Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Ford Motors

Ford Motors: ফোর্ড-এর মতো সংস্থাও ভারত থেকে ব্যবসা গোটাল কেন?

ফোর্ড কোম্পানির ভারতীয় বাজার থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা সামান্যই প্রভাব ফেলবে। কারণ, এই সংস্থা বাজারের মাত্র ২ শতাংশের কারবারি।

ফোর্ড গাড়ির কারখানা

ফোর্ড গাড়ির কারখানা

টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৫২
Share: Save:

ফোর্ড এবং জেনারেল মোটরসকে ছাপিয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ(সংখ্যার দিক থেকে, দামের দিক থেকে নয়) সংস্থা হয়ে ওঠা হুন্ডাইকে বাদ দিলে বাকি যে চারটি প্রধান মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা রয়েছে, তারা ভারতের ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়ি কেনাবেচার বাজারের মাত্র ৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এদের মধ্যে জেনারেল মোটরস (জিএম) চার বছর আগে ভারত থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়েছে। ফোর্ড কোম্পানির ভারতীয় বাজার থেকে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা সামান্যই প্রভাব ফেলবে। কারণ, এই সংস্থা বাজারের মাত্র ২ শতাংশের কারবারি। স্কোডার ভর্তুকি সত্ত্বেও বিশ্বের এক নম্বর ফক্সভাগেন এ দেশের গাড়ির বাজারের মাত্র ১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের বৃহত্তম চার সংস্থার মধ্যে টয়োটাই সব থেকে সফল। কিন্তু এই ‘সাফল্যে’র পরিমাণটি নেহাতই বাজারের ৩ শতাংশ। এবং এ কথাও মনে রাখা দরকার, অতিরিক্ত করের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে টয়োটা ২০২০-তে ভারত থেকে ব্যবসা গোটানোর ব্যাপারটিকে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। যদিও তারা এটিওস এবং করোলা অল্টিস— এই দু’টি ‘থ্রি-বক্স মডেল’-এর (বর্তমানে কাজ চালিয়ে নেওয়া, অতীতের ভুলগুলি ভুলে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখার মডেল) উৎপাদন বন্ধ রাখে। অন্য দিকে হন্ডা তাদের সিভিক এবং অ্যাকর্ড মডেল দু’টি তৈরি বন্ধ রাখে।
প্রশ্ন এখানেই। কেন ভারত বিশ্বের প্রধান মোটরগাড়ি নির্মাতাদের কাছে এক শ্মশানভূমি বলে মনে হচ্ছে? এর একটি উত্তর এই যে, ভারতের একদা উজ্জ্বল গাড়ির বাজার আর যথাস্থানে নেই। গাড়ির সংখ্যা বিচার করে (দাম নয়) বিশ্বে তার চতুর্থ থেকে তৃতীয়ে উন্নীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা পঞ্চমে গিয়ে নামে (এগিয়ে আসে জার্মানি)। কারণ, বাজারে ধস নামে এবং সেখান থেকে চলতি আর্থিক বছরে উদ্ধারের আগের দু’বছর কোনও ওঠানামা দেখা যায়নি। এই ঘটনাটি ভারতীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারের গতিজাড্য হ্রাসের বৃহৎ কাহিনির একটি অংশ মাত্র।

দেশের বাজারে সেই গাড়িরই চল বেশি, যার দাম কম এবং তার রক্ষণাবেক্ষণও সস্তা।

দেশের বাজারে সেই গাড়িরই চল বেশি, যার দাম কম এবং তার রক্ষণাবেক্ষণও সস্তা।

কেন বিশ্বের অগ্রণী গাড়ি প্রস্তুতকারকরা ভারতে বিপর্যস্ত হল, এই প্রশ্নের দ্বিতীয় উত্তর এখানেই যে, এই দেশের বাজারে সেই গাড়িরই চল বেশি, যার দাম কম এবং তার রক্ষণাবেক্ষণও সস্তা। এই চাহিদায় যোগান দেওয়ার মতো মডেল বিশ্ব গাড়ি-বাণিজ্যের অগ্রপথিকদের ঝুলিতে নেই। বিশ্বের বাকি দেশগুলির বাজারে আকারে বড় গাড়ির চাহিদাই বেশি। কেবল মারুতি এবং হুন্ডাইয়ের (দু’পক্ষ মিলিয়ে বাজারের দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্তা) এই বাজার ধরার মতো মডেল রয়েছে। বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জিএম যা করেছিল (হোমরাচোমরা ওপেল থেকে অপেক্ষাকৃত হালকা শেভ্রোলেতে সরে আসা) তা হল, চিন বা দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের অংশীদাররা যে সব ছোট গাড়ি বানায়, সেগুলিকে বাজারজাত করা। সেই সব গাড়ির সঙ্গে শেভ্রোলের তুলনাই চলে না। কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে যে, তিন লাখ টাকার ট্যাগ ঝুলিয়ে বাজারে সব থেকে বেশি বিকোনো মারুতি অল্টোর সঙ্গে ফোর্ড অথবা টয়োটা, ফক্সভাগেন অথবা হন্ডা প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতেই পারে না। বিশ্বের গাড়ি ব্যবসার অগ্রণীরা জানেই না কী করে এই দামে বাজারে তাদের উৎপাদন ছাড়া যায়।

ভোক্তাদের রেস্তর জোর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের চরিত্রও যে বদলাচ্ছে, সে কথা স্বীকার করতেই হবে। ভোক্তারা এখন সাদামাটা ৮০০-সিসির গাড়ির চেয়ে বেশি কিছু আশা করছেন। হ্যাচব্যাক-সহ প্রধান গাড়িগুলি আকারে বেড়েছে। হুন্ডাইয়ের আই টোয়েন্টি, সুজুকির সুইফ্ট এবং ব্যালেনো-র মতো বিস্তৃত ফিচার সমেত গাড়ি দেখা গিয়েছে। টাটা মোটরসের টিয়াগো ও আল্ট্রোজের মতো বাজার ধরার উপযোগী গাড়িরও দেখা মিলেছে। এই সব হ্যাচব্যাকের দাম সাধারণত ছয় থেকে দশ লক্ষের ভিতরে। সেখানে বিশ্বের অগ্রণীরা প্রতিযোগিতায় আসতে পারত, যদি না তারা আশা ছেড়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যেত। ইতিমধ্যে হুন্ডাই গোষ্ঠীর ছাপ নিয়ে কিয়া মোটরস তাদের মিনি-এসইউভি নিয়ে ভারতীয় বাজারে এনেছে এবং টাটা মোটরস ও মাহিন্দ্রার সঙ্গে বাজারের তৃতীয় অংশে প্রতিযোগিতায় নেমেছে (মারুতি ও হুন্ডাইকে বাদ দিয়ে)।

ভারতের বাজারে মারুতির মতো ‘অগ্রদূত’-কে এখনও পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে সমর্থ হয়নি।

ভারতের বাজারে মারুতির মতো ‘অগ্রদূত’-কে এখনও পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে সমর্থ হয়নি।

গাড়ির ব্যবসার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল এই যে, এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে রফতানি বাণিজ্যে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। তামিলনাড়ুর পাশাপাশি ফোর্ড গুজরাতে তাদের দ্বিতীয় বৃহৎ কারখানাটি নির্মাণ করে। কারণ, তারা আশা করেছিল, এক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) মাধ্যমে তারা ভারতে উৎপাদিত গাড়ি ইউরোপের বাজারে ছাড়তে পারবে। কিন্তু এই এফটিএ-টি ঘটেনি। এবং যেহেতু সংস্থাটির ভারতীয় বাজারে চলার মতো একটি মাত্র মডেল রয়েছে, সে হেতু তারা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার তিন-চতুর্থাংশও এখানে প্রয়োগ করেনি। সুতরাং তাদের বাজার ত্যাগ অনিবার্য ছিল।

পরিশেষে এ কথা মনে রাখা দরকার, গাড়ির বাজারে টিকে থাকতে হলে এক নাছোড়বান্দা মনোবৃত্তির প্রয়োজন। ভারতের বাজারে মারুতির মতো ‘অগ্রদূত’-কে এখনও পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে সমর্থ হয়নি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের গাড়ির বাজারে স্থানীয় এবং আগে থেকে বাজার-ধরা সংস্থাগুলিই রাজত্ব চালায়। আবার একটি বিশেষ ক্ষেত্রে সাফল্যের (যেমন ছোট গাড়ি) জাদু অন্য ক্ষেত্রগুলিতেও কাজ করবে, এমন নয়। যেমন, মারুতির সিয়াজ সেডান হন্ডা সিটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠেনি। যে কোনও বাজারে সাফল্য আসলে ছিনিয়ে নিতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Ford Motors Ford cars digital essay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy