ছবি: রয়টার্স।
ক্রিকেটের ময়দানে তিনি অজস্র রেকর্ড গড়িয়াছেন, ভাঙিয়াছেনও। ব্যাট হাতে বাইশ গজ শাসন করিয়াছেন, নিজ দলের খেলোয়াড়দিগকে পরিচালনা করিয়াছেন যথার্থ দলনেতার ন্যায়। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসরে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে সমগ্র ক্রিকেটবিশ্ব যে বিরাট কোহালিকে দেখিল তাহা অভূতপূর্ব। কোহালি তখন ক্রিজ়ে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার স্টিভ স্মিথ বাউন্ডারি সীমারেখায় ফিল্ডিং করিতেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্মিথ বল-বিকৃতি কাণ্ডে এক বছরের নির্বাসনদণ্ড ভোগ করিয়া সম্প্রতি পুনরায় দলে ফিরিয়াছেন, গ্যালারিতে বহু দর্শক তাহাকে শ্রবণসীমার মধ্যে পাইয়া বিদ্রুপ বর্ষণ করিতেছিলেন, হস্তপদাদি সঞ্চালনও বাদ যায় নাই। বিরাট কোহালি তাহা দেখিয়া ক্ষুণ্ণ হন, দর্শকদিগকে ইঙ্গিত করেন যেন তাঁহারা করতালি দিয়া স্মিথ-সহ বিপক্ষের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেন। ঘটনাটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের, কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে তাহার ভিডিয়ো মুহূর্তে ছড়াইয়া পড়ে।
ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের ন্যায় গুণ শিখাইতেছেন এক জন ক্রিকেটার, ইহা ব্যতিক্রমী ঘটনা। সমাজে এমত ধারণা প্রচলিত, এই গুণগুলি শিখাইবেন গুরুজন ও শিক্ষকেরা— পরিবার ও বিদ্যালয়ের ন্যায় কাল-পরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানগুলিতে। প্রচলিত প্রবাদ মনে পড়িতে পারে: উদারতার শিক্ষারম্ভ নিজগৃহে। কিন্তু কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত কোণ হইতেও শিক্ষার আলোকছটা আসিয়া পড়ে। খেলার মাঠের দৃষ্টান্তটি সেইরূপ। এক জন খেলোয়াড় ভুল করিয়াছিলেন, আইন তাঁহাকে শাস্তি দিয়াছে। সেই দণ্ড ভোগ করিয়া মাঠে ফিরিবার পরেও যে দর্শকেরা স্মিথের উদ্দেশে বিদ্রুপবাণ ছুড়িলেন, তাঁহারা সম্ভবত ইংরাজি ভাষায় ‘ইট’স জাস্ট নট ক্রিকেট’ বাগ্ধারাটির অর্থ জানেন না। ক্রিকেট-অনুষঙ্গ জড়িত এই বাগ্রীতিটি প্রয়োগ করা হয় কোনও ঘটনা বা আচরণের মধ্যে নিহিত অসঙ্গতি বা অসততা বুঝাইতে। ভারতীয় দলকে সমর্থন মানেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে তাঁহার পূর্বকৃত অপরাধের দিকে আঙুল তুলিয়া ব্যঙ্গ-শ্লেষে ধুইয়া দেওয়া, ক্রিকেটপ্রেমীদের এ হেন আচরণ আর যাহাই হউক, ‘ক্রিকেট’ নহে। ভারতীয় অধিনায়ক শুধু ইহা স্মরণই করাইলেন না, প্রকৃত আচরণও শিখাইয়া গেলেন। ক্রিকেট ‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলিয়া খ্যাত। কোহালি দেখাইলেন, ভদ্রতা কেবল ক্রিকেটারদেরই নহে, দর্শকেরও আচরণীয়।
নেতৃত্ব শব্দটি বলিলেই বীরভাব, দার্ঢ্য বা আগ্রাসনের ন্যায় বৈশিষ্ট্যগুলি স্বতঃসিদ্ধের মতো আসিয়া পড়ে। নেতার প্রার্থিত গুণাবলির তালিকায় ইহাদের স্থান সর্বাগ্রে। হৃদয়দেবতা সাঁইসাঁই তরবারি ঘুরাইয়া শত্রুকে কচুকাটা করিতেছেন, ভক্ত-মন বুঝি ইহাই দেখিতে চায়। তাঁহারা শক্তের ভক্ত— বিনয় বা সৌজন্য আজিকার সমাজে দুর্বলতার নামান্তর। বিরাট কোহালিও এত দিন চর্চিত ছিলেন তাঁহার আগ্রাসী মনোভাব ও শরীরভাষার জন্যই। এই ঘটনা তাঁহার নেতৃত্বের অপর একটি দিক উন্মোচন করিল। ঘটনাটির সহিত বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়িত বলিয়াই তাহা গুরুত্বপূর্ণ। বিরাট শুধু দর্শককেই সহবত শিক্ষা দিলেন, ইহা খণ্ডসত্য মাত্র। তাঁহার কাছে শিখিতে পারেন রাজনীতি ও প্রশাসনের নেতৃ-মন্ত্রিবৃন্দও, বৃহৎ জনপরিসর লইয়াই যাঁহাদের কাজ। বড় হইতে গেলে প্রথমে ছোট হওয়া, সন্নত হওয়া আবশ্যক, এই শিক্ষা দিবার মানুষ তাঁহাদের বড় একটা নাই।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy