Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
United Nations

কাহার ক্ষতি

ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তৈল সরবরাহকারীর নাম ইরান, এবং ইরানের তৈল ও গ্যাস শিল্পে সর্ববৃহৎ বিদেশি বিনিয়োগকারী হইল ভারত। এই সহযোগিতার আবহ বজায় রাখা নয়াদিল্লির পক্ষে জরুরি, অতএব তেহরানকে সন্তুষ্ট রাখাও। u

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

ইরানের উপর রাষ্ট্রপুঞ্জের অস্ত্র-নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বলবৎ করিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইহার সহিত যে সব গোষ্ঠী ও ব্যক্তি ইরানের পারমাণবিক, মিসাইল ও চিরাচরিত অস্ত্র সংক্রান্ত কার্যকলাপ সমর্থন করে— তাহাদের উপর নূতন নিষেধাজ্ঞাও জারি হইল উক্ত নির্দেশে। ট্রাম্প জানাইয়াছেন, অস্ত্র সরবরাহ করিয়া ইরান অবশিষ্ট বিশ্বকে বিপন্ন করিয়া তুলিবে, ইহা মানিয়া লইবে না তাঁহার প্রশাসন। মার্কিন বিদেশনীতি একান্ত ভাবে তাহাদের নিজস্ব ব্যাপার হইলেও নিষেধাজ্ঞার পদ্ধতিটি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নহে। কোনও একটি দেশের ক্রিয়াকলাপ অপরাপর দেশের জন্য বিপজ্জনক প্রতীয়মান হইলে তাহার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পদ্ধতিটি পুরাতন। কিন্তু তাহা কি কার্যকর? না হইলে পুনঃপুনঃ নিষেধাজ্ঞার পরেও ইরান-সমস্যা মিটিবার সামান্যতম লক্ষণটুকুও কেন নাই? শেষাবধি ইহা মার্কিন বিদেশনীতির সিদ্ধান্ত হইলেও বারংবার ইরান সমস্যা এবং তৎসূত্রে নিষেধাজ্ঞার পুনরভিনয় নীতি হিসাবে এই পন্থার যাথার্থ্য লইয়া সংশয়ের ভিত পোক্ত করে।

বস্তুত, যাথার্থ্যের প্রশ্নটি গভীরতর। ইতিহাস বলিবে, নিষেধাজ্ঞা বরাবরই কোনও দেশের সরকার অপেক্ষা জনতারই অধিক ক্ষতিসাধন করে। অর্থনৈতিক অবরোধ সরাসরি সাধারণ মানুষের উপরেই আঘাত হানে। বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিংবা জীবনদায়ী ঔষধের সরবরাহ বন্ধ হইলে সরকারেরও পূর্বে জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হয়। ইতিমধ্যেই ইরানের চিকিৎসা ব্যবস্থার সহিত যুক্ত বহু কর্মীর আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক শ্বাসরোধ প্রকল্পটি বহু নাগরিকের প্রাণ কাড়িয়া লইতে পারে। পশ্চিম এশিয়ার রাজনীতি সরু সুতার উপর দোদুল্যমান, ভারসাম্যের অঙ্কটিই সেইখানে প্রধান। করোনাভাইরাসের প্রকোপ এমনিতেই সকল হিসাব গুলাইয়া দিতেছে, তদুপরি অর্থনৈতিক অবরোধ হইলে এই অঞ্চলের স্থিতাবস্থা হারানোই স্বাভাবিক। মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান ইহার অব্যবহিত ফল হইতে পারে। ইরানের স্থিতি নষ্ট হইলে সন্নিহিত অঞ্চলের কূটনীতি ও রাজনীতিতে তাহার প্রভাব পড়িবে। অনুমান করা যায়, ক্ষতির আঁচ এড়াইতে পারিবে না ভারতও।

বহু দিন যাবৎ নয়াদিল্লি-তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কটি এক বিচিত্র সাঁড়াশির ভিতর আবদ্ধ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চাপ বৃদ্ধি পাওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমানে আমেরিকার সহিত সম্পর্ক মধুর হইলেও ভারতের নিকট ইরানও অপরিহার্য। ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তৈল সরবরাহকারীর নাম ইরান, এবং ইরানের তৈল ও গ্যাস শিল্পে সর্ববৃহৎ বিদেশি বিনিয়োগকারী হইল ভারত। ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও দুই দেশের কিছু সাধারণ কৌশলগত আগ্রহ আছে। এই সহযোগিতার আবহ বজায় রাখা নয়াদিল্লির পক্ষে জরুরি, অতএব তেহরানকে সন্তুষ্ট রাখাও। ওয়াশিংটনের মত যাহাই হউক না কেন, এই নিষেধাজ্ঞা ভারতের দুশ্চিন্তা বাড়াইবে, কেননা ইরানের অভ্যন্তরীণ সামাজিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটিলে ভারতের স্বার্থেরও ক্ষতিগ্রস্ত হইবার আশঙ্কা আছে। সুতরাং, আন্তর্জাতিক ভাবে ইরান সরকারকে নিয়ন্ত্রণের প্রসঙ্গটি মার্কিন বিদেশনীতির বিষয় হইলেও তাহার সমান্তরাল ক্ষতিসমূহ আশঙ্কার সৃষ্টি করিতেছে বইকি। ইরানের পক্ষে, সন্নিহিত অঞ্চলের পক্ষে। ভারতীয় উপমহাদেশের পক্ষেও।

অন্য বিষয়গুলি:

United Nations Ban Iran
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy