Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Bengal Teachers Recruitment Scam

২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর মুচলেকা নিয়ে টানাপোড়েন

শীর্ষ আদালতের নির্দেশে মুচলেকা জমা দিতে হবে তাঁদের। কিন্তু কে নেবে সেই মুচলেকা, এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের তরফ থেকেও কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। বিভ্রান্তিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

প্রতীকী চিত্র।

অরুণাভ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৪ ১৭:০৬
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের ভোট পর্ব মিটতেই রাজ্যে খুলে যাচ্ছে সরকারি স্কুল। ২৫ হাজার ৫৭৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর সেই সমস্ত শিক্ষকরাও কাজে যোগ দিতে চলেছেন ছুটির পর। তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে মুচলেকা জমা দিতে হবে তাঁদের। কিন্তু কে নেবে সেই মুচলেকা, এ বিষয়ে শিক্ষা দফতরের তরফ থেকেও কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিভ্রান্তিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল বাতিল ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন রাজ্য এবং ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি মঞ্চ। তার পরেই শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের ওই রায়ের ১৮ নম্বর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হলেও নিজেদের কাজে যোগ দেওয়ার আগে মুচলেকা জমা দিতে হবে। সরকার সকলের উদ্দেশ্যে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ বিষয়টি প্রকাশ্যে জানাবেন।

এ প্রসঙ্গে, বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সবাইকে মুচলেকা দিয়েই গরমের ছুটির পর স্কুলে জয়েন করতে হবে। যদিও বিষয়টা অত্যন্ত অপমানজনক, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা সত্যি যে এই সরকার শিক্ষকদের এই অবস্থায় নামিয়ে দিয়েছে। তবে যাঁরা দুর্নীতির মাধ্যমে নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁরা মুচলেকা দেওয়ার ঝুঁকি নেবেন বলে মনে হয় না, কারণ তাঁদের চাকরি এক দিন বাতিল হবেই। তবে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকারা শিক্ষা দফতরের নির্দেশ না পেলে আগ বাড়িয়ে মুচলেকা নেবেন না। শিক্ষা দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা কাজ করবেন।”

সরকারের ঘর থেকে যে বেতন অনুমোদন হয়ে আসে, তা আসে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের (ডিআই) কাছে। সেখান থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে বেতন বণ্টন করা হয়ে থাকে। আদালতে নির্দেশের পরে ভোটের আবহে কে এই বিজ্ঞপ্তি দেবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাপানউতোর। এক জেলা আধিকারিকের বক্তব্য, শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ আসেনি। এমনকি শীর্ষ আদালতের রায়ের বিষয়টিও তাঁদের স্পষ্ট ভাবে জানা নেই। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই আদালতের কথা মতো তাঁরা কাজ করবেন।

আবার একই প্রশ্নে বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক জানান, শিক্ষা দফতরের আইন বিভাগ পুরো বিষয়টি দেখছেন। তাঁরা প্রধান শিক্ষক এবং ডিআইদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দ্রুত সব কিছু প্রকাশ্যে আসবে।

নির্বাচন চলাকালীন সরকারের ‘ধীরে চলো’ নীতির ফলে বিভ্রান্তিতে প্রধান শিক্ষকেরা। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্পষ্ট নির্দেশ না পাওয়ায় স্কুল খোলার পরে কী করবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে চিন্তিত তাঁরা। বিশেষত পুরো বিষয়টা যেখানে আদালতে বিচারাধীন।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “আমরা এখনও এই বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে। শিক্ষা দফতর বা ডিআই-দের তরফ থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ আসেনি।”

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, যত দিন পর্যন্ত মামলা বিচারাধীন রয়েছে, তত দিন পর্যন্ত কোন বেতন ফেরত দিতে হবে না। এবং সকলেই নিজের চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন। চূড়ান্ত রায়ের পর যাঁরা অযোগ্য বলে প্রমাণিত হবেন, তাঁদের চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে হবে এবং আদালতের নির্দেশের ফলে ভোগ করা আর্থিক সুবিধাও ফেরত দিতে হবে।

প্রধান শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সরকার বা শিক্ষা দফতর ২০১৬ প্যানেলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে তাঁদের মুচলেকা গ্রহণ করতে হবে। আর তা না করলে ফের আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে পারে সরকার।”

সুপ্রিম কোর্ট এখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছে, সিবিআই যে রকম ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, তারা চালিয়ে যাবে। তবে সুপার নিউমেরারি তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে কোনও কঠিন পদক্ষেপ করতে পারবে না। আগামী ১৬ জুলাই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

School Teachers Recruitment Scam SSC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE