প্রতীকী ছবি
রামায়ণকারের যাবতীয় করুণাবারি সীতাদেবীর পুণ্যাভিষেকেই নিঃশেষিত হইয়াছিল। জনক রাজার কনিষ্ঠা দুহিতা ঊর্মিলার অব্যক্ত বেদনার নিমিত্ত এক বিন্দুও সিঞ্চিত হয় নাই। করোনার মহাগাথায় ওয়ার্ড বয় বা আয়াদের খুচরা কাহিনি শুনিয়া ঊর্মিলার কথা স্মরণে আসে। তাঁহারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগে সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করেন। তাঁহাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পেশাদারি প্রশিক্ষণ নাই। ডাক্তার, নার্স এবং রোগীদের সহায়তা দান তাঁহাদের দায়িত্ব। পরীক্ষার জন্য নমুনা যথাস্থানে পৌঁছাইয়া দেওয়া, এক্স-রে করাইবার জন্য রোগীদের হুইলচেয়ার ঠেলিয়া লইয়া যাওয়া, তাঁহাদের আহারাদির বন্দোবস্ত করা, এমনকি রোগীদের সহিত বাক্যালাপ করাও তাঁহাদের কর্তব্য। এই অতিমারির সময় কেবল রোগী নহে, পরিজনদেরও সহায় হইয়া উঠিয়াছেন ওয়ার্ড বয় বা আয়ারা। সংক্রমণের কালে হাসপাতালে গিয়া রোগীর সহিত দেখা করিবার উপায় নাই। এমতাবস্থায়, বহু ক্ষেত্রে ওয়ার্ড বয় ও আয়ারা রোগী ও পরিবারের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র হইয়া উঠিয়াছেন।
ইদানীং কালে বহু ক্ষেত্রে, বিশেষত সরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় বা আয়াদের বিরুদ্ধে নানা প্রকার অভিযোগ উঠিয়াছে। কোথাও রোগীর পরিজনদের সহিত দুর্ব্যবহারের অভিযোগ, কোথাও বা দায়িত্ব পালনে অস্বীকার। প্রতিটি ঘটনাই চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে অন্তরায় হইয়াছে। কিন্তু উহাই যে একমাত্র চিত্র নহে, মুদ্রার অপর এক পিঠও যে বর্তমান, একাধিক রোগী বা পরিজনের অভিজ্ঞতা হইতে তাহা স্পষ্ট হইতেছে। এবং এই শ্রেণির স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকাটিও অত্যন্ত জরুরি। অপ্রশিক্ষিত হইবার ফলে তাঁহাদের ভূমিকা হয়তো চিকিৎসক বা নার্সের সমতুল নহে, কিন্তু অবহেলা জুটিবার ন্যায় অকিঞ্চিৎকরও নহে। তাঁহারা নিমিত্তমাত্র নহেন। যদিও, এ-যাবৎ কাল চিকিৎসা পরিষেবার বিজয়গাথায় তাঁহারা কেবল ‘ফুটনোট’ হইয়াই থাকিয়া গিয়াছেন। তাঁহারা অপরিহার্য হইলেও পৃথক করিয়া খেয়াল করিবার কিছু নাই, করিলেও তত গুরুত্ব দিবার প্রয়োজন নাই।
মনে রাখিতে হইবে, চিকিৎসক বা নার্সদের ন্যায় এই স্বাস্থ্যকর্মীরাও মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করিতেছেন, ভীতির পরিবেশে কাজ সামলাইতেছেন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের অভিমুখে চাহিয়া আছেন। সকলের ন্যায় তাঁহারাও ভাইরাসের সংক্রমণের সম্মুখে অরক্ষিত। অতএব সমাজ যেন কখনও বিস্মৃত না হয় যে এই কর্মীরাও সমমানব, তাঁহাদেরও পরিবার আছে, স্বজন হারাইবার ভয় আছে। চিকিৎসাধীন কোনও রোগী প্রয়াত হইলে তাঁহাদেরও বেদনা জাগিতে পারে। কেবল শরীর নহে, তাঁহাদের মনের উপরেও অতিরিক্ত চাপ পড়িতেছে। রথী-মহারথীরাই পাদপ্রদীপের আলো শুষিয়া লইবেন, ইহাতে অস্বাভাবিকতা নাই। কিন্তু ইহাও ভুলিলে চলিবে না যে, পদাতিক বাহিনী বিনা; যুদ্ধটিই অসম্ভব হইয়া যায়। তাঁহাদের স্বার্থহীন উৎসর্গই অতিমারির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিবার ক্ষেত্রে ভরসা দিতেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে, কোথাও তাহা অতিক্রম করিয়া যাইবারও আশঙ্কা। এই দীর্ঘ সংগ্রামে তাঁহাদের সুস্থ রাখিতে না পারিলে জয়লাভ কঠিনতর হইবে। চিকিৎসকেরা বিশেষজ্ঞ, তাঁহাদের প্রতি সমাজের বা প্রশাসনের পক্ষপাত থাকিতে পারে। কিন্তু, পদাতিকদের ভুলিলে যুদ্ধজয় অসম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy