একেই বলে হ্যাটট্রিক! মাধ্যমিকে প্রথম, জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জ়ামিনেশন (জেইই) মেন-এর প্রথম সেশনে প্রথম, এ বার দ্বিতীয় সেশনেও প্রথম স্থান দখল করে নিল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেয়ে। শুক্রবার প্রকাশিত জেইই মেন-এর ফলাফলে দেখা গেল রাজ্য থেকে যুগ্ম ভাবে প্রথম এই কৃতি। শুধু তা-ই নয়, সর্বভারতীয় স্তরের এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যে ২৪ জনের এনটিএ স্কোর ১০০, সেই তালিকাতেও দু’জন মেয়ের মধ্যে অন্যতম দেবদত্তা মাঝি।
কাটোয়ার মেয়ে দেবদত্তা বরাবরই মেধাবী। দুর্গাদাসী চৌধুরী গার্লস হাই স্কুলের এই পড়ুয়ার ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ। ২০২৩ সালের মাধ্যমিকে ৭০০ নম্বরের পরীক্ষায় তিনি পেয়েছিলেন ৬৯৭ নম্বর। শতাংশের নিরিখে ৯৯.৫৭। জেইই মেন-এর প্রথম সেশনে কয়েক শতাংশের জন্য এনটিএ স্কোর ১০০ ছোঁয়নি। এনটিএ স্কোর ছিল ৯৯.৯৯৯২১। তবু পশ্চিমবঙ্গ থেকে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছিলেন দেবদত্তা। এ বার আর কোনও ভুলচুক নেই! জেইই মেন-এর দ্বিতীয় পর্বে ১০০-এ ১০০-ই এনটিএ স্কোর তাঁর।
দেবদত্তার মা তাঁরই স্কুলের শিক্ষিকা। বাবাও আসানসোলের একটি কলেজের শিক্ষক। শিক্ষার আবহে বেড়ে ওঠা মেয়ের অভিভাবক স্বভাবতই খুশি মেয়ের এই সাফল্যে। তবে এখনই উচ্ছ্বসিত হতে নারাজ। তাঁর মা বলেছেন, “পড়াশোনার প্রতি ওর বরাবরই ভীষণ আগ্রহ। মাধ্যমিকের পরদিন থেকেই ও উচ্চ মাধ্যমিক এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি শুরু করে। মেয়ের এই ফলাফলে আমরা খুব খুশি। তবে সামনেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এবং জেইই অ্যাডভান্সড পরীক্ষা। তাই এখন সেই নিয়েই ব্যস্ত মেয়ে।”
তিনি আরও জানান, দেবদত্তাকে কখনই পড়ার জন্য আলাদা করে বলতে হয়নি। প্রতি দিন ১০-১২ ঘণ্টার ধরাবাঁধা রুটিনেই চলত পড়াশোনা। নিজের প্রচেষ্টাতেই ওর এই সাফল্য। বাড়িতে থেকে অনলাইনে প্রস্তুতি নিত দেবদত্তা। তবে প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছেন দু’টি টিউশন সংস্থার শিক্ষকেরা। এখন জেইই অ্যাডভান্সড-এ ভাল ফল করে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-এ গবেষণা করতে চায় ও। তাই আপাতত এই পরীক্ষাই পাখির চোখ।
তাই বলে শুধু বইখাতার দুনিয়ায় মুখ গুঁজে দিন কাটে? দেবদত্তার মায়ের কথায়, “একদমই না। মাঝে মাঝে বিরতি নিয়ে ও আমার সঙ্গে গল্প করে। প্রকৃতি-পরিবেশ ভালবাসে। তাই কখনও চারদেওয়ালে টিকটিকির গতিবিধি নজর কাড়ে। আবার কখনও পাড়ায় কুকুর-বেড়াল-পাখি দেখে অবসর যাপন করে ও।”
উল্লেখ্য, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন আইআইটি, এনআইটি-সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিটেক, বিআর্ক, বিপ্ল্যানিং ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জ়াম (জেইই) মেন-এর আয়োজন করা হয়। দু’টি পর্বে জেইই মেন-এর আয়োজন করে এনটিএ।
এ বছর জানুয়ারিতে প্রথম পর্বের পরে এপ্রিলে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এ বছর দ্বিতীয় সেশনের পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৯,৯২,৩৫০ জন। যে ২৪ জনের এনটিএ স্কোর ১০০, তার মধ্যে সাত জনই রাজস্থানের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই তালিকায় নাম রয়েছে অর্চিষ্মান নন্দী এবং দেবদত্তা মাঝির।