প্রতীকী চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে ‘ক্লাস্টার মডেল’-এ শুধু আশপাশের স্কুল নয়, কলেজের শিক্ষকদেরও ক্লাস করানোর ভাবনা। শিক্ষা সংসদের এই উদ্যোগকে সবুজ সঙ্কেত দিল শিক্ষা দফতর।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “ছাত্র এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার স্বার্থে ‘ক্লাস্টার মডেলে’ উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত স্কুলের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে, তারা আশপাশের স্কুল বা কলেজ থেকে শিক্ষক নিতে পারেন। তবে স্থায়ী শিক্ষক হতে হবে।”
এই ‘ক্লাস্টার’ পদ্ধতির কথা রাজ্য শিক্ষানীতিতে উল্লেখ করা রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে বলে শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। বিশেষত বিজ্ঞান বিষয়গুলির পড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকের ব্যাপক অভাব। সে ক্ষেত্রে কলেজের শিক্ষকরা যাতে স্কুলে এসে পড়াতে পারেন তাই এই উদ্যোগ। কলেজের শিক্ষকরা এসে পড়ানোকে ভার্টিক্যাল এবং আশপাশের স্কুল শিক্ষকরা এসে পড়ান যেটাকে হরাইজন্টাল পদ্ধতি বলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল শিক্ষা দফতরের কাছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল- যদি কোনও স্কুলে নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ের শিক্ষক না থাকেন, তাহলে আশপাশের কোনও স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস করাতে হবে। প্রয়োজনে বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়া একত্রিত হয়ে কাছাকাছি একটি বড় স্কুলে একত্রিত হবে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সেখানে এসে পড়াতে পারবেন। আর যদি ওই শিক্ষক চান, এলাকাভিত্তিক প্রত্যেকটি স্কুলে গিয়েও পড়াতে পারেন। একই পদ্ধতিতে কলেজ থেকেও শিক্ষক নিতে পারবে স্কুলগুলি। এর ফলে এক দিকে যেমন স্কুলগুলিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব মিটবে, অন্য দিকে স্কুলগুলি চাহিদা অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব বিষয়ে পঠনপাঠনও চালু করতে পারবে। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতি চালু করতে চায় শিক্ষা সংসদ।
এ প্রসঙ্গে, 'কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস'-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “ভাল উদ্যোগ। কিন্তু পার্শ্ববর্তী স্কুলের শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে সহায়তা পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার, আর কলেজ শিক্ষকদের সাহায্য কতটা পাওয়া যাবে, এই বিষয়ে আমরা সন্দিহান।”
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকের ঘাটতি এতটাই বেশি রয়েছে যে, বহু স্কুল গুলিকে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকদের উপর ভরসা করতে হচ্ছে। আবার বেশ কিছু স্কুল নিজেদের টাকা দিয়ে পার্টটাইম টিচার এনে বিষয় ভিত্তিক ক্লাস করিয়ে থাকে।
এ বছর থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে চালু হচ্ছে সেমেস্টার পদ্ধতি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বছরে দু’টি করে মোট চারটি সেমেস্টারে ক্লাস হবে। নতুন পদ্ধতিতে পড়ানোর ক্ষেত্রে যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় শিক্ষক থাকেন, তাই এই উদ্যোগ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের।
যোধপুর পার্ক গার্লস হাই স্কুলের সহ প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা চৌধুরী বলেন, “বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ঘাটতি মেটাতে আশপাশের স্কুলের শিক্ষকদের আনার প্রয়োজন রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বহু নতুন বিষয় এ বছর থেকে পড়ানো শুরু হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয় যদি কলেজের শিক্ষকেরা স্কুলের পড়ুয়াদের পড়ান, তাতে অনেকটা সুবিধাও হবে।”
শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে একাধিক স্কুলের পক্ষ থেকে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক সঙ্কটের কথা জানানো হয়েছে। সেই সমস্ত স্কুলগুলিকে পঠনপাঠনের সমস্যা তৈরি হলে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিযুক্ত করে পড়াশোনা চালানোর কথা ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে।
এক দিকে যেমন দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে, পাশাপাশি ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষকপদ নিয়ে জটিলতা হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে আরও। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একটি বিষয় পড়ানোর জন্য এক জন বা দু’জন করে শিক্ষক থাকেন। এক জন শিক্ষকের বিষয় অন্য জন পড়াতে পারেন না। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকলে অঙ্কের শিক্ষক কাজ চালিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে রসায়নের ক্লাস পদার্থবিদ্যার শিক্ষক নিতে পারবেন না। একইভাবে ইতিহাস ভূগোলের শিক্ষক অর্থনীতি বা অন্য কোনও ক্লাস করাতে পারবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy