Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nutritionist

পুষ্টিবিদ্যাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য কী কী প্রয়োজনীয়? জেনে নিন বিস্তারিত

স্ট্রেস যখন দৈনন্দিন জীবনে নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন শরীর সুস্থ রাখাই একটি চ্যালেঞ্জ। এখানেই এক জন নিউট্রিশনিস্ট বা পুষ্টিবিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পুষ্টিবিদরা সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন।

পুষ্টিবিদরা সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন। সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ২২:০০
Share: Save:

আধুনিক জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় আমাদের প্রায়শই নানা রকম স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। স্ট্রেস যখন দৈনন্দিন জীবনে নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন শরীর সুস্থ রাখাই একটি চ্যালেঞ্জ। এখানেই এক জন নিউট্রিশনিস্ট বা পুষ্টিবিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পুষ্টিবিদেরা তাঁদের যোগ্যতা ও দক্ষতার মাধ্যমে সকলকে স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবারের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারেও সচেতন করেন। অসুস্থতা যাতে গ্রাস না করতে পারে, তার জন্যেও পুষ্টিবিদরা সকলকে নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন।

বর্তমানে ডায়েটিক্স রেগুলেটরি বডি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা দেশে ৮০০০-এর বেশি পুষ্টিবিদ রয়েছেন। যদিও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রককে তাদের গবেষণার যে রিপোর্টটি জমা দিয়েছে, তাতে দেশে প্রায় ২.৩৬ লক্ষ পুষ্টিবিদের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে।

পুষ্টিবিদদের ভূমিকা :

১. পুষ্টিবিদরা সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেন।

২.পুষ্টিবিদরা ওজন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়ে নানা পরামর্শ দেন।

৩. পুষ্টিবিদরা সকলকে সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ডায়েট প্ল্যানও বানিয়ে দে্ন।

৪. বিভিন্ন বয়স ও ধরনের মানুষের ক্ষেত্রে কী ডায়েট মেনে চলা উচিত, কী ভাবে জীবনযাপন করা উচিত, সে বিষয়েও পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

এক জন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ান হতে গেলে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। সেগুলি হল--

শিক্ষাগত যোগ্যতা :

পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে পড়তে হলে শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও জীববিদ্যা-- এই বিষয়গুলি নিয়ে একটি স্বীকৃত বোর্ড থেকে পাশ করতে হবে। যে হেতু, রসায়নবিজ্ঞান পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে পেশা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি প্রয়োজনীয় বিষয়, স্নাতকে ভর্তি হতে গেলে অনেক কলেজেই দ্বাদশে রসায়নবিজ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। তবে অন্য অনেক কলেজে আবার দ্বাদশে বায়োসায়েন্স/ বায়োলজি/ পদার্থবিদ্যা এবং পুষ্টিবিদ্যা থাকতে হয়। সমস্ত বিষয় নিয়ে সর্বমোট ৫৫ শতাংশ নম্বর দ্বাদশে থাকলে তবেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কলেজে স্নাতকে পুষ্টিবিদ্যা পড়ার জন্য আবেদন জানাতে পারেন।

এন্ট্রান্স পরীক্ষা :

এই ন্যূনতম যোগ্যতা ছাড়াও, দেশের বিভিন্ন কলেজে কিছু ক্ষেত্রে এন্ট্রান্স পরীক্ষাও নেওয়া হয়। যেমন-এইমস-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষা,জেএনইউ-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষা, দিল্লি ইউনিভার্সিটি-এর এন্ট্রান্স পরীক্ষা এ। এ ছাড়া জাতীয় স্তরে কোনও একটি নির্দিষ্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা এই বিষয়ের ক্ষেত্রে নেওয়া হয় না।

কোর্স :

পুষ্টিবিদ্যার স্নাতক কোর্সটি ৩ বছরের। এর পর শিক্ষার্থীরা ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করে স্নাতোকত্তরেও আবেদন জানাতে পারেন। মাস্টার্সের ২ বছরের কোর্সের পরে শিক্ষার্থীরা ৫ বছরের পিএইচডি ডিগ্রির কোর্সটিও করতে পারেন। এ ছাড়াও, পুষ্টিবিদ্যায় ১ বছরের পিজি ডিপ্লোমা কোর্সও করতে পারেন শিক্ষার্থীরা।

বিষয় :

পুষ্টিবিদ্যার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কোর্সে খাদ্যবিজ্ঞান, খাদ্যের রাসায়নিক গঠন, মানব শরীরবিদ্যা, খাদ্যের মাইক্রোবায়োলজি ইত্যাদি বিষয় পড়তে হয়।

স্পেশালাইজেশন :

পুষ্টিবিদ্যা পড়ে নিউট্রিশন ও ডায়েটিক্স, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন, ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন, পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, স্পোর্টস নিউট্রিশন, পেডিয়াট্রিক্স নিউট্রিশন-এই সমস্ত বিষয়গুলিতে বিশেষজ্ঞ হওয়া যায়।

নিউট্রিশনিস্টের রকমফের :

ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট - ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টরা সাধারণত চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করে রোগীদের পুষ্টির বিষয়টির উপর নজর রাখেন, যাতে তাঁদের দ্রুত রোগমুক্তি ঘটে।

পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশনিস্ট- পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশনিস্টরা শিশুদের রোগমুক্তি ও তাদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সুষম খাদ্যাভাসের দিকটিতে নজর দেন।

স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট- স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্টরা খেলোয়াড়দের শরীর সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে কাজ করেন।

পাবলিক হেলথ নিউট্রিশনিস্ট- পাবলিক হেলথ নিউট্রিশনিস্টরা কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিমানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে না ভেবে সামগ্রিক ভাবে জনসাধারণের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিয়ে কি করে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করেন।

চাকরি ক্ষেত্র :

পুষ্টিবিদ্যা পড়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, বহুজাতিক সংস্থা, স্কুল, নিজস্ব ক্লিনিক, ফিটনেস সেন্টার,ডায়াবেটিক ক্লিনিক ইত্যাদি জায়গায় চাকরি পাওয়া যায়।

বেতন কাঠামো :

একজন পুষ্টিবিদকেরিয়ারের শুরুতে আনুমানিক মাসিক ২৫০০০-৩০০০০ টাকা বেতন পেতে পারেন। এ ছাড়া, পুষ্টিবিদদের বার্ষিক আয় ন্যূনতম ২,৫০ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে।

পুষ্টিবিদ্যা পড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ্যযোগ্য কলেজগুলি হল--

১. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

২. সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়

৩. অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়

৪. ব্রেনওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়

৫. জিডি বিড়লা ইনস্টিটিউট

বর্তমানে পুষ্টিবিদ্যার চাহিদা বাজারে বিপুল পরিমাণে রয়েছে। তাই চাকরির সম্ভাবনাও প্রচুর। যদি কেউ এই বিষয়টি পছন্দ করেন, তা হলে এই বিষয়টিকে পেশা হিসেবে নিশ্চিত ভাবে বেছে নিতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy