Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছি!

টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদির মহিমা এই কারণেই যে, তাহারা একটি কথা বা ছবিকে মুহূর্তের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বময় ছড়াইয়া দিতে পারে।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

দ্য বেস্ট ল্যাক অল কনভিকশন, হোয়াইল দ্য ওয়ার্স্ট আর ফুল অব প্যাশনেট ইনটেনসিটি। অর্থাৎ, যাঁহারা শ্রেষ্ঠ তাঁহাদের কোনও প্রত্যয় নাই, আর নিকৃষ্টতমরা তীব্র আবেগে আপ্লুত।— ১৯১৯ সালে লিখিয়াছিলেন ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস। প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান-লগ্নের ইউরোপ আর বর্তমান ভারতের মধ্যে দূরত্ব অনেক। কিন্তু একশো বছর পরে এই দেশের নির্বাচনী চালচিত্রটিতে তাঁহার ওই উক্তি দিব্য মানাইয়া যায়। বিদ্বেষের কারবারিরা প্রচণ্ড আবেগে রাজনীতির ময়দান কাঁপাইতেছেন, উদারপন্থীরা সাধারণ ভাবে বিরস, মলিন। কিন্তু এহ বাহ্য। অশুভ শক্তির দাপট ও সুস্থচিন্তার দুর্বলচিত্ত সংশয়— এই দ্বৈতের বাহিরে থাকিতে পারে এক তৃতীয় মানসিকতা, যাহা একই সঙ্গে কুৎসিত এবং করুণ। তাহারই একটি নজির রাখিয়াছে সিপিআইএম দলের রাজ্য সম্পাদকের সাম্প্রতিক টুইটার পোস্টটি। সেখানে বিবিধ র-ধ্বনিযুক্ত ইংরেজি শব্দের বিকৃত উচ্চারণের তালিকা দিয়া বলা হইয়াছে, (উচ্চারণে) র-কে ফেরত চাহিলে বামদের ভোট দিতে। পোস্টটিতে কাহারও নাম করা হয় নাই, কিন্তু এই ব্যঙ্গের লক্ষ্য কে বা কাহারা, তাহা অনুমানের জন্য কোনও পুরস্কার নাই। সূর্যকান্ত মিশ্র তথা তাঁহার দল স্পষ্টতই রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তথা তাহার নেতৃত্বের শিক্ষা লইয়া খোঁটা দিয়াছেন। সেই খোঁটা এতই নিম্নমানের যে তাহা ‘ওয়ার্স্ট’ অভিধারও যোগ্য নহে। ওয়ার্স্টকে— আপন নিকৃষ্টতায়— বেস্ট-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হইতে হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উচ্চারণে র-ফলা খুঁজিবার বাসনা যে মনের পরিচয় বহন করে, তাহা ধর্তব্যই নহে। সেই মনের অন্তর্নিহিত অ-সভ্যতা চণ্ডীমণ্ডপ হইতে রকের আড্ডায় প্রবাহিত। মিশ্রমহাশয়ের টুইটখানি সেই নোংরা জলের ধারাতেই ভাসিয়া আসিয়াছে।

এবং তাহা লইয়া রাজ্য সম্পাদকের কোনও অনুশোচনার পরিচয়ও মিলে নাই। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হইলে তিনি জবাব দিয়াছেন: টুইটারে যাহা আছে তাহাকে টুইটারেই থাকিতে দেওয়া হউক। কথাটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। টুইটার, ফেসবুক ইত্যাদির মহিমা এই কারণেই যে, তাহারা একটি কথা বা ছবিকে মুহূর্তের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বময় ছড়াইয়া দিতে পারে। সেখানে কোনও অন্যায় মন্তব্য করিয়া বসিলে প্রতিকারের একটিই উপায়: অবিলম্বে আপন ভুল বা অপরাধ স্বীকার করিয়া মার্জনা ভিক্ষা করা। কিন্তু অহমিকা মস্তকে উঠিলে মানুষ ভাবে ‘যাহা করিয়াছি বেশ করিয়াছি, যাহা বলিয়াছি ঠিক বলিয়াছি।’ সূর্যকান্তবাবু মুখে তাহা বলেন নাই, কিন্তু তাঁহার মনোগত কথাটি সহজবোধ্য। বঙ্গীয় রাজনীতির বিবিধ আঘাটায় ঠেকিতে ঠেকিতে তাঁহার দল যেখানে পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে দলনেতার এই অতি নিম্নমানের কুবাক্য লইয়া সময় নষ্ট করিবার হয়তো কোনও কারণ নাই। এবং এই অ-সভ্যতা হয়তো বা বঙ্গীয় কমিউনিস্ট পার্টির ডিএনএ-গত ব্যাধি। তোজোর কুকুর হইতে কানা বেগুন, অনিল বসু হইতে বিনয় কোঙার— সেই ব্যাধির ইতিহাস দীর্ঘ। এক হিসাবে, রাজ্য সম্পাদক সেই ঐতিহ্য সমানে চালাইতেছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটিই। রাজ্যপাটের বাকি কিছু নাই, মতাদর্শের মহিমা আগেই অস্তমিত, এখন তাহার আস্ফালনও অন্তর্হিত। এই অতলে দাঁড়াইয়া অন্তত স্বাভাবিক সৌজন্যটুকু দেখানো যায় না কি? যাহাতে বাঙালি বলিতে পারে— যাক প্রাণ, থাক মান।

অন্য বিষয়গুলি:

Surjya Kanta Mishra Twitter Mockery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE