Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের শাস্তি

মুশকিল বাধিয়াছিল যখন ব্রেক্সিট লইয়া একটি গণভোট হইয়া গেল পরবর্তী পদক্ষেপগুলি স্থির না করিয়াই। ব্রেক্সিট নিশ্চিত হইয়া গেল, এ দিকে কী ভাবে, কোন প্রকারে সেই নিষ্ক্রমণ ঘটিবে, তাহার অআকখ-ও স্থির হইল না।

থেরেসা মে।

থেরেসা মে।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

একের পর এক সঙ্কটের মিছিল, ব্রিটেনে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতৃস্থান হইতে নামিয়া আসিলে শুরু হইবে তাহার শেষতম সঙ্কট— তাঁহার উত্তরসূরি লইয়া। এই শেষ সঙ্কটটি ঘনিষ্ঠ ভাবে পূর্বের সঙ্কটগুলির সহিত যুক্ত, কেননা যিনিই উত্তরসূরি হউন না কেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হইতে বাহির হইয়া আসিবার বন্দোবস্তটি তাঁহার ঘাড়েই পড়িবে। কনজ়ারভেটিভ পার্টির ১২৪,০০০ সদস্যের অশান্তি ও উদ্বেগ এই মুহূর্তে নিশ্চয় তীব্র, কেননা খুব নরম করিয়া বলিলেও, ব্রেক্সিট তাঁহাদের দেশকে আড়াআড়ি দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া দিয়াছে, যে দুই ভাগের মধ্যে সম্পর্ক অতীব তিক্ত ও কষায়। মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়া গোটা ব্রিটিশ সমাজের ভাঙিয়া খাদে পড়িবার সম্ভাবনা। সমস্যা তীব্র করিয়াছে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ভোটের নির্ধারণ: ‘নো-ডিল ব্রেক্সিট’ চলিবে না। বাস্তবিক, ইইউ ছাড়িয়া বাহির হইয়া আসার পরিকল্পনাটি লইয়াই বিস্তর প্রশ্ন উঠিয়াছে। আরও দিন গেলে সেই প্রশ্ন আরওই সজোর হইয়া উঠিবে বলিয়া সন্দেহ হইতেছে।

মুশকিল বাধিয়াছিল যখন ব্রেক্সিট লইয়া একটি গণভোট হইয়া গেল পরবর্তী পদক্ষেপগুলি স্থির না করিয়াই। ব্রেক্সিট নিশ্চিত হইয়া গেল, এ দিকে কী ভাবে, কোন প্রকারে সেই নিষ্ক্রমণ ঘটিবে, তাহার অআকখ-ও স্থির হইল না। প্রধানমন্ত্রী মে বলিয়াছিলেন, ব্রেক্সিট-এর কথা মাথায় রাখিয়া দেশে অনেক লগ্নি হইবে, কর্মসংস্থান বাড়িবে, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে অনেক অর্থধারা প্রবাহিত হইবে। হায়, ব্রেক্সিটও অনিশ্চিতির গাঁটে আটকাইয়া গেল, ব্রিটেনবাসীর উন্নত কর্মসংস্থানের স্বপ্নও অনিশ্চিতির ফাঁদে পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল। অনেক ব্রিটিশ নাগরিক বুক বাঁধিয়াছিলেন এই আশায় যে ব্রেক্সিট হইলেই অভিবাসীদের আগমন আটকানো যাইবে, ফলে চাকরির সুযোগসুবিধা বাড়িবে। অভিবাসী-বিরোধিতার এই মনোভাবটিই গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে ফলাফল যাইবার একটি প্রধান কারণ। ইইউ-এর লক্ষ্য: তাহার অন্তর্গত দেশগুলির মধ্যে যাতায়াতে কোনও বাধা না রাখা। এবং ব্রিটেনের জনসমাজের এক বড় অংশের তাহাতেই সবচেয়ে বেশি আপত্তি। চাকরি হউক বা না হউক, যে কোনও মূল্যে অভিবাসন নামক ‘সমস্যা’টির মূলে কুঠারাঘাত করিবার রাজনীতির মূলে জলসিঞ্চন করিয়াছেন যে নেতারা, তাঁহারা তাই ব্রেক্সিট গণভোটের পর অত্যন্ত উল্লসিত হন, স্বয়ং টেরেসা মে তাঁহাদের অন্যতম। ইহা তাঁহার কাছে ব্যক্তিগত জয়ের শামিল ছিল।

ঠিক সেই কারণেই গণভোটের তিন বৎসর পর টেরেসা মে-র ব্যক্তিগত পরাজয় ঘটিল, তাঁহাকে আজ আসন হইতে নামিতে হইতেছে। অর্থাৎ দেশের মূল ভাবটি ইতিমধ্যে অনেকখানি ঘুরিয়া গিয়াছে। কিন্তু পিছাইয়া আসিবার জো নাই। অর্থনীতিকে অন্য ভাবে চাঙ্গা করিবারও উপায় নাই। প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার নেতা জেরেমি করবিন যতই ব্রিটেনে বিপ্লব ঘটাইবার স্লোগান দিয়া সমাজে তরঙ্গ তুলুন, এই একটি কাজ তাঁহাদের ক্ষমতার অতীত। কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্য কোনও নেতা আসিয়াও বিশেষ সুবিধা করিতে পারিবেন বলিয়া মনে হয় না। ব্রিটেন আপাতত সঙ্কটেই বাঁচিবে। অবশিষ্ট বিশ্ব ইহা হইতে কিছু শিক্ষা লইতে পারে। প্রথমত, ভোট অতি বিষম বস্তু। তাহার অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ব্যঞ্জনা আছে। সুতরাং, দ্বিতীয়ত, ভাবিয়া চিন্তিয়া ভোট দেওয়াই ভাল।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Theresa May Britain British Vote Brexit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy