প্রতীকী ছবি
আমেরিকায় এক পুরুষ বলিলেন, তিনি নিজেকে ফিলিপিন্স-এর মানুষ মনে করেন। তিনি ফ্লোরিডায় টুক-টুক চালাইয়া ঘোরেন, যে যানটি ফিলিপিন্সে জনপ্রিয়। যখনই তিনি হিস্ট্রি চ্যানেলে ফিলিপিন্সের সংস্কৃতি বা জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনুষ্ঠান দেখেন, বা ওই দেশের গান খাবার পোশাকের সান্নিধ্যে থাকেন, তখনই উজ্জীবিত বোধ করেন। ফলে আবার সেই প্রশ্ন উঠিয়াছে, একটি মানুষের জাতিগত পরিচয় কী দিয়া নির্ধারিত হইবে? তিনি কোন জাতিতে জন্মাইয়াছেন তাহা দিয়া, না তিনি কোন জাতিভুক্ত বলিয়া পরিচিত হইতে চাহেন, তাহার ভিত্তিতে? এই বৎসরেই এক মার্কিন মহিলাকে লইয়া হইহই হয়, তিনি শ্বেতাঙ্গ, কিন্তু গত দশ বৎসর ধরিয়া কৃষ্ণাঙ্গ পরিচয়ে বাঁচিতেছিলেন। কেহ বলিয়াছেন, তিনি কিছু সুবিধা পাইবার জন্য কৃষ্ণাঙ্গ সাজিয়াছিলেন। তিনি ছিলেন মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার সংক্রান্ত এক সংগঠনের উচ্চ পদে আসীন। আফ্রিকান-আমেরিকান সংস্কৃতি লইয়া পড়াইতেন, কলাম-ও লিখিতেন। তাঁহার সেই সকল কাজ চলিয়া গিয়াছে। একটি বই লিখিয়া ও কিছু সাক্ষাৎকার দিয়া মহিলা বলিয়াছেন, তিনি যদি কৃষ্ণাঙ্গদের সংস্কৃতি ঐতিহ্য জীবনযাত্রার প্রেমে পড়েন এবং নিজেকে তাঁহার শ্বেতাঙ্গ মনে না হইয়া কৃষ্ণাঙ্গ মনে হইতে থাকে, তবে তিনি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ বলিতে পারিবেন না কেন?
স্বাভাবিক ভাবেই লিঙ্গপরিচয়ের কথাও আসিয়া পড়িয়াছে। ইদানীং অনেকেই মত পোষণ করেন, লিঙ্গ কেবল শারীরিক গঠন দ্বারা নির্ধারিত হয় না, মানসিক গঠনও তাহার অঙ্গ। অর্থাৎ, কেহ যদি মনে করেন তিনি নারীর দেহ পাইলেও প্রকৃত পক্ষে পুরুষ, বা পুরুষের দেহে বন্দি নারী, তাহা হইলে তাঁহার সিদ্ধান্তকে সম্মান করিতে হইবে এবং তাঁহাকে তাঁহার পছন্দ অনুযায়ীই লিঙ্গভুক্ত বলিয়া ভাবিতে হইবে। এমনকী কেহ যদি নিজেকে কোনও নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষ বলিয়া না ভাবেন, কিংবা কখনও একটি লিঙ্গের ও কখনও অন্য লিঙ্গের মানুষ বলিয়া ভাবেন, বা একই মুহূর্তে একাধিক লিঙ্গের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলিয়া ভাবেন, তবে সেই বহমান লিঙ্গপরিচয়ের ধারণাকেও সম্মান করিতে হইবে। তাহা হইলে এই প্রশ্নও উঠিবে, কেহ যদি জন্মগত পরিচয়কে গুরুত্ব না দিয়া, যে জাতিকে পছন্দ হইতেছে তাহার পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করিতে চাহেন, সেই সিদ্ধান্তকেই বা সম্মান করা হইবে না কেন? অনেকে বলিয়াছেন, লিঙ্গপরিচয়ের তুলনায় জাতিপরিচয় কম শরীর-নির্দিষ্ট, ফলে সেই ক্ষেত্রে মানুষের নির্বাচনের স্বাধীনতা অধিক হওয়া বিধেয়। কোনও মানুষ নিজেকে প্রিয় জাতির, এমনকী বিবিধ জাতির লোক বলিয়াও ঘোষণা করিতেই পারেন। ইহাই কি যথাযথ আন্তর্জাতিকতা নহে?
মুশকিল হইল, তত্ত্বগত ভাবে উত্তেজক হইলেও, বাস্তব কাজকর্মে ইহার প্রয়োগ অতীব কঠিন। প্রশাসন বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির সুষ্ঠু ভাবে কাজ করিবার পক্ষে মানুষের সুনির্দিষ্ট পরিচয় জরুরি। যদি কেহ বলেন আমি সকাল দশটায় নারী, কিন্তু সাড়ে দশটায় পুরুষ, সকাল সাতটা অবধি কৃষ্ণাঙ্গ কিন্তু বৈকাল ছয়টা হইতে শ্বেতাঙ্গ, দ্বিপ্রহরে ভারতীয় কিন্তু সন্ধ্যা নামিলেই ব্রাজিলের বাসিন্দা, এবং এইগুলি এই দিনের কথা বলিলাম কাল সকলই বদলাইয়া যাইতে পারে, তাহা হইলে আদমশুমারি-কর্তা হইতে বিমানবন্দর-কর্মী, প্রত্যেকেই মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িবেন। মানুষ যদি কোনও কিছুই স্পষ্ট করিয়া না বলিতে পারে, তাহা হইলে উত্তরাধুনিকতার সুবিধা হয়, আধুনিক কাজকর্মের নহে। ফিরতি তর্ক করা যায়, প্রশাসনের সুবিধার জন্য নাগরিকের মৌলিক স্বাধীনতা হরণ করা হইবে? না কি পূর্বে স্বাধীনতাকে প্রদত্ত ধরিয়া, প্রশাসনকে সেই অনুযায়ী পদ্ধতি প্রকরণ খুঁজিতে হইবে? বহু স্কুল-কলেজের আবেদনপত্রে ইদানীং ধর্মের বর্গটিই বাদ হইয়াছে, কারণ ছাত্রছাত্রীর ধর্মপরিচয় বিদ্যায়তনে অবান্তর। তেমন ভাবে যদি বিশ্বে এমন মনোভাব জিতিয়া যায় যে মানুষের লিঙ্গ বা জাতির উপর তাহার প্রকৃত পরিচয় নির্ভর করে না, ক্ষতি কী? অবশ্য নরওয়েতে এমন মহিলা আছেন যিনি নিজেকে বিড়াল ভাবিতে ভালবাসেন, এবং বহু দেশে এমন পুরুষ আছেন যাঁহারা নিজেকে কুকুর বলিয়া ঘোষণা করিতে চাহেন, তাঁহারা যদি এই বার প্রজাতি-পরিচয়ের বহমানতা লইয়া আন্দোলনে নামেন, মহাতাত্ত্বিকও ফাঁপরে পড়িবেন। তখন বুঝা যাইবে হিজিবিজবিজ নিজের নাম সকালে আলু-নারকোল ও বৈকালে রামতাড়ু বলিয়া কোন ঝঞ্ঝাট-বীজ রোপণ করিয়াছিল!
যৎকিঞ্চিৎ
একটা লোক বক্তৃতা দিতে গিয়ে জলের বোতল হাতড়েছে, তাই নিয়েও ব্যঙ্গের বন্যা! আরে বাবা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে কি তাঁর গলা শুকিয়ে যায় না? দু’জনের সঙ্গে একই সময়ে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে পোজিশন গুলিয়ে যেতে পারে না? আসলে ট্রাম্প এখন ব্যঙ্গকর্মীর নিরাপদ টার্গেট। তাঁকে নিয়ে যেমন খুশি হাসাহাসি হোক, তা নিশ্চিত প্রগতিশীলতার দ্যোতক এবং বিদ্যাসিদ্ধ। একই অঙ্গে বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষমতাশালী এবং বেচারাতম ক্লাউন: এ ট্র্যাজেডি নিয়ে কেউ লিখুক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy