কতটা শক্ত করে বাঁধা থাকবে, আগামী পাঁচ বছরে তারও পরীক্ষা দিতে হবে কেজরীবালকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy