‘দেশপ্রেম’ বোঝে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমাকে, একরৈখিক হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুত্ববাদকে। ‘ওয়ান নেশন’— রাষ্ট্র ভাবনাকে। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় গোপালেরা।
‘তুম জমিন পে জুলুম লিখ দো/ আসমান পে ইনক্লাব লিখা জায়েগা’— ৩০ জানুয়ারির দিল্লি হাড়হিম করা ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল। যেন ৭২ বছর আগের রেপ্লিকা। প্রার্থনা সেরে ফেরার পথে করমচাঁদ গাঁধীর পথ আটকাল বন্দুকধারী এক যুবক। নাম নাথুরাম গডসে। পড়ে গেলেন বাপু। তাঁর শেষ বাক্য— হে রাম।
২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী মিছিলের সামনে প্রায় এক মিনিট ধরে পিস্তল হাতে হুমকি দিল ‘রামভক্ত’ এক যুবক। গুলি চলল। পিছনে সার দিয়ে দিল্লি পুলিশ। দর্শকের ভূমিকায়।
ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা হিসাবে মানা যাচ্ছে না। আজ ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যাঁদের মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে, সেই গোলওয়ালকার, সাভারকার আর যাই হোন, এঁদের দেশপ্রেমিক হিসাবে মেনে নেওয়া যায় না। আর এঁদেরই চিন্তার ফসল এই বন্দুকবাজ গোপালেরা।
আরও পড়ুন: দ্বেষের মোড়কে দেশপ্রেম চাষ
ওখানে যে ঘটনা ঘটেছে বা যিনি ঘটিয়েছেন, তিনি আমাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, তা পরিষ্কার ভাবে জানা নেই। ওখানকার স্থানীয় নেতৃত্ব যদি মনে করেন যে ওই ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেওয়া প্রয়োজন তা হলে তাঁরা দেবেন। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মত হল, এই ধরনের ঘটনা ঘটানো উচিত নয়। কারণ আন্দোলন দমন করার জন্য সরকার আছে, প্রশাসন আছে। তারা বিষয়টি দেখবে। এ ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। এটা তাদেরও ব্যর্থতা।
সুজন মুখোপাধ্যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নবদ্বীপ বিভাগীয় সম্পাদক
উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার এই উপযুক্ত সময়। বিখ্যাত দার্শনিক টপপেটা একটা বই লিখেছিলেন, যা সম্ভবত মানুষের অধিকার সংবলিত প্রথম লিখিত বই। বইটির নাম ‘রাইটস অফ মেন’। এই বইয়ের প্রাগভাষে বলেছেন— “রাষ্ট্র একটি অপ্রয়োজনীয় অমঙ্গল।” স্বাভাবিক অবস্থায় হয়তো এটা সহ্য করা যায়, কিন্তু এই নিকৃষ্ট অবস্থায় রাষ্ট্র অসহনীয়। তখন তার বিরুদ্ধে দ্রোহ করাই সঙ্গত। ভারতের বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এ কথা ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে শেষ হয়ে যাচ্ছে, পুঁজিবাদের দাপট যেখানে বিপন্ন করে তুলেছে মানবজীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ, সেখানেই জাতীয়তাবাদের ছাঁচে জন্মগ্রহণ করে ‘দেশপ্রেম’। যে ‘দেশপ্রেম’ বোঝে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমাকে, একরৈখিক হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুত্ববাদকে। ‘ওয়ান নেশন’— রাষ্ট্র ভাবনাকে। আর এখান থেকেই জন্ম নেয় গোপালেরা।
ভারতবর্ষ বহুত্ববাদের দেশ, বহুমাতৃক দেশ। এটা যাঁরা অন্তর দিয়ে ধরে রাখেন, তাঁরাই ভারতবাসী। তাঁরা ভালবাসে দেশকে, দেশের মানুষকে, জল, জমি, জঙ্গল, পাহাড়, নদীকে। দেশপ্রেমের শুরু সেখানেই।
লেখক এপিডিআর-এর রাজ্য সহ-সভাপতি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy