—ফাইল চিত্র।
ক্ষমতাবানের কথার মর্মার্থ উদ্ধার করা সতত সহজ নহে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে বলিয়াছেন মানবাধিকারের যে ধারণা আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রচলিত, তাহা পশ্চিম দুনিয়ার উপযোগী, ভারতের নহে। প্রথমেই বলা দরকার, এই প্রশ্নে পাশ্চাত্য বনাম প্রাচ্য ধাঁচের কোনও সাংস্কৃতিক বা ইতিহাস-লগ্ন দ্বন্দ্বের কথা তিনি বলেন নাই, তিনি মানবাধিকারের ভারতীয় ধারণা নির্মাণে দেশের বাস্তব পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিবার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ দিয়াছেন। তাঁহার মতে, কেবল পুলিশের অত্যাচার বা পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর মতো রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসাবে মানবাধিকারকে দেখিলে ভুল হইবে, ভারতে অন্য দুইটি বাস্তবকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। এক, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজনগুলি পূর্ণ না হইলে তাহা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। দুই, মাওবাদী হামলায় বা কাশ্মীরে সন্ত্রাসী আক্রমণে যাঁহারা প্রাণ হারাইয়াছেন তাঁহাদের মানবাধিকার কি লঙ্ঘিত হয় নাই? মানবাধিকারের ভারতীয় সংজ্ঞায় এই প্রশ্নের স্বীকৃতি চাই।
আপাতদৃষ্টিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাগুলি যুক্তিসঙ্গত। প্রথমত, সন্ত্রাসী বা হিংসাশ্রয়ী আক্রমণের কারিগররা যে মানবাধিকার-বিরোধী, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। তাহারা বাঁচিয়া থাকিবার মৌলিক অধিকার হরণ করিয়া নিজেদের পৈশাচিক চরিত্রকেই বিজ্ঞাপিত করে, মানবাধিকার তো অনেক পরের কথা। ইহাও ঠিক, রাষ্ট্রবিরোধী হিংসায় নাগরিকরা আক্রান্ত হইলে মানবাধিকারের প্রবক্তারা তাহার প্রতিবাদে সচরাচর সরব হন না— এই নীরবতা দুর্ভাগ্যজনক। দ্বিতীয়ত, জীবনধারণের ন্যূনতম উপকরণ ও পরিষেবার অধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, আধুনিক কল্যাণ-রাষ্ট্রের নিকট তাহা নাগরিকের আবশ্যিক দাবি। মোদী সরকার যত প্রচারই করুক না কেন, তাহাদের অনুসৃত আর্থিক নীতি বহু মানুষের জীবন-সাধনের সীমিত সংস্থানটুকু আরও খর্ব করিতেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে কথা মানিবেন না, তিনি প্রত্যাশিত ভাবেই সরকারের গুণ গাহিয়াছেন, তবু অন্তত প্রচারের খাতিরেও তিনি ইতিবাচক অধিকারের ধারণাকে স্বীকার করিলেন। ভাল।
কিন্তু মানবাধিকারের ভাব সম্প্রসারণের কৌশলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মানবাধিকারের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বকেই লঘু করিয়া দিলেন না তো? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বা অনাগ্রহী হইলে গণতন্ত্রের মৌলিক আদর্শ হইতেই ভ্রষ্ট হয়। মনে রাখিতে হইবে, রাষ্ট্রের চালকরা বহু ক্ষেত্রেই এই রক্ষাকবচকে তাহার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে অনিচ্ছুক থাকেন, যেমন পশ্চিমবঙ্গের ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে কার্যত মানবাধিকারের পরোয়া না করিয়া অপরাধী দমনে ঝাঁপাইয়া পড়িবার মন্ত্রণা দিয়াছিলেন! অমিত শাহ তথা তাঁহার সতীর্থরা যে ভাবে কেন্দ্রে বা রাজ্যে সরকার চালাইয়া থাকেন, তাহাকেও এই প্রবণতার অনুসারী বলিয়া মনে করিবার কারণ আছে। অপরাধীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বলিয়া তাহাদের মোকাবিলায় রাষ্ট্রও মানবাধিকার লঙ্ঘন করিবে, ইহা গণতন্ত্রের যুক্তি হইতে পারে না। অমিত শাহের আশ্বাস, পুলিশের মানবাধিকার-বিরোধী আচরণ একেবারেই সহ্য করা হইবে না। আশ্বাসে বিশ্বাস রাখা যায় কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy