চিকিৎসাক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য সংগৃহীত ছবি
রাতবিরেতে অনেক সময়ই চিকিৎসক না মিললে পেট ব্যথা বা মাথা ধরার মতো নানা অসুখের চিকিৎসা হয়ে যায় ধারে কাছে কোনও ওষুধের দোকান খুঁজে পেলে। ওষুধের দোকানে থাকা মানুষটিই তখন ধন্বন্তরির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধটি দিয়ে সাহায্য করেন। সাধারণ ভাবে এই মানুষটিকে আমরা ‘ওষুধ বিক্রেতা’ বলেই জানি। তবে, এই ভূমিকায় থাকা মানুষগুলিকে ফার্মাসিস্টও বলা হয়। ফার্মাসি বিষয়টি নিয়ে ডিগ্রি কোর্স পাশ করতে পারলেই এই পেশায় আসা যায়। শুধু এই পেশা নয়, বর্তমানে ফার্মাসি পড়ে অন্যান্য অনেক পেশাতেই যাওয়া সম্ভব।
ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা
চিকিৎসকেরা রোগীদের ওষুধ দেওয়ার আগেই, সেই ওষুধগুলিকে নানা রকম যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ল্যাবরেটরিতে ওষুধগুলির ডোজ ও বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই সেই ওষুধগুলি চিকিৎসকেরা রোগীদের দিয়ে থাকেন। এর পরেও ওষুধের নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে এবং শেষমেশ তা বাজারে ছাড়া হয় সকলের ব্যবহারের জন্য। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক সময়ই ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা কিছুটা আড়ালে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
নিয়ন্ত্রণ— ফার্মাসিস্টরা ওষুধের নিয়ন্ত্রণের দিকটি নজরে রাখেন চিকিত্সকদের যথোপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের অভাব থাকায় অনেক সময় ফার্মাসিস্টরাই রোগীদের ওষুধ দিয়ে থাকেন।
সমন্বয়— টেকনিশিয়ানদের মধ্যে সমন্বয় করে কী ভাবে কাজ করা যায়, সে ক্ষেত্রেও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনেক। কী ভাবে প্রেসক্রিপশন দেখতে হয়, খরচপাতির হিসেব রাখতে হয়, ব্র্যান্ডিং করতে হয়, এ সবও ফার্মাসিস্টদের জানার প্রয়োজন রয়েছে।
নিজেদের ক্ষেত্র সম্পর্কে সচেতনতা— ফার্মাসিস্টদের ফার্মাসি স্টাফ, গ্র্যাজুয়েট, শিক্ষানবিশ, বহিরাগত ও মেডিক্যাল প্রফেশনালদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হয, তাই চিকিত্সাক্ষেত্র সম্পর্কে তাঁদের সম্যক জ্ঞান থাকা বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয়।
পর্যবেক্ষণ- ফার্মাসিস্টদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের ওষুধ সংক্রান্ত আইন, ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট প্রশাসনের সমস্ত আইন ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখা হয়।
রোগীদের সেবা— রোগীদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীদের ওষুধ দেওয়া ইত্যাদি কাজও ফার্মাসিস্টদের করতে হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
কোর্সটি পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টির ব্যাপারে একটা ধারণা থাকা দরকার। এ ছাড়াও, তাঁদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা ও অঙ্ক নিয়ে মোট ৫০ শতাংশ নম্বর বা সমতুল সিজিপিএ নম্বর পেলেই শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ের ব্যাচেলর কোর্সটিতে আবেদন জানাতে পারেন।
এন্ট্রান্স পরীক্ষা
শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে শিক্ষার্থীদের নানা রকম এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে হয় এই ব্যাচেলর কোর্সটিতে ভর্তি হতে গেলে। এন্ট্রাস পরীক্ষাগুলি হল- নিপার জেইই,ইউপিএসইই, জিপাট, নিট, বিটস্যাট এবং এমএইচটি-সিইটি।
ভর্তি প্রক্রিয়া
দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর শিক্ষার্থীদের জাতীয় ও রাজ্যস্তরের বিভিন্ন এন্ট্রাস পরীক্ষা দিতে হয় বি.ফার্মা কোর্সে ভর্তি হতে গেলে। ফার্মাসি পড়ার জন্য জাতীয় স্তরের এন্ট্রান্স পরীক্ষাটি হল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসি অ্যাপটিটিউড টেস্ট (জিপ্যাট)। এ ছাড়াও, পরীক্ষার্থীরা রাজ্যস্তরেও নানা এন্ট্রাস পরীক্ষা দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের ছাত্রছাত্রীদের ফার্মাসি পড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট পরীক্ষাটি দিতে হয়।
এ ছাড়াও, দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও তাদের নিজস্ব এন্ট্রাস পরীক্ষার আয়োজন করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যে এন্ট্রাস পরীক্ষাগুলি নেয়, সেগুলির কয়েকটি হল— বিভিপি সিইটি, আইপিইউ সিইটি, এমএইচটি সিইটি ও ইত্যাদি।
ফার্মাসির কী কী কোর্স হয় :
ফার্মাসিতে গ্র্যাজুয়েশনের যে সব জনপ্রিয় কোর্স আছে, সেগুলি হল— ব্যাচেলর ইন ফার্মাসি, বিএসসি ফার্মাসি, বিএসসি ফার্মাকোলজি। মাস্টার্সের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় কোর্সের নামগুলি হল— মাস্টার্স ইন ফার্মাসি, এমএসসি ইন ফার্মাসি, এসএসসি ইন ফার্মাকোলজি। ফার্মাসিস্ট হওয়ার জন্য গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের পরে শিক্ষার্থীদের পিএইচডি ডিগ্রি কোর্সটিও পড়তে হয়।
ফার্মাসি-র কোর্সে কী পড়ানো হয়?
ফার্মাসির ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্সে বিয়োমেডিক্যাল সাইন্স ও চিকিত্সাক্ষেত্রে এর ভূমিকা সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়। এ ছাড়া, মানুষের অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, ওষুধ তৈরি, ওষুধ পরীক্ষা, রসায়ন, ফার্মাকোলজি ইত্যাদি বিষয়ও পড়ানো হয়।
কোর্স কাঠামো
ফার্মাসির ব্যাচেলর ডিগ্রি কোর্সটি চার বছরে আটটি সেমিস্টারে ভাগ করে পড়ানো হয়। ব্যাবহারিক ও তত্ত্বভিত্তিক নানা বিষয় এই কোর্সে পড়ানো হয়। মাস্টার্স কোর্সটি দু'বছরের হয় এবং পিএইচডি কোর্সটি পাঁচ বছরের হয়।
চাকরির ধরণ ও চাকরি ক্ষেত্র
ফার্মাসি পড়ে শিক্ষার্থীরা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পক্ষেত্র, হাসপাতালের ফার্মাসি, ওষুধের দোকানে, গবেষণাক্ষেত্রে, উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে, পাথলোজিকাল ল্যাবে, ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলিতে চাকরি পেতে পারেন। যে পদগুলিতে চাকরি করতে পারেন সেগুলি হল— ফার্মাসিস্ট, ড্রাগ ইন্সপেক্টর, ড্র্যাগ থেরাপিস্ট, বায়োকেমিস্ট, বায়োফিজিসিস্ট, গবেষক, মেডিক্যাল সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ,রেগুলেটরি অফিসার ও অন্যান্য। এই চাকরিগুলি আংশিক বা পূর্ণ সময়ের— দুই ধরনেরই হয়।
বেতন কাঠামো
ফার্মাসি পড়ার পরে যে সব চাকরি পাওয়া যায়, তা থেকে বছরে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
ফার্মাসি পড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কলেজ:
১. যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
৩. এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাস
৪.গুরু নানক ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
৫. ব্রেনওয়ার ইউনিভার্সিটি
তাই সবশেষে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, এই কোর্সটি পড়ার ইচ্ছে থাকলে এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতি ঝোঁক থাকলে, সমস্ত তথ্য জেনে নিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশুনো করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy