একনায়ক হইবার অভ্যাসটি বেশ নাছোড়, মৃত্যুপথযাত্রী একনায়কও ক্ষমতার মায়া ছাড়িতে পারেন না। তিরানব্বই বছর বয়সি একনায়ক রাষ্ট্রপতি তড়িঘড়ি ব্যবস্থা করিতে চাহেন যাহাতে তাঁহার বাহান্ন বছরের স্ত্রী দেশের উপরাষ্ট্রপতি হন, যাহাতে নিজের ভালমন্দ হইলেও একনায়কের ক্ষমতা কোনও মতেই পরিবারের বাহিরে না যায়। একই ভাবে, যে সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই নিজের দেশের শাসনকার্য চালাইবার স্বাদ পাইয়াছে, তাহার পক্ষেও দেশ শাসন ও সামরিক অভ্যুত্থানের মায়া কাটাইয়া ওঠা ভয়ানক কঠিন, নিজের মুষ্ঠিতে ক্ষমতা জড়ো করিতে তাহারা সদাই আশাবাদী। এই দুই ঘটনাই এই মুহূর্তে জিম্বাবোয়ে নামক দেশটিকে এক ভয়ানক তরলাবস্থায় রাখিয়াছে। বিশ্বের দীর্ঘতম একনায়ক-শাসনের উপাধিধারী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে হঠাৎ সক্রিয় হইয়া নিজেরই সহকারী ও দলীয় নেতাকে ভাইস-প্রেসিডেন্টকে পদ হইতে সরাইয়া নিজের স্ত্রীকে সেই পদে অভিষিক্ত করিবার ব্যবস্থা করিলে গোটা দেশ অশান্ত হইয়া উঠে, সামরিক বাহিনী প্রেসিডেন্টকে কার্যত গৃহান্তরিন করে, রাস্তায় কুচকাওয়াজ চালাইয়া অশান্তি দমন করিতে চাহে। একেই সামরিক অভ্যুত্থান বলে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এখনও বিশ্বজনমত এই শব্দদ্বয়কে স্বীকৃতি দিতে চাহে না, এবং আফ্রিকান ইউনিয়নও তাহা বলিতে চাহিতেছে না। আসলে, সামরিক অভ্যুত্থান হিসাবে এই ঘটনাকে স্বীকার করিয়া লইলে জিম্বাবোয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী হইতে বাদ পড়িয়া যাইবে, রাষ্ট্রপু্ঞ্জের কাছেও স্বীকৃতি হারাইবে। সেই কারণেই কোদালকে কোদাল বলিতে এই অনীহা।
কোদাল না বলিয়া তাই ঘটনাটিকে বলা হইতেছে, মিলিটারি কারেকশন— সামরিক সংশোধন। এই শব্দবন্ধ একটি ভবিতব্যতার দিকে ইঙ্গিত করিতেছে, যে কোনও প্রকারে মুগাবেকে ক্ষমতা হইতে অপসারণ। যেহেতু তাঁহার নিজের দল, শাসক পার্টি, জানু-পিএফ-এর প্রধান গোষ্ঠীর কাছেও তিনি আর বাঞ্ছিত নহেন, সে কারণে এই অপসারণ এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। মাঝে রহিয়াছে কেবল একটি কাজ। শাসক গোষ্ঠীর যে অংশটি মুগাবে-পন্থী, এবং বিভিন্ন ভাবে মুগাবে-শাসনের দুর্নীতির অংশভাজন, তাহাদের ক্ষমতাহীন করা। সেই অংশটি যে নিতান্ত ফেলনা নহে, এত কাণ্ডের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন-সুলভ গাউন-পরিহিত চেহারায় প্রেসিডেন্ট মুগাবের আকস্মিক আবির্ভাবই তাহা বুঝাইয়া দেয়। সেনাকর্তারা হারারে-র রাস্তায় সেনাদের কুচকাওয়াজ করাইতে করাইতে নিশ্চয় বলিতেছেন, ধীরে বাহিনী, ধীরে!
বাস্তবিক, ধীরে না চলিয়া গত্যন্তর নাই। অপসারিত উপরাষ্ট্রপতি নানগাগওয়াই সামরিক বাহিনীর পছন্দের নেতা। রাতারাতি অভ্যুত্থান না ঘটাইয়া তাহা হাসিল করা যাইবে না।
এ দিকে, অভ্যুত্থান ঘটিলেও দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হইতে পারে। পরিস্থিতি কঠিন। এত কিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে কেবল একটি কথা ধ্রুবতারার মতো স্থিরপ্রভ নিশ্চয়তায় দীপ্যমান। তাহা হইল, জিম্বাবোয়ের জনগণের নিকট ক্ষমতা এখনও একটি অবাস্তব আশা, তাঁহাদের সামনে পড়িয়া কেবল কর্তৃত্ববাদী শাসনচ্ছায়ার ভবিষ্যৎ— হয় এই নেতার, নয় ওই নেতার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy