প্রতীকী ছবি।
পুলিশ আইন সংশোধনের পদক্ষেপ হইতে পিছু হটিল কেরলে পিনারাই বিজয়নের সরকার। আইনের উদ্দেশ্য লইয়া প্রতিবাদ আরম্ভ হইয়াছিল। আইন পাশ হইলে সমাজমাধ্যমে মন্তব্য-সহ যে কোনও ভাবে মিথ্যা গুজব বা মানহানিকর বার্তা ছড়াইবার অপরাধে কারাবাস ও জরিমানা-সহ কঠোর দণ্ডবিধানের ব্যবস্থা হইত। ইহা প্রকারান্তরে বাক্স্বাধীনতা খর্ব করিবার কৌশল, এবং সেই কারণেই অসাংবিধানিক, বিরোধী দলগুলির এই আপত্তির জেরে বাম সরকার আইন সংশোধন রদ করিয়াছে, বিধানসভায় আলোচনা করিবার ও সকলের মতামত শুনিবার আশ্বাস দিয়াছে।
এই পশ্চাদপসরণে যে গণতন্ত্র সুরক্ষিত হইল তাহা লইয়া সন্দেহ নাই। কিন্তু এই ঘটনা আরও এক বার ‘ফ্রি স্পিচ’ ও ‘হেট স্পিচ’ লইয়া বিতর্ককে আলোচ্য করিয়া তুলিল। বাক্স্বাধীনতা ভারতীয় গণতন্ত্রের স্তম্ভস্বরূপ, কাহারও ক্ষতি না করিয়া স্বাধীন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাইতেছে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের স্বাধীন মতপ্রকাশ অপরের বিদ্বেষের কারণ হইয়াছে। একের বাক্স্বাধীনতার স্ফূর্তিতে অন্যের ভাবাবেগে আঘাত এবং পরিণামে সংঘর্ষ এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনা এই তর্ক তুলিয়া দিয়াছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানেই কি যাহা ইচ্ছা তাহা বলিয়া দেওয়া? কাহারও স্বাধীন মন্তব্যে অন্য কাহার কোন বিশ্বাসের গোড়ায় ঘা লাগিতেছে, কোনও ব্যক্তি কোন প্রেক্ষিতে বা কী উদ্দেশ্যে কোনও মন্তব্য করিতেছেন, তাঁহার বা তাঁহার দল-গোষ্ঠীর মূল্যবোধ ও মতাদর্শ কী, সেইগুলিও বিবেচ্য, কারণ তাহার নিরিখেই একের স্বাধীন মত অন্যের কাছে বিদ্বেষ-বার্তা বা উস্কানি হইয়া দাঁড়াইতেছে। কেরল সরকার এই বিদ্বেষ-বার্তার বাড়বাড়ন্ত তুলিয়া ধরিয়াই আইন সংশোধনের উদ্যোগ করিতেছিল। কিন্তু বিরোধীরা বলিলেন, বিদ্বেষ-বার্তা আটকাইবার এই প্রয়াস পক্ষান্তরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা হইয়া দাঁড়াইতেছে। আসলে এই দুইয়ের মধ্যেকার সীমারেখাটি আজিকার ভারতে অতি সূক্ষ্ম, এবং সেই কারণেই অস্পষ্ট এবং জটিল। তবু সমস্ত কিছুর পরেও সংবিধানে স্বীকৃত বাক্স্বাধীনতাকে দমাইতে আইন আনিবার কথা মানিয়া লওয়া যায় না। কেরলের ঘটনা তাহাই প্রমাণ করিল।
ইহাও মনে রাখিবার, আজ কেরলে বিজেপির পক্ষ হইতেও প্রতিবাদ শোনা যাইতেছে বটে, কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপির শাসনেই গত কয়েক বৎসরে বাক্স্বাধীনতা খর্বের বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত হইয়াছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী স্বরকে দেশদ্রোহ দাগাইয়া দেওয়া, ভিন্ন মতাদর্শের বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ করিয়াও শেষ মুহূর্তে না বলিয়া দেওয়া, এহেন বিস্তর উদাহরণ মিলিবে। সমাজে সর্বস্তরে বিদ্বেষ-বার্তার বাড়বাড়ন্ত আগে এত ছিল না। এই প্রবণতা উদ্বেগের। দল আসিবে যাইবে, সরকার পাল্টাইবে, কিন্তু অন্যকে কথা বলিতে না দিলে, পছন্দ না হইলেই অন্যের কণ্ঠরোধ করিলে সমাজে অসহিষ্ণুতা বাড়িতে বাড়িতে এক সময় এই প্রবণতাই স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য হইয়া দাঁড়ায়। বিজেপির আমলে বাক্স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ সত্য, কেরলে বাম সরকারের দিকেও সেই অভিযোগের আঙুল উঠিল। বাক্স্বাধীনতা ধর্ম বা স্বভাবের মতো, তাহাকে সর্বাবস্থায় নিঃশর্তে মানিয়া চলিতে হয়। বাম কি দক্ষিণ যাহাই হউক, এই পন্থা মানিয়া চলা ছাড়া গতি নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy