ছিল রুমাল, হয়ে গেল একটা বিড়াল। অথবা সচল-সজীব বিড়ালটা আচমকা নিশ্চল-নির্জীব রুমালে পরিণত হল। যে কোনও হাই-প্রোফাইল মামলার মতো সোহরাবুদ্দিন শেখ এনকাউন্টার বা ভুয়ো এনকাউন্টার মামলাটাও সত্য এবং মিথ্যার মাঝের ব্যবধানটাকে বারবার অতিক্রম করতে করতে শেষ হল। আমাদের দেশে অধিকাংশ হাই-প্রোফাইল মামলার গতিবিধি এবং পরিণতি যে পথে এগোয়-পিছয়, এই মামলাও তার ব্যতিক্রম হল না। মামলার নিষ্পত্তি হল বটে, কিন্তু সত্যের জয় হল, নাকি অপলাপ হল, তা নিয়ে ধন্দ উত্থাপনের অবকাশ কারও কারও হাতে রয়ে গেল।
২০০৫ সালে গুজরাত পুলিশের সঙ্গে এক এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় সোহরাবুদ্দিন শেখের। এনকাউন্টারটা সত্যিই ঘটেছিল, নাকি সাজানো এনকাউন্টারে সোহরাবুদ্দিনকে মারা হয়েছিল— এই তর্ককে কেন্দ্র করে দেশের রাজনীতি বারবার উত্তাল হয়েছে। মামলাটায় নাম জড়িয়েছিল অমিত শাহের। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের দেশে কোনও বড় রাজনীতিকের নাম কোনও মামলায় জড়ালেই সে মামলা আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে না। অভিযোগের সত্যতা থাক বা না থাক, মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই যুযুধান দু’পক্ষ নিজের নিজের মতো করে ফয়সালা শুনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। সোহরাবুদ্দিন মামলার ক্ষেত্রেও তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম ঘটল না।
হাই-প্রোফাইল মামলা, অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। আদালতের নির্দেশেই মামলাটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্রে। সেখানে মামলার নিষ্পত্তি ঘটল। মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ২২ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস হিসেবে ঘোষণা করল। বিচারক জানালেন, সিবিআইয়ের পেশ করা তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে প্রমাণ তো হচ্ছে না যে, সোহরাবুদ্দিন শেখকে ভুয়ো এনকাউন্টারে খুন করা হয়েছিল। অতএব, অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আদালতের রায় শিরোধার্য। সোহরাবুদ্দিন শেখের মৃত্যুর ঘটনাকে আর ভুয়ো এনকাউন্টার বলা যাবে না। কিন্তু হলফ করে বলা যায়, বিতর্ক এর পরেও থামবে না। থামবে না রাজনৈতিক কারণেই। যাঁরা এই ঘটনাকে ভুয়ো এনকাউন্টার বলে দাবি করছিলেন, তাঁরা এখনও সেই তত্ত্বেই অটল থেকে যাবেন। সিবিআই ইচ্ছাকৃত তদন্ত দুর্বল করেছে বলে অভিযোগ উঠতে থাকবে। পাল্টা আক্রমণও চলতে থাকবে। দুর্ভাগ্যজনক এটাই। রাজনীতি এত বার হস্তক্ষেপ করেছে নানা মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় যে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের মধ্যবর্তী সীমারেখাটাই এ সব ক্ষেত্রে ধূসর হয়ে গিয়েছে। হাই-প্রোফাইল মামলাগুলোর ক্ষেত্রে তাই নিষ্পত্তির পরেও বিতর্ক থামতে চায় না। এই পরিস্থিতি বা এই বাতাবরণ কাম্য নয়। দেশের বিচারব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর উপরে নাগরিকের আস্থা থাকা জরুরি। সেই আস্থা পূর্ণ মাত্রায় ধরে রাখার জন্য এ বার কিন্তু রাজনীতিকদেরও উদ্যোগী হওয়ার সময় এসে গিয়েছে। আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ জরুরি বিচারব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের তরফ থেকেও।
আরও পড়ুন: সোহরাবুদ্দিন হত্যা মামলায় বেকসুর খালাস ২২ অভিযুক্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy