প্রতীকী ছবি।
পুনরায় শুটিং শুরু হইয়াছে। সিরিয়াল বা সিনেমা আধুনিক জীবনে কেবল বিনোদনের উপাদান নহে, দৈনন্দিনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। নূতন এপিসোড দেখিবার সুযোগ না থাকিলে মানুষ পুরাতনই দেখে, কিন্তু দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে আদৌ কোনও নাট্যকাণ্ড না দেখিয়াশুনিয়া স্বেচ্ছায় একটি পূর্ণ দিবস অতিবাহিত করা ইদানীং অবাস্তব। তাই স্টুডিয়োপাড়ায় পুনরায় প্রাণের স্পন্দনের অর্থ জনসাধারণের হৃৎপিণ্ডে নূতন প্রাণশক্তির সিঞ্চন। অবশ্য স্টুডিয়োর তোরণে দাঁড়াইয়া আছে থার্মাল স্ক্যানিং-এর যন্ত্র লইয়া কড়া দ্বারবান, অভিনেতার নিকট প্রতিভার অপেক্ষা অধিক প্রত্যাশিত স্যানিটাইজ়ারের বোতল, আর লোকে মুখচ্ছদ পরিয়া থাকায় সহ-অভিনেতাকে অর্ধেকেই চিনিতে পারিতেছেন না, বা না চেনার ভানকে দৃঢ়ভিত্তি দিতেছেন। ফ্লোরে নায়ক বা নায়িকা প্রবল প্রেমের দৃশ্যেও যথেষ্ট দূরত্ব রাখিয়া দাঁড়াইতেছেন, কেহ সংলাপ মুখস্থ করিবার পূর্বে স্ক্রিপ্টে শোধক-তরল স্প্রে করিয়া লইতেছেন, কেহ ঘন ঘন উষ্ণ জল খাইতেছেন প্রতিরোধ-ক্ষমতা বজায় রাখিতে। সব মিলাইয়া, এক জরুরি অবস্থা, কিন্তু একই সঙ্গে তাহার মোকাবিলা করিয়া শিল্প নির্মাণের ইতিবাচক অঙ্গীকার।
ভাইরাস আসিয়া চলচ্ছবির কী পরিমাণ পরিবর্তন ঘটাইবে, তাহা লইয়া আলোচনা বেশ কিছু দিন চলিয়াছে। চুম্বন বা আশ্লেষ বাংলা সিরিয়ালে কোনও দিনই প্রশ্রয় পায় নাই, এমনকি হিংসাও শারীরিক মারামারির স্তরে আসে না, প্রধানত বিষ দিয়া বা গাড়ির ধাক্কা মারিয়াই হত্যার চক্রান্ত চলে। ফলে, সম্ভবত কোনও বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়োজন ঘটিবে না। চলচ্চিত্রে অধুনা শরীর-বিনিময় কিঞ্চিৎ বিশদ ভাবে দেখানো হইতেছে, তাহা বাদ যাইয়া সূক্ষ্ম প্রণয়-ইঙ্গিত আসিলে বাঙালি সুখী বই দুঃখী হইবে না। সুতরাং মূল সমস্যাটি কেবল নির্মাণ-প্রক্রিয়ায়। তবে, শুটিংকালে কম সংখ্যক লোক থাকিলে অসুবিধা ঘটিবে, না আখেরে তাহাতে শুটিং দক্ষতর ভাবে চলিবে, তাহা লইয়াও তর্ক রহিয়াছে। শুধু ইহাতে সন্দেহ নাই, ভীতিহীন পরিবেশে অনেকে মিলিয়া হইহই করিয়া কাজ করা ও গল্প করা, সকলে মিলিয়া বসিয়া খাওয়া, ইহার মধ্য দিয়া যে বন্ধুতা ও ঐক্য একটি শিল্পনির্মাণ প্রক্রিয়াকে আনন্দময় ও সার্থকতর করিয়া তুলে, তাহা অনুপস্থিত থাকিবে। বিরতির সময় সকলে নিজ বাসস্থান হইতে আনীত খাদ্য খাইতেছেন, ইহাও বাংলার শুটিংয়ে নূতন দৃশ্য।
মানুষ প্রায় যে কোনও নূতনতায় অভ্যস্ত হইয়া যাইতে পারে। মেক-আপ শিল্পী নভোচারীর ন্যায় পোশাক পরিয়া থাকিলে, রিহার্সালের কালে মাস্কের মধ্য দিয়াই ক্রোধ প্রকাশ করিলে, প্রতিটি অলঙ্কার স্যানিটাইজ় করিয়া তবে গাত্রে চড়াইয়া পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করিতে হইলে, প্রথমে ঝঁাকুনি লাগিবে। পরে সকলই এমন স্বাভাবিক মনে হইবে যে, কোনও দিন যদি করোনাভীতি উবিয়া যায়, তখন মাস্ক না পরা মানুষ দেখিলে আঁতকাইয়া চক্ষু আবৃত করিতে হইবে প্রতিবর্ত ক্রিয়ায়। এই নূতন অস্বস্তি, পুরাতনের জন্য দীর্ঘশ্বাস, এবং অবশ্যই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করিবার প্রতিজ্ঞা যদি কোনও আকর্ষক সিরিয়াল বা ছবির কাহিনিকেন্দ্র হইয়া দাঁড়ায়, দেখিয়া মানুষ প্রচুর তালি দিবেন, হয়তো পাশ্বর্বর্তী দর্শকের সহিত হাই-ফাইভও করিবেন, এবং তাহার পরে হস্ত প্রক্ষালন করিতে ভুলিবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy