নরেন্দ্র মোদী ক্ষুব্ধ, জানাইয়াছেন তাঁহার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। সেই পবিত্র ক্ষোভের আগুনে সিবিএসই-র যাবতীয় দুর্নীতি পুড়িয়া যাইবে, সব ভুল সংশোধিত হইবে, ইহাই সম্ভবত মন্ত্রিমহোদয়ের একমাত্র আশা। কারণ, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় তিনি রাত্রে ঘুমাইতে পারেন নাই— এই তথ্যটি ভিন্ন গত কয়েক দিনে তাঁহার নিকট আর কোনও কথা শোনা যায় নাই। সিবিএসই-র প্রধান অনিতা করবাল-এরও দেখা মেলা ভার। শেষে কেন্দ্রীয় সচিব অনিল স্বরূপ সাংবাদিক সম্মেলন করিয়া জানাইলেন, দ্বাদশ শ্রেণির অর্থনীতি বিষয়ের পরীক্ষা হইবে ২৫ এপ্রিল। আর, দশম শ্রেণির গণিত? কর্তারা উত্তর হাতড়াইতেছেন। হয়তো জুলাই মাসে পরীক্ষা হইবে, হয়তো শুধু দিল্লি ও হরিয়ানার ছাত্রদেরই ফের পরীক্ষায় বসিতে হইবে। পদার্থবিজ্ঞানী ওয়ার্নার হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি একেবারে হাতেকলমে প্রতিষ্ঠিত হইতেছে— পুনঃপরীক্ষার বিষয়টি যেহেতু নির্দিষ্ট ভাবে জানা গিয়াছে, দিনক্ষণ জানিবার কোনও উপায় নাই। কর্তারা আশ্বাস দিয়াছেন, কোনও সমস্যা হইবে না। মার্চের পরীক্ষা জুলাইয়ে হইলেও যদি সত্যই কোনও সমস্যা না হয়, তবে পরীক্ষাটি না থাকিলেই বা ক্ষতি কী? আর, সমস্যা যদি হয়, তাহার দায় কে লইবেন? প্রকাশ জাভড়েকরের নিকট উত্তর নাই। বর্তমান ইমেল-হোয়াটসঅ্যাপের যুগে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মাত্র দুইটি রাজ্যের গণ্ডি টপকাইতে পারিবে না, এমন বিশ্বাসেই বা তাঁহারা স্থিত হইলেন কোন মন্ত্রে? উত্তর একটিই। মন্ত্রিবর জানেন, নরেন্দ্র মোদীর ক্রোধের পবিত্র অগ্নি দিল্লি-হরিয়ানাকে ঘিরিয়া গণ্ডি আঁকিয়া দিয়াছে। তাহাকে অতিক্রম করে, হোয়াটসঅ্যাপের সাধ্য কী!
অতএব, জাভড়েকর টুইট করিয়াছেন। কী ভাবে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যায়, ছাত্রদেরও তাহা ভাবিয়া বলিতে হইবে। দায়িত্ব শেষ। তিনি এই বার নিশ্চিন্তে ঘুমাইতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর অবশ্য ঘুমাইতে সময় লাগিবে। তাঁহার সাধের ‘এগ্জ্যাম ওয়রিয়র’-এ প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে একটি অধ্যায় নাই কেন, সেই চিন্তা তাঁহাকে কুরিয়া খাইবে বলিয়াই দেশবাসীর বিশ্বাস। আজ যাহারা উচ্চ মাধ্যমিক দিতেছে, ২০১৯-এ তাহাদের অনেকেই ভোটও দিবে। তাহারা ‘অচ্ছে দিন’-এর খোয়াবনামার ভুক্তভোগী নহে, ফলে দুর্জনে বলিতেছে, তাহাদের উপর প্রধানমন্ত্রীর প্রবল ভরসা ছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হইয়া যদি এতগুলি ভোট ফসকাইয়া যায়, ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব, ইউপিএ-র আমলে কোন পরীক্ষার কোন প্রশ্ন ফাঁস হইয়াছিল, সেই তল্লাশি চলিতেছে। কংগ্রেসের আমলে যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়, তবে যে নরেন্দ্র মোদীকে আর দোষ দেওয়া চলে না, এই কথাটি কে না জানে! যাঁহারা জানেন না, প্রধানমন্ত্রীর সাইবার-ভক্তরা জানাইয়া দিবেন।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর নিশ্চিন্ত নিদ্রা, অথবা প্রধানমন্ত্রীর সুগভীর উদ্বেগ, কোনওটিতেই অবশ্য কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নাই— এই কাণ্ডটি ঘটিল কেন? ভবিষ্যতে ইহার পুনরাবৃত্তি রুখিবার পন্থা কী? দায়িত্ব কাহার? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজিতে হইলে যে পথে হাঁটিতে হইবে, তাহার নাম সংস্কার। সিবিএসই নামক বোর্ডটির আমূল সংস্কার। দেশে দেড় কোটিরও বেশি ছেলেমেয়ে এই বোর্ডটির ছাত্র। তাহার উপর, হরেক কেন্দ্রীয় পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব সিবিএসই-র উপর ন্যস্ত হয়। সেই গুরুভার বহন করিতে বোর্ডটি যে প্রস্তুত নহে, তাহা আর বলিয়া দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। অপ্রস্তুত বোর্ড কাণ্ডজ্ঞানও ভুলিয়াছে। ফলে, প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষতি সীমিত করিতে যে প্রাথমিক নিয়মগুলি মানিয়া চলার কথা, দেখা যাইতেছে, বোর্ড তাহারও তোয়াক্কা করে নাই। এই সংস্কারের কথা বলিবে কে? ভোটমুখী ‘পরীক্ষা পর চর্চা’ যদি শেষ হইয়া থাকে, এবং ক্ষোভ কিঞ্চিৎ প্রশমিত হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী এই দিকে নজর দিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy