Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অকর্তব্য

পর্যাপ্ত সরকারি কর্মী নিয়োগ করিয়া বয়স্কদের দেখভালের ব্যবস্থাও করা যাইতে পারে। কিন্তু পুলিশকে এই কাজে জড়ানো নিতান্ত অনুচিত। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

প্রবীণরা ভাল নাই। সাম্প্রতিক কালে পর পর নিঃসঙ্গ প্রবীণদের অপমৃত্যু এই কথাটি স্পষ্ট করিয়া দেয়। মৃত্যুর কারণ যে নিঃসঙ্গতা, তাহাতে সন্দেহ নাই। বিশ্বায়নের যুগে ক্রমশ আলগা পারিবারিক বন্ধন। বৃহৎ যৌথ পরিবার ভাঙিয়া ক্ষুদ্র হইতে ক্ষুদ্রতর। তদুপরি, কলিকাতায় চাকুরির বাজারের অবস্থা ভয়াবহ। পেশার প্রয়োজনে তরুণ-তরুণীদের এক বৃহৎ অংশই শহরের বাহিরে পাড়ি জমাইয়াছেন। বাড়ি আঁকড়াইয়া পড়িয়া আছেন শুধুমাত্র বৃদ্ধ বাবা-মা। সুতরাং, পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তার অভাবটিও প্রকট।

শহরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একাকিত্বের এই সমস্যা কিছুটা কমাইবার উদ্যোগ করিয়াছে পুলিশ। কোথাও বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়া প্রবীণদের খোঁজখবর লওয়া হইতেছে, কোথাও শুরু হইয়াছে এলাকার প্রবীণদের ফোন নম্বর সংগ্রহের কাজ। তাঁহাদের কাছে পৌঁছাইয়া দেওয়া হইতেছে পুলিশের নম্বর, কোথাও আবার অ্যাপ-এর সূচনা হইতেছে। আশ্বাস মিলিয়াছে, আকস্মিক অসুস্থতায়ও ত্রাতা হইবে পুলিশ, তাহারাই ডাকিয়া আনিবে অ্যাম্বুল্যান্স। এমন উদ্যোগ জরুরি, নিঃসন্দেহে। পাশে থাকিবার আশ্বাসটুকুই তো প্রৌঢ়ত্বের বড় প্রাপ্তি। কিন্তু প্রশ্ন হইল— সেই আশ্বাস কি পুলিশের নিকট হইতে আসিবার কথা? পুলিশের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা। বয়স্ক মানুষ আইনি সমস্যায় পড়িলে পুলিশ তাঁহাদের সাহায্য করিবে, প্রয়োজনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিরাপত্তার দিকটি দেখিবে। কিন্তু তাঁহাকে হাসপাতালে পাঠাইবার কাজটি পুলিশ করিবে কেন? বয়স্করাও ‘নাগরিক’, সুতরাং দেখভালের দায়িত্বটিও একান্ত ভাবেই সরকারের। বহু অ-সরকারি সংস্থা এই সংক্রান্ত কাজ করিয়া থাকে। তাহাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্থায়ী পরিকল্পনা করা যাইতে পারে। প্রয়োজনে এই বিষয়ে আলাদা দফতর চালু করা হউক। পর্যাপ্ত সরকারি কর্মী নিয়োগ করিয়া বয়স্কদের দেখভালের ব্যবস্থাও করা যাইতে পারে। কিন্তু পুলিশকে এই কাজে জড়ানো নিতান্ত অনুচিত।

অনুমান করা চলে, পুলিশের উপর দায়িত্ব দিবার কারণ অন্য। জনমানসে তাহার ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টা। বর্তমানে সামান্য গোলযোগেও পুলিশই সর্বাগ্রে আক্রমণের লক্ষ্য হইয়া যায়। ভাবমূর্তি উদ্ধার করিতে তাই তাহাকে ফুটবল খেলিতে হয়, পড়ুয়াদের ইংরেজি শিখাইবার দায়িত্ব লইতে হয়, পূজার দিনে বয়স্কদের মণ্ডপে লইয়া যাইবার ব্যবস্থা করিতে হয়, যে কাজের একটিও তাহার দায়িত্ব নহে। স্ব-ইচ্ছায় কিছু উদ্যোগ স্বাগত। কিন্তু এই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগগুলি প্রাত্যহিকতায় পরিণত হইতে বসিলে তাহাতে আপত্তি করা সরকারের কর্তব্য। প্রশ্ন উঠিতে পারে, পুলিশ কি সরকারের অংশ নহে? সে কোনও কাজ করিলে তাহা তো পরোক্ষে সরকারেরই কাজ বুঝায়। ইহাতে সরকারের জনসংযোগের কাজটিও হয়। এই কথায় ভুল নাই। কিন্তু প্রত্যেক বিভাগের একটি দায়িত্ব নির্দিষ্ট থাকে। এক জন শিক্ষক যেমন ট্রাফিক সামলাইতে পারেন না, তেমনই, নাগরিকের ‘ভাল’ থাকার দায়িত্বটিও পুলিশ লইতে পারে না। আর, পুলিশকে ছাড়াও জনসংযোগের কাজটি করা যায়। সর্বোপরি, পুলিশ বিভাগের উপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাজনিত কাজের চাপ অত্যধিক। ইহার উপর এই সামাজিক গুরুদায়িত্বটি তাহাকে পালন করিতে হইলে আম, ছালা কোনওটিই রক্ষা পাইবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Elderly Couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy