বৈষম্য মুক্ত ক্যাম্পাসের লক্ষ্যে নতুন খসড়া বিধি তৈরি করল বিশ্ববিদ্যালয়য় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিকে খসড়া বিধি নিয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। মূলত, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তফসিলি জাতি বা উপজাতির যে সমস্ত পড়ুয়া রয়েছেন, তাঁরা যাতে কোনও রকম বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতেই এই খসড়া বিধি তৈরি করা হয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভজিৎ নস্কর বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বৈষম্যমুক্ত করতে অনেক সময়ে ব্যর্থ হয়েছে ইউজিসি। অভিযোগ উঠেছে শীর্ষ আদালতেও। তাই এ বার কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছে ইউজিসি।’’
উল্লেখ্য, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে দেশের দু’টি পৃথক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ছাত্র ও এক ছাত্রী বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। যার জেরে পরবর্তীতে ওই দুই পড়ুয়া আত্মহত্যা করেন বলেও জানা যায়। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহারাষ্ট্রের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড বিওয়াইএল নায়ার চ্যারিটেবল হসপিটালে ওই ঘটনা ঘটেছিল। তার পরেই দুই পড়ুয়ার পরিবার ২০১৯-এ ইউজিসি-র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে সেই মামলার রায় উল্লেখ করা হয়। সেখানেই বলা হয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিকে ‘ইক্যুয়াল অপরচুনিটি সেল’ গঠন করতে হবে। পাশাপাশি, তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং মহিলারা যাতে সুরক্ষিত থাকেন, কোনও ধরনের বৈষম্যের শিকার না হন, তা-ও সুনিশ্চিত করতে হবে। এই রায়ের পরেই ইউজিসি-র তরফে ‘প্রোমোশন অফ ইক্যুইটি ইন হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউশনস রেগুলেশনস ২০২৫’ শীর্ষক এই খসড়া বিধি প্রকাশ হয়। ইউজিসি সচিব মণীশ জোশী ৩০ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানাতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিকে।
বিধি অনুযায়ী বলা হয়েছে, ইউজিসি-র আওতায় থাকা প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ইক্যুয়াল অপরচুনিটি সেন্টার খুলতে হবে। ওই কেন্দ্রগুলি লক্ষ্য রাখবে কোনও প্রতিষ্ঠানে কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ হচ্ছে কি না। যদি কোনও ঘটনা ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে। এই সেন্টারগুলির চেয়ারম্যান হবেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য বা অধ্যক্ষ। চার জন সিনিয়র ফ্যাকাল্টি সদস্য থাকতে হবে, যাঁরা তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের হবেন। দু’জন থাকবেন ‘সিভিল সোসাইটি’-র প্রতিনিধি হিসেবে। এ ছাড়া, দু’জন ছাত্র-ছাত্রী ও এক জন সেন্টার কোঅর্ডিনেটর থাকবেন।
প্রসঙ্গত, শিক্ষামহলের একাংশের মতে, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতিগত বৈষম্য এড়াতে ২০১২ সালে কড়া বিধি আনলেও এই বৈষম্য পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। মূলত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের উপরে ভিত্তি করে যে কোনও ধরনের বৈষম্য প্রতিরোধ এবং পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের জন্য নিরাপদ, বৈষম্যহীন শিক্ষার পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যেই ইউজিসি-র এই উদ্যোগ।