কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি করল সরকার। ২০২৫-’২৬ অর্থবর্ষে উচ্চশিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং ‘ইনক্লুসিভিটি’-র উপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিক ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ডিজিটাইজ় করার বিষয়ে। এ ছাড়া, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান এবং ঐতিহ্য সম্পর্কিত সমস্ত পুঁথি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং গবেষণার উপরও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমার বলেন, "বাজেটে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির মূল ভাবনা এবং ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতের কান্ডারি গড়ে তুলতে নতুন প্রজন্মকে নানা ভাবে সাহায্য করবে।"
এ বছরের বাজেটে ২০২৪-'২৫ অর্থবর্ষের থেকে দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য বরাদ্দ ৪৬, ৪৮২. ৩৫ কোটি থেকে ৫০,০৭৭.৯৫ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ, মোট ৭.৭৪ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত এক দিকে দেশে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করবে, অন্য দিকে, দেশের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদেরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করবে বলেও আশা ইউজিসি-র।
আরও পড়ুন:
বাজেটে নয়া প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমটির নাম ‘ভারতীয় ভাষা পুস্তক স্কিম’। এই প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় সমস্ত পাঠ্যপুস্তক ডিজিটাইজ় করা হবে। এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন পড়ুয়ারা। দ্বিতীয়টি, 'জ্ঞান ভারতম মিশন' নামক একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার, জাদুঘরের সঙ্গে একযোগে দেশজগপ্রাচীন ঐতিহ্য-সম্পর্কিত সমস্ত নানা পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে তা ডিজিটালি সংরক্ষণ করা হবে। ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ সংরক্ষণের জন্য তাই বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ১০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গবেষকদের দেশের নিজস্ব ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, ঐতিহ্য-সম্পর্কিতই বিষয়ে গবেষণার কাজ করতে উৎসাহী হবেই আশা। বাজেটে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউজিসি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের জন্য যে ২২টি আঞ্চলিক ভাষায় ২২ হাজার বই প্রকাশের উদ্যোগ আগেই নিয়েছিল, সে ক্ষেত্রে আরও অনেকটা সুবিধা হবে বলেও আশা চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমারের।
দেশের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্যও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে। গত অর্থবর্ষে যা ১৫,৫৩৮.২৩ কোটি টাকা ছিল, তার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১৬,১৪৬.১১ কোটি টাকা। এর ফলে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, নয়া গবেষণা প্রকল্প চালু, পড়ুয়াদের উন্নতমানের শিক্ষা দেওয়ার কাজ আরও বেশি করতে পারবে বলে জানিয়েছে ইউজিসি। পাশাপাশি, কেন্দ্রের অর্থপুষ্ট প্রকল্পগুলির জন্যও বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৮১৫ কোটি করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর ঊষা এবং রুসা প্রকল্পের মাধ্যমে পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা ভাবে সাহায্য করবে।
একই সঙ্গে, বাজেটে পড়ুয়াদের জন্য আর্থিক অনুদানের পরিমাণ ৬৮ শতাংশেরও বেশি বাড়িয়ে ২১৬০ কোটি টাকা করা হয়েছে, যাতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও আর্থিক বাধার সম্মুখীন না হন পড়ুয়ারা।
বাজেটে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাতীয় স্তরে পাঁচটি ন্যাশনাল সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর স্কিলিং গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধার ব্যবহার বাড়ানোর জন্যই সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ফর এ আই ইন এডুকেশন গড়ে তোলা হবে। এর জন্য বরাদ্দ করে হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে পাঁচটি আইআইটির পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং আইআইটিগুলিতে পাঁচ হাজার আসন বৃদ্ধি এবং অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট-এর জন্য কেন্দ্রের তরফে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৬ কোটি টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া, পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পিএম রিসার্চ ফেলোশিপ স্কিমে দশ হাজার স্কলারশিপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যাতে বিভিন্ন আইআইটি এবং আইআইএসসি-র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিক্ষেত্র বিষয়ে আরও উন্নত মানের গবেষণার কাজ বৃদ্ধি পায়, সেই উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ বলে জানানো হয়েছে বাজেটে।
আরও পড়ুন:
একই সঙ্গে পড়ুয়াদের মধ্যে যাতে কম বয়স থেকেই বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাভাবনা এবং গবেষণার প্রসার ঘটানো যায়, তার জন্য দেশে ৫০ হাজার 'অটল টিঙ্কারিং ল্যাব' গড়ে তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে বাজেটে।