হংকঙে যাহা ঘটিতেছে, তাহাকে ডেভিড বনাম গোলিয়াথ-এর লড়াই বলিলে হৃদয় মথিত হইতে পারে, মস্তিষ্ক সায় দিবে না। সত্য, গণতন্ত্রের দাবিতে হংকঙের আন্দোলন চিনকে উদ্বেগে রাখিয়াছে। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়নের প্রক্রিয়া লইয়া বিবাদ অমীমাংসিত, বিক্ষোভ এখনও বহাল। ক্ষোভ স্বাভাবিক। হংকঙে নির্বাচনী গণতন্ত্রের পথে বেজিঙের নায়করা একটি মোক্ষম ফাঁদ পাতিয়া রাখিয়াছেন। প্রার্থীদের একটি কমিটির অনুমোদন লইতে হইবে। বারোশো সদস্যের সেই কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মনোনীত। অতএব, স্পষ্টতই, সব প্রার্থীকেই আগে বেজিং-পছন্দ হইতে হইবে, অতঃপর তাঁহাদের মধ্য হইতে হংকঙের ভোটদাতারা নেতা বাছিবেন। অর্থাৎ হংকঙের জন্য বরাদ্দ হইতেছে পার্টি নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। ‘সমাজতান্ত্রিক বাজার অর্থনীতি’র মতোই ইহাও এক সোনার পাথরবাটি। হংকংবাসীদের একটি অংশ, বিশেষত তরুণসমাজ, এই তামাশা মানিতে রাজি নহেন। সুতরাং ইতিমধ্যেই তিন সপ্তাহ ধরিয়া ‘ছত্র আন্দোলন’ চলিতেছে। এমন দীর্ঘ ও নাছোড় বিক্ষোভ সহ্য করিবার অভ্যাস বেজিঙের নাই। পার্টি-নায়কদের উদ্বেগ অনিবার্য।
তবে তাঁহারা গণতন্ত্রীদের দাবি মানিয়া লইতেছেন না কেন? ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত হংকং যখন চিনের নিয়ন্ত্রণে আসে, তখন তো ‘এক দেশ দুই ব্যবস্থা’ নীতিতে বেজিং তাহাকে পঞ্চাশ বছরের জন্য কিছু কিছু স্বাধিকার মঞ্জুর করিয়াছিল, ২০১৭ সাল হইতে নির্বাচনের অনুমতিও তাহার অঙ্গ। সেই নীতির মোদ্দা কথা: হংকং এমন কিছু গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করিবে, চিনে যাহা নাই। সেই বিশেষ অধিকারের কল্যাণেই এমন বিক্ষোভ সেখানে সম্ভব হইতেছে। তবে হংকংকে অনিয়ন্ত্রিত নির্বাচন মঞ্জুর করিতে বাধা কোথায়? বাধা একেবারে গোড়ায়। হংকঙের স্ফুলিঙ্গ হইতে যদি চিনের মূল ভূখণ্ডে অনুরূপ আন্দোলনের আভাসমাত্র তৈরি হয়, পার্টি প্রমাদ গনিবে। অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি এবং বহির্বিশ্বের সহিত ক্রমবর্ধমান সংযোগের সঙ্গে সঙ্গে চিনেও গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বাড়িতে বাধ্য। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং পার্টির নিয়ন্ত্রণের রাশ আরও জোরদার করিতে চাহিতেছেন। হংকঙের আন্দোলন তাঁহাদের নিকট ইবোলা-প্রতিম।
কিন্তু তাহা হইলে পঁচিশ বছর আগে তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ারের কাহিনি কেন হংকঙের সেন্ট্রাল চত্বরে পুনরাবৃত্ত হইল না? তাহার কারণ, ১৯৮৯ আর ২০১৪ এক নহে, হংকংও বেজিং নহে। হংকং চিনের অর্থনীতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ, তাহার ভাবমূর্তির পক্ষেও। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনের বেশির ভাগ বিনিয়োগ হংকং মারফত হইয়া থাকে। ব্যবসায়ী বিশ্বের ভরসা হংকঙের উপর অনেক বেশি। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব অনুসারে, ব্যবসায়িক স্বচ্ছতার বিচারে দুনিয়ায় এক নম্বর স্থানে রহিয়াছে হংকং, চিন ১৩৭। সুতরাং হংকঙে সাঁজোয়া বাহিনী পাঠানো চিনের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হইবে না। কিন্তু শেষ অবধি তাহাকে কঠোর হইতেই হইবে। ইতিমধ্যেই পুলিশি উদ্যোগ ফের চালু হইয়াছে। গোলিয়াথ নূতন বিক্রমে ফিরিয়া আসিয়াছে। হৃদয় চাহিবে, ডেভিড জয়ী হউক। কিন্তু মস্তিষ্ক বলিবে: চিন যদি গণতান্ত্রিক না হয়, হংকংও গণতন্ত্র পাইবে না। শেষ পর্যন্ত ‘এক দেশ এক ব্যবস্থা’ অনিবার্য। এবং সেই ব্যবস্থাটি গণতন্ত্র হইবে, এমন আশা আপাতত দুরাশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy