Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Donald Trump

এই ভোট আমেরিকার পরীক্ষা

ট্রাম্প ভেবেই রেখেছিলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাকায় চেপে গড়গড়িয়ে পেরিয়ে যাবেন এ বারের ভোট। বাদ সেধেছে করোনাভাইরাস।

পিছিয়ে থাকলেও লড়াইয়ে আছেন ট্রাম্প।

পিছিয়ে থাকলেও লড়াইয়ে আছেন ট্রাম্প।

অতনু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৪
Share: Save:

জর্জ ফ্লয়েড হত্যা-পরবর্তী সময়কালে আঙ্কল টমের দেশটা যখন জ্বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানতে চায় বিক্ষোভ থামাতে তিনি কী করছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি সহজেই ভোটে জিতব। অর্থনীতি ভাল হতে শুরু করবে, শিগগিরই তা হবে দুর্দান্ত, এবং আগের চাইতে ভাল।” ট্রাম্প ভেবেই রেখেছিলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাকায় চেপে গড়গড়িয়ে পেরিয়ে যাবেন এ বারের ভোট। বাদ সেধেছে করোনাভাইরাস। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা আর অর্থনীতির কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ছে একসঙ্গে। অতিমারি মোকাবিলায় তালগোল পাকিয়ে আমেরিকার পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেছেন ট্রাম্প। তাঁর নিজের কোভিডও তাঁকে সহানুভূতির ভোট জোগানোর বদলে জাগিয়ে তুলেছে প্রশ্নচিহ্ন।

সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব তো আমেরিকার শোণিত-প্রবাহে। আধ শতাব্দী আগেকার সিভিল রাইট আন্দোলনের সময়কালে ১৯৬৮-র এপ্রিলে মেমফিসের মোটেলের ব্যালকনিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ডেমোক্র্যাট লিন্ডন জনসন তখন প্রেসিডেন্ট। সেও এক নির্বাচনের বছর। অশান্ত হয়ে ওঠে আমেরিকা। কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলন। দাঙ্গা, কার্ফু। হিংসাশ্রয়ী অস্থিরতা কিন্তু নির্বাচনে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ঠেলে দিয়েছিল দক্ষিণপন্থী রিপাবলিকানদের দিকে। জয়ী হন রিপাবলিকান রিচার্ড নিক্সন। নাগরিক অস্থিরতায় প্রভাবিত কাউন্টিগুলিতে নিক্সনের ভোট বেড়েছিল ৬-৮%। ঘটনাক্রমে সেটাও একটা ফ্লু অতিমারির সময়কাল। এইচ৩এন২। পৃথিবী জুড়ে মৃত্যু হয় অন্তত দশ লক্ষ মানুষের, আমেরিকাতে এক লক্ষ। যা হোক, ১৯৬৮-র নির্বাচনে নিক্সন জেতেন শ্বেতাঙ্গদের উদ্বেগকে প্রশ্রয় দেওয়ার একটা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে। কী আশ্চর্য, আজ সেই একই সুর ট্রাম্প-পক্ষের কণ্ঠে।

ইতিমধ্যে এক কৃষ্ণাঙ্গ অবশ্য প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পর পর দু’বার। কালোদের অবস্থারও অনেকটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা মার্কিন সমাজের মানসিকতাকে বর্ণ-নিরপেক্ষ সমতলে আনতে পারেনি। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন শুরু সেই কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের সময়ই, ২০১৩-তে। ট্রাম্পের আশা, জাতিগত ভাবে মেরুকৃত এবং উগ্রবাদী ভোটাররা জিতিয়ে আনবেন তাঁকে ওই রাজ্যগুলিতে, যেগুলি ২০১৬-য় তাঁকে জিতিয়েছিল।

আরও পড়ুন: স্কুল যখন খুলবে আবার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (নেব্রাস্কা আর মেন ব্যতীত) কোনও রাজ্যে যে প্রার্থী জেতেন, গোটা রাজ্যের সমস্ত নির্বাচনী ভোট জমা হয় তাঁর অ্যাকাউন্টে। রাজ্যগুলিই যেন এক একটা নির্বাচনী কেন্দ্র। তাই কোনও রাজ্যে কোনও দল ৬-৭% বা বেশি ভোটে এগিয়ে থাকলে দু’দলের কাছেই গুরুত্বহীন সেই রাজ্য। প্রচারে গুরুত্ব পায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজ্যগুলো। ৫৩৮ আসনের ইলেক্টোরাল কলেজে আবার গুরুত্বপূর্ণ ৮-১০টি ‘সুইং’ রাজ্য— টেক্সাস, আইওয়া, জর্জিয়া, ওহাইয়ো, নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডা, অ্যারিজ়োনা, পেনসিলভেনিয়া, যেখানে ২-৩% ভোট এ দিক-ও দিক হলেই পাল্টে যেতে পারে রাজ্যের ফল। পিছিয়ে থাকলেও তাই লড়াইয়ে আছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুন: জিডিপি নয়, অনেক বেশি দুশ্চিন্তার কারণ বৈষম্য-ক্ষুধা-অপুষ্টি

কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও ট্রাম্পের কিন্তু বড় একটা এসে যাবে না। ২০১৬-র নির্বাচনে এঁদের ৮৮%-ই ভোট দিয়েছেন হিলারি ক্লিন্টনকে। দেশটার মাত্র ১৪% কালো, আর সাদা ৭২%-এর বেশি। কমলা হ্যারিসকে ‘রানিং মেট’ হিসেবে বেছে নেওয়াটাও তাই হয়তো বাইডেনের বাধ্যবাধ্যকতা। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখা। ও দিকে ট্রাম্প আশা করছেন, কালোদের উত্থানের জন্যই ঘটবে সংখ্যাগরিষ্ঠের নীরব কিন্তু প্রবল, অনিবার্য ‘প্রতিরোধ’। যেমন হয়েছিল নিক্সনের ক্ষেত্রে। তবে কিনা, ১৯৬৮-তে নিক্সন তো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ছিলেন না।

ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক রুথ বাদার গিন্সবার্গের মৃত্যুও ট্রাম্পকে দিয়েছে পড়ে-পাওয়া সুযোগ। নজিরবিহীন ভাবে নির্বাচনের ৩৯ দিন আগে গিন্সবার্গের জায়গায় অ্যামি কোনি ব্যারেটের নাম সুপারিশ করেছেন ট্রাম্প। তিনি নিযুক্ত হলে সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট বিচারক সংখ্যা হবে যথাক্রমে ছয় আর তিন। ‘মেল-ইন’ ভোট নিয়ে যে পরিমাণ শোরগোল উঠেছে মার্কিন মুলুকে, তাতে এ বারের নির্বাচনের নিষ্পত্তি আদালতে হওয়ারই সম্ভাবনা। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২০০০-এ, সে বার ফ্লোরিডার ফল নিয়ে ৩৬ দিনের আইনি লড়াই-ই হারিয়ে দিয়েছিল অ্যাল গোর-কে। ভোটের আগেই ব্যারেট নিযুক্ত হলে এবং নির্বাচনটাকে আদালতে টেনে নিয়ে যেতে পারলে, পরবর্তী চার বছর হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হওয়ার দৌড়ে ট্রাম্প নিশ্চয়ই দু’কদম এগিয়ে থাকার আশা করছেন।

আচ্ছা, যে শ্বেতাঙ্গ প্রতিরোধের হাওয়ায় পাল তুলে জিতেছিলেন নিক্সন, কতটা বদলেছে তার চরিত্র এই আধ শতকে? জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার পরে আজ আমেরিকার শহরে শহরে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল বহু-সংখ্যক সাদা মানুষ। কেন্টাকির লুইভিলেতে তোলা একটা ছবি বেশ প্রচার পেয়েছে। শ্বেতাঙ্গ মহিলারা হাতে হাত ধরে আটকে দিচ্ছেন পুলিশকে, যাতে তারা না পৌঁছতে পারে কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিবাদীদের কাছে। বাহান্ন বছরে কতটা উত্তরণ হয়েছে আমেরিকা সমাজের, তারও পরীক্ষা নভেম্বরের নির্বাচনে।

অন্য বিষয়গুলি:

Donald Trump US Presidential Election Coronavirus Election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy