শক্তিকান্ত দাস যে ঔষধটি দিয়াছেন, তাহাতে একটিই গোলমাল— ভারতীয় অর্থনীতির এখন যে অসুখ, উহা সেই ব্যাধির ঔষধ নয়। তিনি রিভার্স রেপো রেট আরও এক দফা কমাইয়াছেন। অর্থাৎ, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নিকট স্বল্পমেয়াদে টাকা জমা রাখিলে আরও কম সুদ পাইবে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আশা, এই দাওয়াইয়ে ‘অলস’ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কোমর বাঁধিয়া বাজারে ধার দিতে নামিবে। তাহার ফলে বাজারে নগদের জোগান বাড়িবে, বিনিয়োগে গতি আসিবে, অর্থব্যবস্থাও ঘুরিয়া দাঁড়াইবে— প্রত্যাশার পরিচিত ছক। এই গল্পে একটিই গরমিল থাকিয়া গিয়াছে: অর্থব্যবস্থার এই বিপত্তি নগদের জোগানের অভাবে আদৌ ঘটে নাই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এই কথাটি বুঝিতে পারিতেছে না, তাহা আশ্চর্যের। গত এক বৎসরেরও বেশি সময় ধরিয়া রিভার্স রেপো রেট ছয় শতাংশের নীচে থাকিয়াছে। অতি সামান্য সুদের হার। এই কানাকড়ি পাইয়াও বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি যদি তাদের উদ্বৃত্ত পুঁজি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে জমা রাখে, তাহার একটিই কারণ— বাজারে ঋণের চাহিদা এতই কম যে এই সামান্য সুদেও কেহ ধার লইতে রাজি নহে। বাজারে চাহিদা নাই, এই অবস্থায় নূতন লগ্নি করিবার কোনও কারণ বিনিয়োগকারীরা দেখিতেছেন না। আজ সম্পূর্ণ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সেই পরিস্থিতি পাল্টাইয়া যাইবে, সুদের হার আর একটু কমিলেই লগ্নিকারীরা পুঁজি লইতে ঝাঁপাইবেন, এই প্রত্যাশাটিতে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব প্রকট।
বাজারে ঋণ দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উপর চাপ বাড়াইলে একটি অন্য বিপদের সম্ভাবনা প্রকট। ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক বিচারে যে ঋণপ্রার্থী ঋণ পাইবার যোগ্য নহেন, ব্যাঙ্কগুলি বাধ্য হইয়া তাহাদেরও ঋণ দিতে আরম্ভ করিবে, কারণ টিকিয়া থাকিতে হইলে সুদ উপার্জন বই গতি নাই। বহু ক্ষেত্রেই এই ঋণপ্রার্থীরা বিপুল ঝুঁকি লইবেন। ইহা কার্যত সেল্ফ সিলেকশন বা স্বনির্বাচন— কারণ, যাঁহারা বিচক্ষণ, ঝুঁকির বিষয়ে সাবধানী, তাঁহারা এই বাজারে লগ্নি করিতে অনাগ্রহী; যাঁহারা লগ্নি করিতে চাহিতেছেন, তাঁহারা স্বভাবতই ঝুঁকিপ্রবণ। তেমন গ্রাহককে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়িবার আশঙ্কাও তীব্রতর হইবে। এক সঙ্কট হইতে নিস্তার পাইবার ভুল প্রচেষ্টায় ভিন্নতর সঙ্কটে গিয়া পড়া সুবিবেচনার পরিচয় নহে। অনাদায়ী ঋণের ধাক্কায় শেষ অবধি ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাটি বিপর্যস্ত হইলে যে বিপদ তৈরি হইবে, তাহার কথা ভাবিলেও শিহরাইয়া উঠিতে হয়। অতএব, কোন সিদ্ধান্তের পরিণতি কী হইতে পারে, ঘোষণা করিবার পূর্বে তাহা ভাবিয়া লওয়া বিধেয়।
এখন ভারতীয় অর্থব্যবস্থার মূল দুইটি সমস্যা হইল— এক, সাধারণ মানুষের হাতে টাকার অভাব, ফলে বাজারে চাহিদার অভাব; দুই, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রাত্যহিক কাজ চালাইবার পুঁজি অর্থাৎ ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি। অর্থব্যবস্থাকে চাঙ্গা করিতে হইলে এই দুইটি দিকে নজর দেওয়া বিধেয়। শ্রীদাস জানাইয়াছেন, এনবিএফসিগুলির জন্য ৫০,০০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা হইতেছে। প্রথমত, অঙ্কটি যথেষ্ট নহে; দ্বিতীয়ত, শুধু ঋণ হিসাবে নহে, এই মুহূর্তে সাহায্য হিসাবেই সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলিয়া দেওয়া প্রয়োজন। তাহার জন্য প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর, একশত দিনের কাজের প্রকল্পে অগ্রিম মজুরির ন্যায় পথের কথা ভাবিতে হইবে। অন্য দিকে, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রাত্যহিক কাজ চালাইয়া যাওয়ার জন্য টাকা ঋণ দিতে হইবে। তাহার জন্য ঋণের সীমা বৃদ্ধির কথা বলিতে হইবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককেই। এক দিকে বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, এবং অন্য দিকে সেই চাহিদা মিটাইবার জন্য উৎপাদন সংস্থাগুলিকে তৈরি থাকিতে সাহায্য করা— এই দ্বিমুখী নীতিই ভারতীয় অর্থব্যবস্থার রক্ষাকবচ হইতে পারে। সুদের হার কমাইয়া বিশেষ সুবিধা হইবে না।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy